এখন এক বিএনপি নেতার সেল্টারে!
আব্দুল বাসিরঃ জুলাই – আগস্ট আন্দোলনে গুলি করে ছাত্র জনতা হত্যা করে লাশ পোড়ানো, খুনের উদ্দেশ্যে গুলি করে আহত করাসহ একাধিক মামলার আসামি আওয়ামী লীগ কর্মী এখন স্বরুপকাঠীর এক বিএনপি নেতার সেল্টারে রয়েছে বলে জানা গেছে। সোহেল শিকদার নামে উক্ত সশস্ত্র সন্ত্রাসী পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলার সারেংকাঠী গ্রামের মৃত মোবারক শিকদারের পুত্র। বিগত ০৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় ভাইদের ছত্র ছায়ায় থেকে এলাকার মানুষের উপর হামলা মিথ্যা মামলাসহ একাধিক অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার এলাকার মতিউর রহমান হাওলাদারের পুত্র জালিস মাহমুদকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে মারধর করে আহত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঐ ঘটনায় নেসারাবাদ থানায় গত ২৫.০৬.২০২৪ তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। যার এফ.আই.আর নং-১২৭৩। ঐ মামলার বাদী ভিকটিম জালিস মাহমুদ জানায় সে সাক্ষীদের নাম উল্লেখপূর্বক অস্ত্রের বিষয়টি উল্লেখ করে এজাহার দাখিল করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বড় ভাইদের তদ্বিরে নেসারাবাদ থানার তৎকালীন ওসি গোলাম সরোয়ার অস্ত্রের বিষয়টি বাদ দিয়ে মামলাটি এফ. আই. আর ভুক্ত করেন। ঐ মামলায় পুলিশ সোহেল শিকদারকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। ঐ মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে সে ঢাকায় চলে যায় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়।
আওয়ামী লীগ কর্মী হিসাবে সোহেল শিকদার ঢাকা ও তার আশেপাশে অবস্থান করে জুলাই – আগস্টে আন্দোলন দমনের নামে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের সাথে সশস্ত্র অবস্থায় কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় যে লোমহর্ষক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের সাথে সেখানে সে সশস্ত্র অংশ গ্রহন করে গুলি বর্ষন করে বলে মামলা সূত্রে জানা যায়। ঐ ঘটনায় অনেক ছাত্র জনতা হতাহত হয়। পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম ঢাকার সি এম এম আদালতে দন্ড বিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬(২) ৩৪ একটি মামলা দায়ের করেন। সি.আর. মামলা নং ৭৯৮/২০২৪ (যাত্রাবাড়ী)। উক্ত মামলায় সোহেল শিকদার ৩৩ নং আসামি বলে মামলা সূত্রে জানা যায়।
ইহাছাড়াও বিশ্ববিবেক নাড়া দেয়া ঢাকার আশুলিয়ায় গত ০৫ ও ০৬ আগস্টে ছাত্র জনতা হত্যা ও লাশ পোড়ানো ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়। তার মধ্যে একটি মামলায় উক্ত সোহেল শিকদার আসামি হয় বলে মামলা সূত্রে জানা যায়। একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬(০২) ৩৪ ধারায় ঢাকার সি জি এম আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। সি.আর মামলা নং -১২১৮/২০২৪ (আশুলিয়া) । উক্ত দুটি মামলাই পিবিআই তদন্ত করছে।
জুলাই -আগস্টের পট পরিবর্তনের পর সন্ত্রাসী সোহেল শিকদার একাধিক মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বোল পাল্টে রাতারাতি আওয়ামী লীগ থেকে নিজেকে বিএনপি বলে পরিচয় দিতে শুরু করে। স্বরুপকাঠীর ত্রি-বিভক্ত বিএনপির একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আল বেরুনী সৈকত। সোহেল শিকদার নিজেকে আল বেরুনী সৈকত গ্রুপের বিএনপির অংগ সংগঠন যুবদলের কর্মী বলে এলাকায় পরিচয় দিচ্ছে। প্রমান স্বরুপ গত ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আল বেরুনী সৈকতের ছবির নিচে নিজের ছবি জুড়ে দিয়ে ফেইসবুকে একটি পোস্ট করে। এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা যায় বিভিন্ন চায়ের দোকানের আড্ডায় ছাত্র জনতা হত্যা মামলার আসামি সোহেল শিকদার বয়ান দিয়ে বেড়াচ্ছে যে তার নেতা আল বেরুনী সৈকত সকল মামলা থেকে তাকে নিষ্কৃতি পাইয়ে দিবে।
স্বরুপকাঠী বিএনপির সদস্য সচিব আল বেরুনী সৈকত সম্পর্কে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ গ্রুপ এবং সাবেক সভাপতি ফখরুল আলম গ্রুপের একাধিক সূত্র জানায় যে, সৈকতের এলাকায় তেমন কোনো কর্মী নাই। তাই তিনি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে দল গোছানোর চেষ্টা করছেন। খুন,ধর্ষন, মাদক কারবারীরা তার দলে ভিড়লে আশ্চার্য হওয়ার কিছু নাই। এব্যাপারে আব্দুল্লাহ আল বেরুনী সৈকতকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি দীর্ঘদিন যাবত সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছি কোনো আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের সাথে আমার সখ্যতা নেই। দীর্ঘ সতের বছর যাবত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে যুদ্ধ করে এখনো দলকে আঁকড়ে ধরে আছি। আওয়ামীলীগের কিছু কর্মী আমার ছবি ব্যবহার করে পোষ্টার ছাপিয়েছে তা আমার জানা ছিল না তবে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা ভবিষ্যতে করতে পারবেনা। রাজনীতিতে আমার প্রতিপক্ষ আছে।তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।