(অনুসন্ধানী প্রতিবেদন- ০১)
কে.এ.সাদাত : বিশ্ব বিবেক নাড়া দেয়া ঢাকার আশুলিয়ায় লোমহর্ষক ছাত্র জনতা হতাহত করা ও লাশ পোড়ানো মামলার আসামি নিশিকান্ত বাড়ৈ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে অনেক অজানা তথ্য। দানবীয় আওয়ামী সরকার বিরোধী আন্দোলনে গত ০৫ জুলাই ২০২৪ তারিখে আশুলিয়ায় যে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয় সে বিষয়ে কয়েকটি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে একটিতে নিশিকান্ত বাড়ৈ এর নাম আসামির তালিকায় রয়েছে মর্মে মামলা সূত্রে জানা গেছে। ঐ ঘটনায় গুলিতে আহত গার্মেন্টস কর্মী মোঃ জাফের আলী সরদার গত ০১.১০.২০২৪ তারিখে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। সি.আর.মামলা নং- ১৩১৬/২৪। দন্ড বিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪৩৫/২০১/৪২৭/৫০৬ (২)/৩৪ ধারায় দায়েরকৃত উক্ত মামলায় মোট ৮৫ জনকে আসামি করা হয়। পিবিআইতে তদন্তনাধীন এই মামলায় নিশিকান্ত বাড়ৈ ৪৯ নাম্বর আসামি।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ০৫.০৮.২০২৪ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০:৩০ ঘটিকায় স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের একতরফা দাবিতে আশুলিয়া এলাকায় ছাত্র জনতা শ্রমীকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ আশুলিয়া এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহায়তায় তাদের উপর হামলা চালিয়ে আন্দোলন কারীদের অনেককে হতাহত করে। এর প্রতিবাদে আন্দোলন কারীরা আশুলিয়া থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করিলে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগ ও তাদের অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের উপর গুলি বর্ষন করে। ইহাতে শতাধিক আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা ও শ্রমিক হতাহত হয়। তখন নিহত ছাত্র জনতার লাশ পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এই লোমহর্ষক ঘটনার চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা বিশ্ববিবেক নাড়িয়ে দেয়।
মামলা সূত্রে আরো জানা যায় ঐ ঘটনায় মামলার বাদী ভিকটিম মোঃ জাফের আলী সরদার সহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম গার্মেন্টস কর্মী জাফের আলী ঢাকা সিএমএইচ এ দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে কয়েকবার আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে উল্লেখিত তারিখে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। ভিকটিম এ প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশ আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যখন ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষন করে তখন আসামী নিশিকান্ত এর উপস্থিতি দৃশ্যমান ছিল।
মামলার আরজিতে উল্লেখিত অন্যান্য আসামিদের ন্যায় অত্র মামলার ৪৯ নং আসামি নিশিকান্ত বাড়ৈ সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেড়িয়ে আসছে অনেক অজানা তথ্য। প্রাথমিক তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় উক্ত নিশিকান্তের বাড়ি আওয়ামী লীগ তথা পলাতক সেখ হাসিনার ঘাটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রাম এলাকায়। সে বাংলা হোপ নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বলে জানা যায়। ইহাছাড়াও সে আলোচিত-সমালোচিত এম এল এম কোম্পানি তিয়ানশি এর একজন নেটওয়ার্কিং অর্গানাইজার বলে তথ্য সূত্রে জানা যায়। নিজেকে তিনি গ্লোবাল নিউজ ২৪ এর একজন রিপোর্টার বলেও পরিচয় দেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। সু -চতুর ঐ নিশিকান্ত বাড়ৈ এর বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলায় হওয়ায় এক সময়ের ক্ষমতাধর দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে তার ছিল দহরমমহরম সম্পর্ক। তার হুমকি ধমকি ও দাপটে অনেকেই ছিল ভীতসন্ত্রস্ত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায় তিয়ানশি নামে ঐ এমএলএম কোম্পানির অর্গানাইজার হিসেবে তার রয়েছে বেকার ছাত্র যুবকদের সাথে সম্পর্ক। ২০১২৪ এর জুলাই- আগস্টের আন্দোলন দমনের নামে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে পুলিশের সাথে ছাত্র জনতা খুনের নেশায় মেতে উঠে। ঐ ভাড়াটিয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের লিডার হিসাবে নিশিকান্তের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা সে বিষয়েও তথ্য অনুসন্ধানে আমাদের তথ্য অনুসন্ধানী টিম মাঠে রয়েছে। গনহত্যা মামলার আসামী হওয়ার বিষয়ে নিশিকান্ত বাড়ৈ এর মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। সে কোনো মামলার সাথে জড়িত নয় বলে এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান। (নিশিকান্তের বিভিন্ন অপকর্মের তথ্য থাকছে আমাদের আগামী প্রতিবেদনে।)
