ইউপি নির্বাচনের হাওয়া (০২) সমূদয়কাঠী ইউনিয়নে গণজরীপে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম সাইদ

কে.এ. সাদাত : আগামী ইউপি নির্বাচনে বিজয়ের বিষয়ে গণজরীপে এগিয়ে রয়েছেন সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব নাজমুল ইসলাম সাইদ। পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলার দক্ষিণেই ৮ নং সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের অবস্থান। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে নাজমুল ইসলাম সাইদ ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই ইউনিয়নে হিন্দু এবং মুসলিম ভোটার সংখ্যা প্রায় সমান সমান। ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলের নিকট সাইদ চেয়ারম্যানের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। যুবক শ্রেনীর নিকটও সাইদ চেয়ারম্যান খুবই জনপ্রিয়। এখনো তিনি এলাকায় এক নামে সাইদ চেয়ারম্যান হিসেবেই পরিচিত। তার এই জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ২০০৩ সালের নির্বাচনে পরাজিত শক্তি ও এলাকার একটি কুচক্রী মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১/১১ এর সেনা সমর্থিত সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে ঐ কুচক্রী মহলটি মিথ্যা মামলা দায়ের করলে তাকে জেল হাজতে যেতে হয়। দীর্ঘদিন কারাবরণ করে সাধারণ জনগণের নিকট তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব থেকেই তিনি এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে হাত দেন। গরীব দুঃখী মানুষকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে থাকেন। নিয়মিত তিনি এলাকার মানুষের সাথে গন সংযোগ অব্যাহত রেখে চলছেন।

এত জনপ্রিয়তা ও সুসংগঠিত থাকা সত্বেও বিগত ২০১০ এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনে সাবেক চেয়ারম্যান সবুর তালুকদারের কাছে পরাজিত হওয়ার কারণ বর্ননা করতে গিয়ে নাজমুল ইসলাম সাইদ বলেন, সবুর তালুকদার ছিলেন বিএনপি ঘরনার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হয়েও আমার নিকট পরাজয় বরন করেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সবুর তালুকদার রং বদল করে আওয়ামী লীগ নেতা বনে যান। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতাদের ম্যানেজ করে দলীয় মনোনয়ন নেন তিনি। ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট আর প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করার মাধ্যমেই সবুর তালুকদার আমার বিজয় ছিনিয়ে নেয়। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশের কসাই হিসাবে খ্যাত গুম, খুন ও বিভিন্ন অপরাধের মাষ্টার মাইন্ড কারাবন্দী মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের সাথে তাঁর রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের মাধ্যমেই সবুর তালুকদার প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমার কর্মী সমর্থকদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিল। জিয়াউল আহসানের নির্দেশেই ভোট কেন্দ্র দখলে প্রশাসন মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে নাজমুল ইসলাম সাইদ জানান। তিনি আরও জানান বিগত ১/১১ এর সময় মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করতেও সবুর তালুকদার জিয়াউল আহসানের সহযোগিতা নিয়েছে।

আগামী ইউপি নির্বাচনে সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের নির্বাচন কেমন হতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গীকে তথ্য অনুসন্ধান করা হয়। এ বিষয়ে সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের বিভিন্ন দল, মত, ধর্ম, বয়স ও পেশার জনসাধারণের সাথে আলাপ চারিতায় বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রথমতঃ যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে ৫ জনের অধিক প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী মাঠে অবতীর্ণ হবে। তারমধ্যে বেশির ভাগই হবে বিএনপি দলীয়। বর্তমান ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীর চেহারা মাঠে না দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামী ঘরনার লোকজন জানে বিগত বছর গুলোতে তারা যে আচরণ মানুষের সাথে করেছে তাতে সাধারণ জনগণের দরজায় ভোট ভিক্ষা করতে যাওয়া তাদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকার কারনে তারাও দলীয়ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে তাদের ভোট বিভিন্ন দিকে বিভক্ত হয়ে যাবে। এদিকে নাজমুল ইসলাম সাইদ এর একটি ব্যাক্তিগত ভোট ব্যাংক রয়েছে। যাহা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জন্য আতংকের বিষয়। এছাড়াও হিন্দু কমিউনিটির ভোটের সংখ্যাও সমান। উপরন্তু আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোনো প্রার্থী যদি নির্বাচনী মাঠে না থাকে তাহলে তাদের দলীয় ভোট বিএনপি দলীয় প্রার্থীকে দিবে না এই ইংগিতও পাওয়া গেছে তৃনমুল ভোটারদের নিকট থেকে। এছাড়া যুব ভোটারদের একটি বৃহৎ অংশ নাজমুল ইসলাম সাইদ এর ভক্ত। ইতিমধ্যে তাদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে সাইদ চেয়ারম্যান।

দ্বিতীয়তঃ যদি সংসদ নির্বাচনের পর দলীয় সরকারের অধীনে ইউ পি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেক্ষেত্রেও বিএনপির জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতার সমর্থনে ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগের দেখানো অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তাদের আওয়ামী দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র দাখিলও করতে দিবে না বিএনপি। যদিও দাখিল করতে পারে নির্বাচনী মাঠে তারা নামতেও পারবে না। কারণ সে পথ তারা দেখিয়ে গেছে। সুতরাং বিএনপির রোষানল থেকে বাঁচতে আওয়ামী ও হিন্দু ভোটের একটা বিরাট অংশ নাজমুল ইসলাম সাইদ এর পক্ষে যাবে। বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের আদিক্ষ, আওয়ামী লীগের ছন্নছাড়া অবস্থা এবং রিজার্ভ ভোটের উপর নির্ভর করে নাজমুল ইসলাম সাইদ বিজয়ী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হবে বলে ইউনিয়নবাসীর বক্তব্যে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে নাজমুল ইসলাম সাইদ বলেন, জনগণ বিগত দিনে যা দেখেছে তার আলোকেই তাদের অভিমত ব্যাক্ত করেছে। বিগত সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেভাবে কালো টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে তাতে সুষ্ঠু ধারার নির্বাচন ব্যাবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এর প্রভাব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও পড়বে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।