এম.এম.তোহাঃ বিতর্ক আর সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না পিরোজপুরের নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলা শাখা বিএনপি’র আহ্বায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদের। সম্প্রতি উক্ত উপজেলার একটি মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল তারই নির্দেশে বন্ধ করতে বাধ্য হয় মাহফিল আয়োজন কমিটি। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বেকায়দায় পড়ে যায় অহিদ। বিএনপি ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায় , আওয়ামী লীগের দোসরদের সাথে যোগসাজশে উক্ত মাহফিল বন্ধ করার জন্য স্হানীয় বিএনপি’র রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে সে। এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপি’র একটি সূত্র জানায় , অহিদের আওমী প্রীতি নতুন কোনো ঘটনা নয়।
নেছারাবাদ বিএনপি’র একাধিক নেতা কর্মী জানায় ৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার রাজনৈতিক চরিত্রে আমূল পরিবর্তন হতে থাকে। ঐ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তারমধ্যে দু’জনই ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত, একজন ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সমর্থিত। মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ একমাত্র বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হওয়ায় ঐ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। তখন এলাকাবাসী মনে করেছিল আপাতত স্হানীয় আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অহিদ হবে তাদের রক্ষা কবজ। কিন্তু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিজের কর্মী সমর্থকদের কথা না ভেবে ব্যাক্তি স্বার্থে আওয়ামী ঘরানার গুনগানে মত্ত হতে থাকেন। স্বঘোষিত সন্ত্রাসী ও দূর্নীতিবাজ পিরোজপুর ০২ আসনের সাবেক সাংসদ বর্তমানে পলাতক এ.কে.এম.এ. আউয়ালের আস্হাভাজনে পরিনত হন তিনি। একই সাথে একই স্টেজে তাদের ওঠা বসা বক্তৃতা প্রদান সহ তাদের মধ্যে সখ্যতা দেখে মনে হত ওহিদ আওয়ামী লীগের কোনো নেতা।
বিএনপি নামধারী ঐ নেতার আওয়ামী লীগ আয়োজিত ১৫ আগস্টের শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার প্রমান রয়েছে। ঐ অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। এছাড়াও নেছারাবাদ উপজেলায় আয়োজিত শেখ হাসিনার উন্নয় মেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ তার বক্তব্যে শেখ হাসিনাকে সফল রাষ্ট্র নায়ক হিসাবে অভিহিত করেন। বিএনপি নামধারী এই নেতার আওয়ামী দালালীর এখানেই শেষ নয়। উপজেলার দৈহারী ইউনিয়নের কৃষক লীগের সন্মেলনে সাবেক সাংসদ এ.কে.এম.এ আউয়ালের সাথে সফরসঙ্গী হয়ে আউয়াল ও শেখ হাসিনার গুনকীর্তন করারও তথ্য চিত্র রয়েছে। স্বরুপকাঠী সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রী-বার্ষিক সন্মেলনে উপস্থিত হয়ে নেসারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহিদুল ইসলাম মুহিত কে অহিদ কর্তৃক ব্যাচ পড়িয়ে দেয়ার চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। জনশ্রুতি আছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর ০২ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে গোপনে সমর্থন যুগিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে জনৈক বিএনপি নেতা বলেন, নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য অহিদের পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব। কারণ ঐ নির্বাচনে শতকোটি টাকা খরচ করেছে মহারাজ। তারই একটি অংশ অহিদের পকেটে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেসারাবাদ উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ ধরেই নিয়েছিলেন শেখ হাসিনার সরকার চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে। তাই তিনি বিএনপিতে থেকেও আওয়ামী লীগের দালালী করে এ পর্যন্ত গা বাঁচিয়ে বহাল তবিয়তে আছে। তিনি আওয়ামী লীগের একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে নেপথ্যে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছে। প্রতিদানস্বরুপ সেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। কারাগারে যেতে হয়নি কখনো। এলাকা ছেড়ে পালিয়েও থাকতে হয়নি তাকে । লোক দেখানো কর্ম সূচীতে অংশ গ্রহণ করে কখনো হামলারও শিকার হতে হয়নি। যেখানে স্বরুপকাঠীর উপজেলা পর্যায় থেকে তৃণমূল নেতা কর্মীরা একাধিক মামলা হামলার শিকার হয়েছে। মামলায় কারাবরনকারী অন্য এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রীতির কারনে তাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। যত জেল জুলুম গেছে আমাদের উপর থেকে। তিনি আরও বলেন, কৃতজ্ঞতাস্বরুপ অহিদ সাহেব বিএনপি নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগারদের পূনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন। ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী ও আওয়ামী পন্থী জনপ্রতিনিধিরা অহিদের শেল্টারে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হলেও অহিদের হুঁশিয়ারীর কারণে প্রশাসন আওয়ামী লীগের দাগী আসামিদের গ্ৰেফতার করতে সাহস পাচ্ছে না।এখন প্রশ্ন হলো অহিদ আসলে কার আওয়ামী লীগ না বিএনপি’র?
( অহিদের আওয়ামী পূনর্বাসন নিয়ে বিস্তারিত জানুন পরের প্রতিবেদনে)