নবজাগরণ রিপোর্ট:
পদকের জন্য মনোনীতরা হলেন- শিল্পকলা (চলচ্চিত্র) আজিজুর রহমান (মরণোত্তর), শিল্পকলা (সংগীত) উস্তাদ নীরোদ বরণ বড়ুয়া (মরণোত্তর), শিল্পকলা (সংগীত) ফেরদৌস আরা, শিল্পকলা (আলোকচিত্র) নাসির আলী মামুন, শিল্পকলা (চিত্রকলা) রোকেয়া সুলতানা, সাংবাদিকতায় মাহফুজ উল্লাহ (মরণোত্তর), সাংবাদিকতা ও মানবাধিকার নির্যাতিত সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় ড. শহীদুল আলম, শিক্ষায় ড. নিয়াজ জামান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মেহেদী হাসান খান, সমাজসেবায় মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্যে কবি হেলাল হাফিজ (মরণোত্তর), শহীদুল জহির (মো. শহীদুল হক) (মরণোত্তর) এবং গবেষণায় মঈদুল হাসান। এ ছাড়া ক্রীড়ায় এবার একুশে পদক পাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল।
একুশে পদকের জন্য মনোনীত হওয়া দেশবরেণ্য ও খ্যাতিমান মজলুম সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করছেন। জেলজুলুম, নির্যাতনসহ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
দেশের প্রতিষ্ঠিত একজন করপোরেট বস ও বেসরকারি উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান ওয়ান-ইলেভেন সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম কলম ধরেন ২০০৮ সালে। দৈনিক নয়া দিগন্তে তিনি তখন কলাম লেখা শুরু করেন। একই বছর তিনি আমার দেশ পত্রিকা কিনে নেন এবং এর সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। সম্পাদনার পাশাপাশি তিনি প্রতি বুধবার আমার দেশ-এ কলাম লেখা অব্যাহত রেখেছেন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর থেকে মাহমুদুর রহমান আমার দেশ-এর মাধ্যমে সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য একজন শক্তিশালী সমালোচক হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি সরকারের দুর্নীতি ও গুমের খুনের বিরুদ্ধে তার জোরালো ভূমিকা অব্যাহত রাখেন। ফলে সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি, ২০১০ সালের ১ জুন প্রথম দফায় তাকে জেলে পাঠান ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। বন্ধ করে দেন তার সম্পাদনায় প্রকাশিত আমার দেশ। আদালতের মাধ্যমে ৪৫ দিনের মাথায় আমার দেশ মুক্তি পেলেও মাহমুদুর রহমানের মুক্তি মেলে প্রায় ১০ মাস পর। তার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা দেওয়া হয়। এর পরও মাহমুদুর রহমান তার আদর্শ থেকে একচুলও নড়েননি। স্বাধীন গণমাধ্যম ও মানবাধিকারের পক্ষে তার লড়াই অব্যাহত রাখেন আমার দেশ-এর মাধ্যমে।
মুক্ত গণমাধ্যম ও ফ্যাসিবাদী হাসিনার শাসন এবং স্বাধীনতাবিরোধী শাহবাগী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় মাহমুদুর রহমান কারারুদ্ধ হন। আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয় আমার দেশ। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর কারাগারে থেকে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্তি পেলেও তার বিরুদ্ধে ২১টি মামলা দিয়ে তাকে হেনস্তার পথ বেছে নেওয়া হয়। এমনই এক মামলায় কুষ্টিয়ার আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার ওপর পৈশাচিক হামলা চালিয়ে হত্যার ঘৃণ্য চেষ্টা চালায় আওয়ামী পেটোয়া বাহিনী। সে যাত্রায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও দেশ ছেড়ে তাকে নির্বাসনে যেতে হয়। মালয়েশিয়ায় নির্বাসনে থাকা অবস্থায় তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তাকে তুরস্কে চলে যেতে হয়। নির্বাসনে থাকাবস্থায় লন্ডন থেকে চালু আমার দেশ অনলাইন ও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লড়াই চালিয়ে যান।
চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের পর তিনি সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে দেশে ফেরেন। হাসিনার দেওয়া ভুয়া মামলায় পাঁচদিন জেল খেটে বেরিয়ে আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের উদ্যোগ নেন। প্রায় এক যুগ পর গত ২২ ডিসেম্বর থেকে মাহমুদুর রহমানের সম্পাদনায় আমার দেশ পুনরায় বাজারে এসে একের পর এক আলোচিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে যথারীতি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বুধবারের সাপ্তাহিক কলাম আগের মতোই দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে।
রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতিসহ সমসাময়িক বিবিধ বিষয়ে মাহমুদুর রহমানের লেখা এক ডজনেরও বেশি পাঠকনন্দিত বই এবং অসংখ্য প্রবন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে দ্য পলিটিক্যাল হিস্ট্রি অব মুসলিম বেঙ্গল : অ্যান আনফিনিশড বেটল অব ফেইথ, নবরূপে বাকশাল, জেল থেকে জেলে, ১/১১ থেকে ডিজিটাল, কার মান কখন যায়, মুসলমানের মানবাধিকার থাকতে নেই, জয় আসলে ভারতের, জাতির পিতা ও অন্যান্য, গুমরাজ্যে প্রত্যাবর্তন, ফুলবাড়ীর রাজনীতি, দুর্নীতিমুক্ত দেশ : সমাজচিন্তকদের ভাবনা অন্যতম। এবারের বইমেলায়ও তার চারটি নতুন বই আসছে। এর মধ্যে দুটি বই আজই মেলায় আসবে। মাহমুদুর রহমান বাংলা একাডেমিরও সদস্য।
খ্যাতিমান এ সাংবাদিকের জন্ম ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই। পুরান ঢাকায় বেড়ে ওঠা। তিনি ১৯৭৭ সালে বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন এবং ১৯৮৬ সালে জাপান থেকে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৮৮ সালে এমবিএ করেন। পরে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি নেন।
টেক্সটাইল, সিরামিক ও কেমিক্যাল সেক্টরে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তার দক্ষতা অপরিসীম। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম বোন চায়না প্লান্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিনিই বিশ্বে টেকনোলজিক্যাল ‘ব্রেক থ্রো’ করেন।
বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্ব সফলভাবে পালন শেষে তিনি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আর্টিসান সিরামিক নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এরই মধ্যে ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশের ক্রান্তিলগ্নে দৈনিক নয়া দিগন্তে লেখালেখি শুরু করেন; পাশাপাশি ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ (এনআইজি) গড়ে তোলেন। জরুরি সরকারের সময় আমার দেশ আর্থিক সংকট ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে সাংবাদিক-কর্মচারীদের অনুরোধে ২০০৮ সালে এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই থেকে মাহমুদুর রহমান আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১০ সালে প্রথমবার এবং ২০১৩ সালে দ্বিতীয় দফায় অন্যায়ভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠায় শেখ হাসিনা সরকার। জুলাই বিপ্লবের পর পত্রিকাটি নতুন উদ্যমে চালুর পর থেকে তিনি সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করছেন।