স্বরুপকাঠীতে বিএনপি নিধনে নেমেছে বহুরূপী নাসির ফকির

এম.এম.তোহা, কে.এ.সাদাতঃ পিরোজপুরের নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলায় এখন একটি আতংকের নাম ফকির নাসির উদ্দীন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক রেখে নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সে বহুরুপী নাসির ফকির নামে পরিচিত। এছাড়াও মাজার ব্যাবসা করে ভন্ড পীর হিসাবেও তার রয়েছে কুখ্যাতি। এক সময়কার বিএনপির প্রভাবশালী এক এমপির কর্মচারী এখন স্হানীয় বিএনপি নিধনে নেমেছেন। তারই প্ররোচনায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছা সেবক দলের একাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় তার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে স্বরুপকাঠীর সর্ব মহলে। সূত্র মতে গত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ আওয়ামী লীগ কর্মী বিশাল গ্রামের বিজন রায় নেসারাবাদ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। চাঁদা বাজির অভিযোগে দায়েরকৃত উক্ত মামলায় আসামি করা হয় মোঃ আরিফুল ইসলাম সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা পূর্ব ছাত্রদল, মোঃ সোহেল মোল্লা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পিরোজপুর জেলা ছাত্রদল এবং মোঃ ছাকিল শিকদার সদস্য নেছারাবাদ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। তারা সকলেই নেসারাবাদ উপজেলার পাটিকেলবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। আওয়ামী লীগ কর্মীকে ইন্ধন দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে নাসির ফকির এর অতীত এবং বর্তমানের অনেক অপকর্মের তথ্য।

১৯৯১ সালে বিএনপি বাংলাদেশের রাষ্ট্রেীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তখন স্বরুপকাঠী- বানাড়ীপারা সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ শহীদুল হক জামাল। এই প্রভাবশালী সাংসদের সকল অপকর্মের দোসর চার খলিফার এক খলিফা হিসাবে পরিচিত ছিলেন নাসির ফকির। চাটুকার নাসির ফকির তখন সাংসদ সৈয়দ শহীদুল হক জামালের ব্যাক্তিগত সহকারীর দায়িত্ব পালন করেছেন। জামাল এমপি তখন একাধারে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। এই সুবাদে ধূর্ত নাসির ফকির বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে একটি চাকরি বাগিয়ে নেয়। পুনঃরায় ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ শহীদুল হক জামাল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঐ সময়েও নাসির ফকির তার ব্যাক্তিগত ছিল। জামাল এমপির প্রভাব খাটিয়ে তদ্বির বানিজ্য, চাকরির দালালী,বদলী বানিজ্য, রেড ক্রিসেন্টের মালামাল আত্মসাৎ করা সহ বিভিন্ন দূর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর অর্থ ও বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যান নাসির ফকির। স্হানীয় বিএনপির কোনো পদ পদবীতে না থেকেও রাজনৈতিক মাঠে সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে সে।
নাসির ফকিরের নিজ গ্রাম নেসারাবাদ উপজেলার পাটিকেলবাড়ীতে তিনি এক প্রকার রাম রাজত্ব কায়েম করেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় সে প্রচন্ড রকমের প্রতিশোধ পরায়ন লোক। কেউ তার মতের বিরুদ্ধে গেলে তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে গুয়ারেখা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস শিকদারকে মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে থাকতে হয়েছে। এলাকাবাসী আরো জানায় এলাকায় তার তেমন লোকবল নাই। তার নিজ বাড়ি, প্রতিবেশী, এবং নিজ বংশের লোকদের সাথেও নেই তার ভালো সম্পর্ক। তাই কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সে পুলিশ ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাবহার করেছে এবং এখনও করতেছে।

সে পাটিকেলবাড়ী গ্রামে আদুশাহ দরগা নামে এক কথিত পীরের মাজারের তত্ত্বাবধায়ক পরিচয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। দরগা শরীফের উন্নয়নের নামে সে রেডক্রিসেন্ট ও সরকারী অনুদান এনে নিজ পকেটে পুরেছে বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। মাজার উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত ঢেউটিন আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে বিগত ১/১১ এর সরকারের আমলে তার প্রতিষ্ঠিত মাজার ও তার বাড়ীতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের এক যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। এছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার করে করফা বাজার সংলগ্ন অন্যের জমি দখল করে পুলিশ ফাঁড়ি তৈরী করতে গিয়ে ভুমি মালিক ও এলাকাবাসীর তোপের মূখে পিছু হঠতে বাধ্য হয় নাসির ফকির। সরকারের লাখ লাখ টাকা গচ্চা দিয়ে অবশেষে অন্যত্র পুলিশ ফাঁড়ি স্হাপন করতে বাধ্য হয়।
বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ শহীদুল হক জামাল বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়ায় নাসির ফকিরের কেরামতি থমকে যায়। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নাসির ফকির তার কর্ম কান্ড গুছিয়ে রেডক্রিসেন্টের চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নেন। পিঠ বাঁচাতে বহুরূপী ভুমিকায় অবতীর্ন হয় সে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর ০২ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ মোঃ শাহ আলম এর শেল্টারে থেকে আওয়ামী লীগ সাজার চেষ্টা করে। সাথে সাথে পিরোজপুর ০১ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একে.এম.এ.আউয়ালের সান্নিধ্য অর্জন করে বহাল তবিয়তে এলাকায় পূর্বের ন্যায় আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বহুরুপী নাসির ফকির জাকের পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যার্থ হয়। রুপ পাল্টিয়ে ফকির নাসির উদ্দীন পিরোজপুর ০১ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী শ. ম.রেজাউল করিমের কাছের লোক বনে যান। প্রকাশ্য ও গোপনে স্বরুপকাঠী বিএনপির ক্ষতিসাধনের মিশনে নামেন তিনি। গত বছরের ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর হঠাৎ বিএনপি হয়ে যাওয়া ফকির নাসির উদ্দীন এখন আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমেছে বলে সচেতন মহলের ধারণা।
( নাসির ফকির সম্পর্কে আরো জানতে গনজাগরণের পাতায়)।