স্বরুপকাঠীর বহুরুপী নাসির ফকির বিএনপি নিধনে নেমে এখন নিজেই এলাকা ছাড়া

এম.এম.তোহাঃ বিএনপির জন্য ক্ষতিকর প্রাণী হিসেবে খ্যাত পিরোজপুরের নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলার পাটিকেলবাড়ী গ্রামের ফকির নাসির উদ্দীন। যিনি এলাকায় বহুরুপী নাসির ফকির নামে পরিচিত। পাটিকেলবাড়ী ব্যাসকাঠী কেন্দ্রীক নোংরা রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হিসাবে তার রয়েছে কুখ্যাতি। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে নিজের কাছের লোকজনকে বিপদে ফেলতেও তার বিবেকে বাঁধে নি কখনো। এলাকায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে শিক্ষা প্রসারে অবদান রাখা এ ব্যাক্তি তার হিংসা, অহংকার আর তার বিপক্ষে কথা বলা লোকদের সায়েস্তা করতে গিয়ে এলাকায় ঘৃনীত ব্যাক্তিতে পরিনত হয়েছে। নিজ ইউনিয়ন গুয়ারেখার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস শিকদারকেও জেল হাজতে যেতে হয়েছিল তার রোষানলে পড়ে। তিনি তার বিরোধীদের দমনে সবসময়ই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাবহার করেছেন। অতি সম্প্রতি আওয়ামী লীগের লোকদের ইন্ধন দিয়ে এলাকার ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক নেতা কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তার এহেন ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এলাকার মানুষ। ভুক্তভোগীরা জানান, তার একক আধিপত্য বিস্তারের বিরুদ্ধে কথা বলায় স্হানীয় কয়েকজন চামচাকে দিয়ে মিথ্যা মামলাটি সাজায়। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নাসির ফকিরের কারসাজি ফাঁস হয়ে জাওয়ায় তিনি জনরোষের মুখে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান।

নাসির ফকিরের অতীত এবং বর্তমান কর্ম কান্ডের অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক সময়ের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিএনপির প্রভাবশালী নেতা একাধিকবার নির্বাচিত সাংসদ, জাতীয় সংসদের হুইপ এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ শহীদুল হক জামালের ব্যাক্তিগত সহকারী ছিলেন নাসির ফকির। এ সুবাদে ধূর্ত নাসির ফকির বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে একটি চাকরি বাগিয়ে নেয়। তারপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। একটি সূত্র জানায় শহীদুল হক জামালের প্রভাব খাটিয়ে নাসির ফকির হলি ফেমিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়োগ বানিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আয় করে। হাসপাতালের আয়া, ক্লিনার, মালি, দারোয়ান, ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে সর্বত্রই ছিল তার নিয়োগ বানিজ্যের আওতায়। একটি চাকরির প্রয়োজনে দরিদ্র চাকরি প্রত্যাশিরা গোপনে তার আর্থিক চাহিদা পুরন করেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ হাসপাতালের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী জানান।

তথ্য অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১৯৯১ সালে বিএনপি জোট সরকার গঠন করলে নাসির ফকির সংসদ সদস্য শহিদুল হক জামালের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে স্বরুপকাঠী – বানারীপাড়া উপজেলার সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করে। রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা না হয়েও স্হানীয় বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। ইহাতে স্হানীয় রাজনীতিতে তার সাথে এক ধরনের ঠান্ডা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শহিদুল হক জামালের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ঐ সময়ে মাজার ব্যাবসায়ী নাসির ফকির রেড ক্রিসেন্টের মালামাল নয় ছয় করে পাটিকেলবাড়ীর আদুশাহ দরগা উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে অর্থ আত্মসাৎ করে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়।
১৯৯৬ সলে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং নাসির ফকিরের ক্ষমতার উৎস শহিদুল হক জামাল সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হওয়ায় নিজ এলাকায় বিচরণ তার জন্য এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। তখন আওয়ামী সরকারের দালালী, মাজার ব্যাবসা এবং রেড ক্রিসেন্টের চাকরি নিয়েই তার কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে পুনঃরায় শহিদুল হক জামাল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বিএনপি জামায়াত সরকার গঠন করে। শহিদুল হক জামাল সংসদের হুইপ মনোনীত হলে নাসির ফকিরের দাপট বহু গুণে বেড়ে যায়। উপজেলা নেতৃবৃন্দ সক্রীয় থাকায় সে তার নিজ এলাকা পাটিকেলবাড়ী – ব্যাসকাঠী এলাকায় উন্নয়নে হাত দেন। সম্পূর্ণ নিজ নিয়ন্ত্রণেই ক্ষমতার অপব্যবহার করলেও কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি। কারন থানা পুলিশকে ব্যাবহার করে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করে এক ধরনের রাম রাজত্ব কায়েম করে। এলাকার শিক্ষিত, সুশীল সমাজ এবং বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে গুয়ারেখা ইউনিয়নে তার মনোনীত প্রার্থী ছাড়া অন্য সকলকেই জেল জুলুম ও পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়। নাসির ফকির তখন গুয়ারেখা ইউনিয়নে এক মুর্তি মান আতংকে পরিনত হয়।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সেনা সমর্থিত সরকারের চামচামি করতে গিয়ে সৈয়দ শহীদুল হক জামাল বিএনপির মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি মোরগ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়। নাসির ফকির তখন শহিদুল হক জামালের সাথে মোরগ মার্কার নির্বাচন করে বহুরুপী আচরণের সূচনা করে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বোল পাল্টে আওয়ামী লীগের এম পি, মন্ত্রীদের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিয়ে তাদের গুণগানে মত্ত হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে তার স্ব- চিত্র তথ্যও রয়েছে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে জাকের পার্টির মনোনয়ন চেয়েও ব্যার্থ হয়। ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সে বোল পাল্টে আবার বিএনপি বনে যান। ইতিমধ্যে পিরোজপুর ০২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে তার পক্ষে ফেইসবুকে স্টাটাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে তিনি কোন দলের হয়ে নির্বাচন করবেন তা খোলাসা করে বলা হয়নি।
এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। তার ভাব এবং আচরণে মনে হচ্ছে তিনি বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে গেছেন।
( পল্টিবাজ নাসির ফকিরের দূর্নীতির সকল তথ্য জানতে চোখ রাখুন আগামী সংখ্যায়)।