দরপত্রে ব্যাপক দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্য
মোস্তাফিজুর রহমান : যুব উন্নয়নের রেজ্জাক – আনিসুলের দুর্নীতির একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি অধিদপ্তর প্রশাসন। অধিদপ্তরের সেন্ডিকেটসহ কিছু ভুঁইফোড় সাংবাদিক এর যোগসাজশে বেপরোয়াভাবে অনৈতিক কাজ করে পার পেয়ে যাচ্ছে এ চক্রটি।এটি যুব উন্নয়নের ব্যাপক অনিয়ম ঘুষবাণিজ্যেসহ দুর্নীতির অভিযোগের রিপোর্ট। যা প্রথম সারির একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি অপরাধী কর্মকর্তাদের। তারা গোটা যুব উন্নয়নের মান ক্ষুণ্ন করছেন। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরেও যুব উন্নয়নে বহাল রয়েছে বিগত সরকারের বিতর্কিত ঠিকাদার নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেট। দরপত্রে চলছে সিমাহীন নৈরাজ্য। আগের মতোই চলছে ঘুষের বিনিময়ে ঠিকাদারি কাজের ভাগাভাগি। এসব বিষয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোনঠাসা ঠিকাদার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুব উন্নয়নের একাধিক কর্মচারী বলেছেন এরা অচিরেই অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে এজন্য অপরাধ হিমাগারে থাকার শঙ্কা।যুব উন্নয়নের ঠিকাদার এর ভেতর শাহাদত হোসেন উজ্জ্বলই এসব বিষয় প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি যুব উন্নয়নে টেন্ডার বানিজ্য, দূর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের বিষয় গণমাধ্যমকে বলেন, আমি মা ইন্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের একজন সত্ত্বাধিকারী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার। বিগত সময়গুলোতে আমি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বেশকিছু দরপত্রের সাথে জড়িত ছিলাম। এ সময়গুলোতে আমাকে কাজ দেয়ার কথা বলে ঘুরাতে থাকে সহকারী প্রকৌশলী জনাব আনিসুল ইসলাম। ওই সময়ে যে দরপত্র আহ্বান করা হতো তখনই আমাকে বলতো আপনাকে কাজ দেয়া হবে আপনি অর্থ পরিচাল আব্দুল রেজ্জাক স্যারের সাথে কথা বলেন।
আবার রেজ্জাক এর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি আনিস এর কাছে পঠাতেন। এভাবে ঠিকাদার দের বোকা বানিয়ে নিজেদের অপকর্ম চালাতেন। তবে এ কাজে সহযোগিতা করতেন আরেকটি শক্তিশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটটি রেজ্জাক ও আনিসুল এর ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। এ সিন্ডিকেটে রয়েছে তানিমা এন্টারপ্রাইজ, সনেক্স এন্টারপ্রাইজ, অগ্রনী ট্রেডিং কর্পোরেশন, জিসান এন্টারপ্রাইজ, এস এন এন্টারপ্রাইজসহ ১০-১৫ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করলেও কোনরূপ নিয়মনীতি না মেনে এসব প্রতিষ্ঠানকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজ বন্টন করে দিতেন। এমনকি পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী একই প্রতিষ্ঠানকে একাধিক কাজ দেয়ার নিয়ম না থাকলেও তারা ঘুষের বিনিময়ে নিয়ম লংঘন করে একই প্রতিষ্ঠানকে অহরহ একাধিক কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। তারা এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের বিপরীতে অগ্রীম ৬% টাকা ঘুষ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিতেন।
এছাড়া বিল প্রদানের সময় আরও ২ ভাগ ঘুষ নিতেন। তারা দুজনেই ছাত্রজীবনে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হওয়ায় কোন ঠিকাদার কখনোই এসব অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। আমি বিগত সময়ে এসব অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে সাহস করে প্রতিবাদ করলে আমাকে পরবর্তী সময়ে কাজ দিবে বলে আশ্বস্ত করেন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক ১,১০,০০০/- (এক লাখ দশ হাজার) টাকা তাদের নেয়া ঘুষের টাকার অংশ নিতে আমাকে বাধ্য করেন। সম্প্রতি ২১ গ্রুপের দরপত্র আহ্বান করেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অর্থ পরিচালক আব্দুল রেজ্জাক। এখানেও ঘুষের বিনিময়ে তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাজ পাইয়ে দিয়েছেন আগের মতো একই হারে ঘুষের বিনিময়ে। তবে দুঃখের বিষয় অগাস্ট অভ্যূর্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক পোস্টিং হলেও যুব উন্নয়নের বিতর্কিত ব্যক্তিরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এখনও মহান তবীয়তে রয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার আমলের সিন্ডিকেট। বীর দর্পে টেন্ডার বানিজ্য, অন্যায় অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা। বিগত সরকারের আমলে অর্থ পরিচালক আব্দুল রাজ্জাক একজন দলীয় আস্থাভাজন হিসেবে অত্যন্ত একরোখা ও দাপুটে কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি ছিল। এ সুবাদে তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এ বিতর্কিত দুজনেরই রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক-ব্যালেন্স, বাড়ি, গাড়ি ও সম্পদ। আব্দুল রেজ্জাকের রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায় নিকুঞ্জে রয়েছে ১০-১৫ কোটি টাকা মূল্যের বিশাল অট্টালিকা। ধানমন্ডি সংলগ্ন জিগাতলায় রয়েছে ২ কোটি টাকা মূল্যের আলিশান ফ্যাট। নিজ জন্মস্থান জামালপুরের গ্রামের বাড়িতে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের পাঁচতলা ফাউন্ডেশন এর উপর ডুপ্লেক্স বাড়ি। বর্তমানে উক্ত ডুপ্লেক্স বাড়ির দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্ন করেছেন। জন্মস্থান জামালপুরে নামে বেনামে আরও রয়েছে কোটি কোটি টাকার জমিজমা। এছাড়া রেজ্জাক তার ছেলেকে আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং ছেলের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। আনিসুল ইসলামও পিছিয়ে নেই অবৈধ সম্পদের দিক থেকে। রাজধানীর ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর ও জিগাতলা এলাকায় রয়েছে একাধিক আলিশান বাড়ি যার আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক তিনি যে বাড়িতে বসবাস করেন সেই বাড়িটি সম্পূর্ণ বিদেশি সরঞ্জামাদি দিয়ে তৈরি করেছেন। এছাড়া নিজ জন্মস্থান ঝিনাইদহে রয়েছে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। শাহাদত হোসেন উজ্জ্বল আরও বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অভিযোগ দেওয়া উচিত।তবে চলতি মাসেই দুদকে অভিযোগ দাখিল প্রক্রিয়াধীন। আসতেছে পরবর্তী সংখ্যায় দুর্নীতির মহারাজা যুব উন্নয়নের অর্থ পরিচালক আব্দুল রেজ্জাক।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে আব্দুল রেজ্জাক মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কল গ্রহণ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপ এ খুদেবার্তা পাঠালেও কোন জবাব দেননি। সহকারী প্রকৌশলী আনিসুল জানান, আপনার কাছে প্রমাণ আছে? তিনি সঠিক জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করেন যা তথ্য অধিকার আইনের লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন,নিউজ করার আগে একাধিক গণমাধ্যমে কর্মী তার সাথে দেখা করেছেন।
