অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ঃ ত্রী- বিভক্ত পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলা বিএনপি এখন আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। তিনভাগে বিভক্ত একটি অংশের নেতা বিএনপির নেসারাবাদ উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আবদুল্লাহ্ আল বেরুনী সৈকত। তিনি বিএনপি ও তার অংগ সংগঠনের মূল ধারার ত্যাগী নেতা – কর্মীদের সু-সংগঠিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচী বাসতবায়ন করে যাচ্ছেন। অন্য একটি অংশের নেতা উপজেলা কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ ফখরুল আলম। বিএনপির রাজনীতির মাঠে তার তেমন কোনো কর্মসূচীই দৃশ্যমান নাই। তারপরও তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর ০২ আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর দাবীদার। বিএনপির অন্য একটি অংশের নেতা নেসারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে পিরোজপুর ০২ আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী হওয়ার আশায় রয়েছেন তিনি। আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গত বছর ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর স্বরুপকাঠী উপজেলা আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতা কর্মীদের এলাকায় পূনর্বাসনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন বলে বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির একাধিক সূত্র ও সরেজমিন অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পিরোজপুর জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানগন গনঅভ্যুত্থানের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু বিএনপির জন্য ক্ষতিকর প্রাণী হিসাবে পরিচিত নেসারাবাদ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক এলাকায় বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। সে দক্ষিণাঞ্চলের মাফিয়া ডন খ্যাত পলাতক পিরোজপুর ০২ আসনের সদ্য সাবেক সাংসদ মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজ এর দোসর। বিগত সংসদ নির্বাচনে তার মাধ্যমেই নেসারাবাদ উপজেলায় ভোট কেনার জন্য কোটি কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। স্হানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানায়, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হক এর বাড়ি একই ইউনিয়নে হওয়ায় তাদের মধ্যে রয়েছে একটা সখ্যতা ও গভীর সম্পর্ক। আর এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ নির্বিঘ্নে এলাকায় অবস্থান করেছে। স্বরুপকাঠীর অনেক নেতাকর্মী মামলায় জড়িত হয়ে জেল হাজতে গেলেও অহিদ ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারই কৃতজ্ঞতা স্বরুপ আব্দুল হক এখন অহিদের ছত্রছায়ায় থেকে ছত্রভংগ আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করছে বলে জানা গেছে।
অহিদের পূনর্বাসন প্রকল্পের আরেক সদস্য হলেন পিরোজপুর ০২ আসনের সাবেক সাংসদ মোঃ শাহ আলম। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঐ নির্বাচনে স্বরুপকাঠী উপজেলায় সংসদ সদস্য পদ বাগিয়ে নেয়ার জন্য দলমত নির্বিশেষে শাহ আলমকে ভোট দেয়। কিন্তু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই বিএনপির নেতা কর্মীদের উপর তার দলীয় ক্যাডার দিয়ে হামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করা এবং পুলিশ দিয়ে হয়রানি করার নজির রয়েছে। ৩য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অহিদ প্রার্থী হলেও শাহ আলমের নির্দেশে আওয়ামী লীগের ধাক্কায় নির্বাচনী মাঠে দাঁড়াতেই পারেনি। তারপরেও ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ রয়ে গেছেন নিরাপদ। তখন এলাকার লোকজনের মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল অহিদের সাথে শাহ আলমের গোপন আঁতাত হয়ে গেছে। তাই অহিদের হাত ধরে এখন শাহ আলম নিরাপদে থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে আনতে শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগের আরেক নেতা অবৈধ বালু সিন্ডিকেট সদস্য মাহমুদুল কবির। আংগুল ফুলে কলাগাছ উপাধি পায় সে। দক্ষিণ অঞ্চলের মাফিয়া ডন দূর্নীতিবাজ মহিউদ্দিন মহারাজের একনিষ্ঠ দোসর। এলাকায় প্রচলিত আছে মোটা অংকের বিনিময়ে সে অহিদের শেল্টারে রয়েছে। তারই প্ররোচনায় অহিদ সম্প্রতি একটি ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এছাড়াও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানকে অর্থের বিনিময়ে পূনর্বাসন করার অভিযোগ করেছেন একাধিক বিএনপি সমমনা ব্যাক্তি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ এর আওয়ামী লীগ বন্ধু এবং আত্মগোপনে থাকা সাবেক সাংসদ মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজ এর দোসর হিসাবে পরিচিত অনেকেই এলাকায় ফিরে আসার জন্য তার সাথে দেন দরবার চালাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য রয়েছে, নেসারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহিদুল ইসলাম মুহিত, স্বরুপকাঠীর সাবেক পৌর মেয়র গোলাম কবির। এছাড়াও রয়েছে রাজউকের দূর্নীতিবাজ ইন্জিনিয়ার গুয়ারেখা ইউনিয়নের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান পলাশ শিকদার। বিএনপির একটি সূত্র জানায় অহিদের গ্রীন সিগনাল পেয়ে ০৫ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়া স্হানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী এলাকায় উকি ঝুঁকি মারছে। ইতিমধ্যে তারা ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার দুঃসাহসও দেখিয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে উপজেলা নেতাদের পথেই হাঁটছে ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। একসময় যাদের ভয়ে ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের রাজনীতি করাই হারাম হয়ে গিয়েছিল এখন তাদের সাথেই রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। জুলাই- আগস্টের গনহত্যা সহ শেখ হাসিনার সাথে একাধিক মামলার এফ আই আর ভুক্ত আসামিও এখন বিএনপির ছত্র ছায়ায় রয়েছে। কোনো কোনো ইউনিয়ন বিএনপি নেতাদের সাথে রয়েছে ঐ সকল সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য ওঠাবসা। স্বরুপকাঠী বিএনপির নেতৃত্ব তিন ভাগে বিভক্ত হওয়ার কারণে একটি অংশ আওয়ামী লীগ ও সন্ত্রাসীদের পূনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের হাত শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ইহাতে প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। আলকির হাট ও চাঁদকাঠীর মারামারির ঘটনায় অহিদ পন্থী হাইব্রিড বিএনপি জড়িত বলে স্হানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান। অহিদের ছত্র ছায়ায় থাকা আরেক হাইব্রিড বিএনপি নাসির ফকিরের রোষানলে পড়ে পাটিকেলবাড়ী গ্রামের ছাত্র দল নেতা কর্মীদের জেল হাজতে যেতে হয় বলে ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও অহিদ ও তার দলবল এক সেনা সদস্যের সাথে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। বিএনপির একটি সূত্র জানায় নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য অহিদ আওয়ামী লীগ ও সন্ত্রাসীদের দলে পুনর্বাসন করে এখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না।
স্বরুপকাঠীতে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নেসারাবাদ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল্ বেরুনী সৈকত বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃনমুল পর্যায়ের সকলেই হল স্বৈরাচার। আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক না রাখার জন্য দলীয় হাইকমান্ড থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তাদেরকে পূনর্বাসন করা হলে তা হবে বিএনপির জন্য আত্মঘাতী। যদি কেউ স্বৈরাচারের দোসরদের পূনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নিয়ে থাকে তবে সেটি তার ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য করেছে। এর সাথে নেসারাবাদ উপজেলা বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।