দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় – নাজমুল ইসলাম সাইদ

কে.এ.সাদাত : এদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ হওয়ার নজির নেই বলে মন্তব্য করেছেন পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সমূদয়কাঠীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম সাইদ। তিনি আরো বলেন, বর্তমান অন্তরবর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্হানীয় নির্বাচন হওয়ার একটি আভাস পাওয়া গিয়েছিল। তার উপর নির্ভর করে সমাজ সেবায় আগ্রহী এবং নিরপেক্ষ অনেক ভদ্রলোক স্হানীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার ইচ্ছা নিয়ে এলাকায় গনসংযোগও শুরু করেছিল। কিন্তু সরকারের সকাল বিকাল সিদ্ধান্তের উপর আস্হা না রাখতে পেরে অনেকেই পিছু টান দিয়েছে।
এ প্রতিবেদকের নিকট দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দলীয় সরকারের অধীনে স্হানীয় নির্বাচনে তার অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। দলীয় সরকারের অধীনে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের কাহিনী দেশের সকল মানুষই জানে এবং দেখেছে। স্হানীয় নির্বাচনও একইভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে দেশব্যাপী। জনপ্রিয় সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন ২০০৩ সালে বিএনপি দলীয় সরকারের আমলে সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন বিএনপি সমর্থিত একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীও ছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমিও নির্বাচনে অংশ গ্রহন করি। তখন বিএনপি নেতাকর্মীদের একটাই শ্লোগান ছিল বিএনপির যে কেউ বিজয়ী হউক কিন্তু অন্য কেউ যেন নির্বাচিত হতে না পারে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শুরুর দিকেই কোনঠাসা হয়ে পড়ে। আমাকেও কোনঠাসা করার সর্বোচ্চ চেস্টা করা হয়। কিন্তু জনগণের ভোটে আমি সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। নির্বাচনে হেরে আমার বিরুদ্ধে ক্ষমতাশীল দলের নেপথ্য ইন্ধনে একাধিক হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেফতার হয়ে আমাকে কারাবাস করতে হয়।
আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ হেঁটেছে বিএনপির দেখানো পথে। তিনি তার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ২০১০ সালের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা প্রথম ধাক্কাতেই নির্বাচনী মাঠে চুপসে যায়। এরপর তাদের টার্গেট হই আমি। ভোটের মাঠে আমাকে হারানো সম্ভব নয় এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী ও প্রশাসনকে ব্যাবহার করা হয়। ভোট কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের মাধ্যমে আমার বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তী ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নামে মাত্র প্রার্থী দাড় করান। মাঠে তাদের কোনো প্রচার প্রচারনা ছিল না। নির্বাচনের দিন প্রথম প্রহরেই তারা নির্বাচন বয়কট করে ভোট কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়। আওয়ামী লীগ টার্গেট নেয় আমার সমর্থক কর্মী ও ভোটারদের উপর। সাথে যুক্ত হয় তাদের টাকায় কেনা প্রশাসন। কোনোরুপ প্রতিরোধ প্রতিবাদ ছাড়াই তাদের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করে নেয়।
তিনি আরো বলেন বিএনপি শতভাগ নিশ্চিত আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। তারপর তারা স্হানীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। তারা আওয়ামী লীগের দেখানো পথে হাটতে চায়। যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্হানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো আপত্তি না থাকলেও বিএনপি জোর আপত্তি করছে। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দিন যত যাচ্ছে বিএনপির স্হানীয় পর্যায়ের নেতা কর্মীদের আচরণে মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজি, হাট বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার সাীমা ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ তাদের এই ছন্নছাড়া, ঘরছাড়া অবস্থায় স্হানীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে না এটা নিশ্চিত। ফলে অন্তরবর্তী সরকারের অধীনে স্হানীয় নির্বাচন হলে জনগন উক্ত দুই দলের বাহিরে নিরপেক্ষ এবং গ্রহনযোগ্য লোককে নির্বাচিত করবে। এখানেই বিএনপির ভয়। কারণ স্হানীয় নির্বাচনে বিএনপির বাস্তব চিত্র ফুটে উঠবে।
দেশে জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আপনার ধারণা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় খুব তাড়াতাড়ি নির্বাচন হচ্ছে না। সংস্কার এবং বিগত স্বৈরাচারী সরকারের বিচার সহ কয়েকটি অ-মিমাংসিত বিষয়ে ইতিমধ্যে নির্বাচন ঝুলে গেছে। তারপর বিএনপির শীর্ষ নেতার দেশে ফেরার আপতত কোনো লক্ষন দৃশ্যমান নয়। নতুন রাজনৈতিক দল এখনও তাদের কোনো অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। জামাতে ইসলাম এখন পর্যন্ত তাদের নিবন্ধন ফিরে পায়নি। সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচন বিষয়টি এখন অনিশ্চিত।
এ পরিস্থিতিতে আপনার ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশ্যে কি বার্তা আছে ? জবাবে তিনি বলেন ইউনিয়নবাসীকে ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করতে হবে। অতি উৎসাহী হয়ে কোনো পাতানো ফাঁদে পা না দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি তার এলাকায় জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আরো বলেন দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়। তাই সকলকে নিজ নিজ নিরাপত্তার প্রতি বিষেশ খেয়াল রাখতে হবে।