শান্ত জনপদ অশান্ত করার পায়তারা সহাবস্থান বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মিজানুর রহমান

বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ধৈর্যের সঙ্গে ইউনিয়ন বাসীকে সহাবস্থান বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার গুয়ারেখার ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মিজানুর রহমান। তিনি দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলার অবনতির উপর আলোকপাত করতে গিয়ে নিজ ইউনিয়নের জনসাধারণকে এই বার্তা দেন। জনপ্রিয় উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান এ প্রতিনিধির সাথে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পরাজিত মহল এই শান্ত জনপদকে অশান্ত করার অপ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি ইউপির দায়িত্ব নেওয়ার পর এলাকার চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের দৌরাত্মে ভাটা পড়ে। গত বছর ০৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর সন্ত্রাসীদের গডফাদার এলাকায় বিচরণ বন্ধ করে দেয়। সাথে সাথে সন্ত্রাসীরাও এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তারা অন্য রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে সংগঠিত হচ্ছে। তাই তিনি এলাকাবাসীকে সতর্ক করার জন্য এই আহ্বান জানান।
এদিকে গুয়ারেখা ইউনিয়নে সরেজমিন তথ্য অনুসন্ধানে গেলে একাধিক ব্যাক্তি জানান, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে পাটিকেলবাড়ী গ্রামের ঢাকায় কর্মরত রাজউক ইন্জিনিয়ার পলাশ শিকদার এলাকায় একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। তারা আরও জানান পলাশের অবৈধ অর্থের জোরে গঠিত ঐ বাহিনী এলাকায় রামরাজত্ব চালিয়ে যেতে থাকে। পলাশের অবৈধ অর্থের উপর ভর করে এলাকা মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়। তারা জানান এলাকার মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে গ্রামীন সুষ্ঠু ধারার পরিবেশ নষ্ট করে পলাশ শিকদার। এলাকা ঘুরে আরও জানা যায় পিতাকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়ে এই জনপদকে তাদের পারিবারিক সাম্রাজ্যে পরিণত করতে চেয়েছিল পলাশ। কিন্তু চেয়ারম্যান পিতা আব্দুর রব শিকদারের আকস্মিক মৃত্যুতে সে উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হয়। উপ নির্বাচনে স্ত্রীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ করিয়ে হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের ব্যার্থ চেষ্টা চালায় পলাশ। বিশিষ্ট সমাজ সেবক, দানবীর ও রপ্তানিমূখী তৈরী পোশাক ব্যাবসায়ী গাজী মিজানুর রহমানের কাছে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয় পলাশের স্ত্রী ফারজানা আক্তার।
গুয়ারেখা ইউনিয়নের হিন্দু কমিউনিটির লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায় ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনে আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে যখন উদ্দীগ্ন উৎকন্ঠার মধ্যে পড়ে যাই তখন আমাদের ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মিজানুর রহমান আমাদের পাশে এসে দাড়ান। এলাকা ঘুরে আরও জানা যায় ঐ সময়ে এলাকার সামাজিক প্রতিষ্ঠান মাষ্টার সাহাদৎ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ভাংচুর এলাকার সাধারণ জনগণ সহজভাবে মেনে নেয়নি। এলাকাবাসী আরও জানায়, দু -একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া গুয়ারেখা ইউনিয়নের পরিবেশ শান্তই ছিল। কিন্তু অতি সম্প্রতি নাসির ফকির নামে ভুঁইফোড় এবং স্ব-ঘোষিত এক বহুরপী সমাজপতির কালো থাবায় ফের অশান্ত হতে শুরু করে এলাকা। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় তারই ব্যাক্তিত আক্রোশের শিকার মাষ্টার সাহাদৎ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার। গ্রামীন নোংরা রাজনীতির নাটের গুরুর নেপথ্য ইন্ধনে এলাকায় ঠুনকো উদ্দেশ্যে পাল্টা পাল্টি দুটি মানব বন্ধনের আয়োজন করা হয়। যাহা লোকবলের অভাবে পন্ড হয়ে যায়। এছাড়াও ঐ কথিত সমাজ পতির নেপথ্য ইশারায় এলাকার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরন করে বলে ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়। আরো জানা যায় ঐ নব্য বিএনপি এলাকার স্কুল কলেজে আধিপত্য বিস্তার করে নিজ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ইতিমধ্যে জনগণের তোপের মুখে পড়ে পিছু হঠতে বাধ্য হন। কিন্তু তার নোংরা থাবা এখনো অব্যাহত রেখেছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়।
এদিকে গত ০৮ মার্চ গুয়ারেখা ইউনিয়নের চাঁদকাঠী এলাকায় পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে প্রতি পক্ষের উপর হামলা হয়। ইহাতে ফারুক হোসেন নামে একজন মাথায় জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় হামলাকারীরা হাইব্রিড বিএনপি এবং নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ গ্রুপের সমর্থক। ইতিপূর্বে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল এবং ইন্জিনিয়ার পলাশ বাহিনীরও সদস্য।
একদিকে নাসির ফকিরের আধিপত্য বিস্তারের আকাংখা। পলাশ শিকদারের সাম্রাজ্য হারানোর বেদনায় প্রতিশোধের নেশা। হাইব্রিড বিএনপির বিরুদ্ধে মূল ধারার বিএনপির মুখোমুখি অবস্থান। সব মিলিয়ে গুয়ারেখা ইউনিয়নের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মিজানুর রহমানের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, কে কোন পন্থী সেটা আমার কাছে মূখ্য নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছি ততক্ষণ প্রতিটি নাগরিকেরই আমি সেবক। এলাকায় বিভিন্ন দল,মত,রাজনীতি ও ধর্মের পার্থক্য থাকবে। কিন্তু দিনশেষে সবাই প্রতিবেশি। তাই কারো ইন্ধনে অতি উৎসাহী হয়ে কোনো আইন শৃঙ্খলা বিরোধী কাজের সাথে জড়িত হলে তার দায় দায়িত্ব তার উপরই বর্তাবে। তাই দলমত নির্বিশেষে সকল ইউনিয়নবাসীকে তিনি ধৈর্যের সাথে সহাবস্থান বজায় রাখার জন্য পুনঃরায় আহ্বান জানান।