বিশ্লেষণমুলক প্রতিবেদন: এক সময়ের নন্দিত ফকির নাসির উদ্দীন তার আত্ম অহমিকা, ক্ষমতার দাপট, দূর্নীতি আর গ্রামীন নোংরা রাজনীতির ক্রীড়নকের ভুমিকার জন্য এখন নিন্দিত নাসির ফকিরে পরিনত হয়েছে। পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের পাটিকেলবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তার রয়েছে বহুরুপী রাজনৈতিক পরিচয়। এ ছাড়াও মাজার ব্যাবসায়ী হিসেবে তার রয়েছে কুখ্যাতি। সম্প্রতি পাটিকেলবাড়ী গ্রামের ছাত্রদল কর্মীদের একের পর এক মামলায় ফাঁসানোর নেপথ্য কারিগর হিসাবেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা মন্তব্য এবং সরেজমিন অনুসন্ধানের ভিত্তিতেই এই বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন।
তার অতীত বিশ্লেষন করে দেখা যায় ১৯৯১ সালে বিএনপি জোট রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে তৎকালীন প্রভাবশালী এমপি সৈয়দ শহীদুল হক জামালের ব্যাক্তিগত সহকারী হন তিনি। ঐ সময় এমপি জামাল বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সুচতুর নাসির ফকির সেই সুবাদে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান কার্যালয়ে একটি চাকরি বাগিয়ে নেন। এম পি জামালের ক্ষমতাকে ব্যাবহার করে নিজ এলাকা পাটিকেলবাড়ী ও ব্যাসকাঠী কেন্দ্রীক রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় হাত দেন। নিজেকে মোতওয়াল্লি ঘোষণা দিয়ে হযরত আদুশাহ দরগা নামে একটি মাজার ব্যাবসা খুলে বসেন।
এলাকার সাধারণ মানুষ তখন উন্নয়ন দেখে তার প্রশংসা করতে থাকে। কিন্তু এই উন্নয়ন দেখিয়ে এলাকার সাধারণ জনগণকে বোকা বানিয়ে নিজের ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে শুরু করেন। এলাকার শিক্ষিত ও সচেতন মহল প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তাদেরকে বিভিন্ন কৌশলে নিবৃত করেন। তখন তার মুখের কথাই ছিল আইন। কেউ তার দূর্নীতির প্রতিবাদ করলেই থানা পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাকে নিবৃত্ত করত।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। শহিদুল হক জামাল ঐ নির্বাচনে পরাজিত হলে নাসির ফকির রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চাকরির দিকে মনোনিবেশ করেন। সাথে সাথে তিনি মাজার ব্যাবসাকে সচল রাখেন।
২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার গঠন করলে শহিদুল হক জামাল জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত হন। নাসির ফকির তখন ক্ষমতার দাপটে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার রোষানলে পড়ে তারই প্রতিবেশী এগার গ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হান্নান শরীফ চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। তার অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় ঐ সময় তার আরেক প্রতিবেশী মাস্টার সাহাদৎ হোসেনকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়। রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঐ কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। ২০০৩ সালে গুয়ারেখা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান তার আরেক প্রতিবেশী কুদ্দুস শিকদারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশকে প্রভাবিত করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এভাবেই প্রতিপক্ষ দমনের নামে সে নিজ গ্রামে রাম রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। এলাকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কোনোরুপ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পাটিকেলবাড়ী আদুশাহ দরগা শরীফের স্বঘোষিত মোতাওয়াল্লী সেজে মাজারকে ব্যাক্তিগত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেন। নিজেকে সুফি সাধক হিসাবে জাহির করার চেষ্টা করছেন বলে তার বিভিন্ন কর্মসূচীতে উপস্থিতি প্রমান করে। মাজারের পরবর্তী উত্তরসূরী হিসাবে তার পুত্রকে অধিষ্ঠিত করার জন্য ইতিমধ্যে জনসাধারণের মধ্যে পরিচিত করানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।
এলাকাবাসী সূত্রে আরো জানা গেছে তার আয়ের উৎস হিসেবে মাজারের পাশাপাশি রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজ ও এগারো গ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজে নিজেই সভাপতি হওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে নিজ পুত্রকে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে এগারো গ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত করাতে গিয়ে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন।
তার রয়েছে বহুরুপী রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। বিএনপির সাংসদ সদস্যের ব্যাক্তিগত সহকারী থাকাকালীন ঐ দলীয় সাইনবোর্ড ব্যাবহার করে দূর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ কামিয়ে নেয়ার ঘটনাও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করে। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ মোঃ শাহ আলম ও সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী শ.ম.রেজাউল করিমের আস্হাভাজনে পরিনত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ১৪ দলীয় জোটের শরীক জাকের পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পিরোজপুর ০২ আসনের ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এর সাথে দেখা করে তাকে পূর্ণ সমর্থন দেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি পিরোজপুর ০২ আসন থেকে চমক দেখাবেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি থেকে জানা যায়।
গত বছর ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর তিনি নিজ এলাকায় নিজেকে বিএনপির নেতা হিসেবে জাহির করতে শুরু করেন। কিন্তু স্হানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায় সে দলের কেউ নয়।এলাকাবাসী সূত্রে আরো জানা যায় পাটিকেলবাড়ী এগারো গ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাস্টার সাহাদৎ হোসেন পাঠাগার এবং কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে হামলা, কম্পিউটার ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেয়ার নেপথ্যে তিনি ইন্ধন দিয়েছেন। তারই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পাটিকেলবাড়ী গ্রামের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে কারাগারে যেতে হয় বলে ভুক্তভোগীদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। এ বিষয়ে স্হানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র জানায় বহুরূপী নাসির ফকির এখন বিএনপির ঘাড়ে চড়ে বিএনপি নিধনে নেমেছেন।
এলাকায় তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, তার নোংরা রাজনীতির দৌরাত্ম পাটিকেলবাড়ী ও ব্যাসকাঠী গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এক সময় যাদের সাথে তার দ্বন্দ্ব ছিল এখন তাদের সন্তানদের সাথেও প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে নাসির ফকির। তার কোনো অপকর্মের প্রতিবাদ কেউ করলেই তাকে পুলিশি হয়রানি করার ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রতিপক্ষ দমনের কৌশল হিসাবে নেপথ্যে কলকাঠি নেড়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকার ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করছে। এলাকাবাসী সূত্রে আরো জানা যায় তিনি নিজেকে পীর ঘোষণা দিয়ে মাজার ব্যাবসাকে পুঁজি করে প্রশাসন ও স্হানীয় বিএনপির নেতাদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এলাকাবাসী এই বহুরূপী রাজনৈতিক দালালের সকল প্রকার দুর্বৃত্তায়ন থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।