কে.এ.সাদাত : দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা। বিবিধ কারণে এই উপজেলা বিভিন্ন সময়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিলেও বর্তমান সময়ে এই উপজেলার এক মাফিয়া পরিবারের দূর্নীতি এবং সন্ত্রাসী কর্ম কান্ডের জন্য দেশব্যাপী আজ আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে। এই উপজেলার বর্তমান সময়ের রাজনীতিতেও নানান বৈচিত্রের ছোয়া লেগেছে। পিরোজপুর ০২ সংসদীয় আসনটি নেসারাবাদ, কাউখালী এবং ভান্ডারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। সংসদীয় আসনে স্হায়ী ঠিকানাবিহীন নেসারাবাদ উপজেলা কখনো পিরোজপুর ০১ আবার কখনো পিরোজপুর ০২ আসনের সাথে সংযুক্ত হলেও ভান্ডারিয়ার এবং কাউখালী উপজেলার অবস্থান কখনো নড়চড় হয় নি। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হবু প্রার্থীরা মাঠে ময়দানে উঁকিঝুকি মারছে। নিজ নিজ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য সকলেই নিজেকে যোগ্য বলে মনে করে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচীতে ঘোষণা দিচ্ছেন।
ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্বাপর রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিগত ৩৮ বছর ধরে এই উপজেলা ছিল সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন (মঞ্জু),র কব্জায়। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার কারণে এই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করছেন তিনি। ফলে এ উপজেলায় জাতীয় পার্টি জেপির অবস্থান খুবই মজবুত ছিল । এ উপজেলায় বিগত তিন যুগে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান ছিল নামে মাত্র। কিন্তু বিগত সেখ হাসিনা সরকারের পাতানো একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনাব আনোয়ার হোসেন (মঞ্জু) কে চৌদ্দ দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামানো হয়। অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জনাব মঞ্জুর সাবেক ব্যাক্তিগত সহকারী মাফিয়া সম্রাট হিসেবে খ্যাত মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজকে তারই বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামিয়ে দেন। মহারাজের টাকার নিকট ভান্ডারিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগ ও জেপির একটি অংশ তার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে সক্রীয় ভুমিকা পালন করে। কথিত আছে বিএনপি ঐ নির্বাচনে অংশগ্রহন না করলেও মহারাজের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে উপজেলা নেতারা তাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি অংশকে মহারাজের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামিয়ে দেন। ঐ নির্বাচনে মহিউদ্দিন মহারাজ সংসদ সদস্য নির্বচিত হন এবং মাত্র ছয় মাসের মাথায় পটপরিবর্তনের ফলে একাধিক মামলার আসামী হয়ে সে পলাতক রয়েছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে না এই হিসাব মাথায় রেখে পিরোজপুর ০২ আসন থেকে ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী শামীম বিন সাইদিকে তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এ আসনের কোনো উপজেলায়ই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার মত শক্ত অবস্থান তাদের নেই। একটি নির্বাচনে ন্যুনতম যে লোকবল এবং ভোটার থাকা দরকার পিরোজপুর ০২ আসনে তা তাদের নেই। এছাড়াও শামীম বিন সাইদি পিরোজপুর ০২ আসনের অন্তর্ভুক্ত কোনো উপজেলারই নাগরিক নন। তিনি পিরোজপুর ০১ আসনের জিয়ানগর উপজেলার নাগরিক।
এদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামী সংসদ নির্বাচনে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন বলে জেপি সমর্থক নেতা কর্মীরা মনে করছেন। তাই তারা তাদের নেতার নির্দেশের অপেক্ষায় নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
বিএনপি থেকে ভান্ডারিয়া উপজেলায় একাধিক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা বিগত দিনে এ উপজেলায় বিএনপিকে শক্তিশালী করতে তেমন কোনো ভুমিকাই পালন করেনি। জেপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত এ উপজেলায় তাদের জোড়ালো দলীয় কোনো কর্ম সূচীই ছিল না। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ভান্ডারিয়া কলেজের সাবেক ভিপি এবং ২০২৩ সালে বিএনপিতে যোগদান করা মাহমুদ হোসাইনের কোনো বিতর্কই পিছু ছাড়ছে না। তিনি বর্ষীয়ান নেতা সাবেক এমপি ও মন্ত্রী জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর চাচাত ভাই। এ ছাড়াও তিনি জেপি নেতা ও ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহিবুল হোসেন মাহিম এর আপন ভাই। জেপি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা এবং মাত্র দেড় বছর আগে বিএনপিতে যোগদান করে মনোনয়ন দাবী করার বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নিতে পারছে না ভান্ডারিয়ার মূল ধারার বিএনপি। তাদের অভিযোগ স্হানীয় বিএনপির তৃণমূলের সাথে তার নেই কোনো সম্পর্ক। তাই আওয়ামী লীগ ও জেপি পুনর্বাসন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে পাশ কাটিয়ে কোনো গ্রুপেই স্থান না পাওয়া নেছারাবাদ উপজেলার বিতর্কিত ও ভবঘুরে তরুণদের নিয়ে দল ভারী করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কাউখালী উপজেলায় মাহমুদ হোসাইন সমর্থক খুঁজে পাওয়াই ভার। সব মিলিয়ে পিরোজপুর ০২ আসনে তার অবস্থান মোটেই সুখকর নয়।