সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের যত অঘটন, এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে সন্ত্রাসীরা নিরব দর্শকের ভুমিকায় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা

আল্ কাফি : গত বছরের জুলাই – আগস্টের পট পরিবর্তনের পর পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সমূদয়কাঠী ইউনিয়নে একের পর এক অঘটন ঘটেই চলেছে। ০৫ আগস্ট পূর্ববর্তী জমানায় যাদের নানাবিধ অপকর্মে ইউনিয়নবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছিল আজ তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সে স্থান পূর্ণ করেছে অন্যান্য সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, চোর ও লুটপাট গ্রুপ এবং সালিশ বানিজ্যের হোতারা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকার বাহিরে থাকা সন্ত্রাসীরা এলাকায় এসে অশান্ত করে তুলেছে এ জনপদ। এলাকার সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এলাকার সুশীল সমাজ সবাই বিষয় গুলি দেখেও যেন না দেখার ভান করতেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা কোনো প্রতিবাদ না করে এ সকল অপকর্মকে নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য মৌন সমর্থন দিচ্ছে।

ইউনিয়নের মৈশানী গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী নয়ন গাজী স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে। তার অত্যাচারে
ইতিমধ্যে মৈশানী জুলুহার এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে মৈশানী গ্রামের পিতা পুত্রকে পিটিয়ে আহত করেছে। অবশেষে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজত বাস করে জামিনে রয়েছে। নয়ন গাজীর রয়েছে নানান অপকর্মের খতিয়ান। তারমধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল বিগত ১/১১ সেনা সমর্থিত সরকারের সময় অন্যের ঘরে পিস্তল রেখে তাকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই গ্রেফতার হয়। বিগত আওয়ামী জমানায় সে কিছুটা চাপের মুখে থেকে এলাকায় বিচরণ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ০৫ আগস্টের পর নিজেকে বিএনপির নেতা ঘোষণা দিয়ে এলাকায় ফিরে এসে অদম্য গতিতে অপকর্মে লিপ্ত হতে শুরু করে।

সমূদয়কাঠী গ্রামের আরেক আলোচিত কথিত বিএনপির যুব নেতা জাকির খান। বিগত ১/১১ এর সরকার আমলে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজত থেকে মুক্ত হয়ে এলাকা ছাড়ে সে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সে এলাকায় আসেনি। ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সে এলাকায় এসে সালিশ বানিজ্যের নামে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। সম্প্রতি মৈশানী গ্রামের এক যুবদল কর্মী তার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লেখালেখি করে। ইহাতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাকির খান প্রকাশ্য দিবালোকে শিমুল গাজীকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে পিটিয়ে আহত করে। ঐ ঘটনায় শিমুল গাজী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে জাকির খানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে। জাকির খান আদালত থেকে জামিনে রয়েছে। এলাকাবাসীর মন্তব্য আবারো জাকির খান এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারী রাতে কে বা কারা সেহাংগল টেম্পুস্টান্ডে অবস্থিত বিএনপি অফিসে আগুন দেয়। ইহাতে নেছারাবাদ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামারকাঠী গ্রামের আবির খান বাদী হয়ে নেছারাবাদ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনা স্থলের লোক বাদী না হওয়ায় সেহাংগল বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষুব্দ হয়। ঘটনা অনুসন্ধানে জানা গেছে উক্ত অফিস পোড়ানোকে কেন্দ্র করে সেহাংগলের একটি মহল শক্রতামূলক আসামি দিয়ে মামলা বানিজ্য করতে চেয়েছিল।

গত ২২ মার্চ সেহাংগল নিবাসী রাসেদ খান মুন্না বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বেপারি সহ সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের ১৮ জন আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে নেছারাবাদ থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে। ঐ মামলা দায়েরের পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন বেপারী সহ অন্যান্য আসামিরা পলাতক রয়েছে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারী মৈশানী গ্রামের আব্দুল জলিল এর স্ত্রী শিরিন বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে প্রতিবেশীরা পিটিয়ে আহত করে। তাকে শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। ঐ ঘটনায় মামলা হলে আসামিরা গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে গিয়ে জামিনে মুক্তি পায়।
এদিকে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কুহুদাসকাঠী গ্রামে এক রাতে ৫ টি ঘরে সিধ কেটে চুরির নাটক সাজানো হয় বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায়ও গ্রামীন রাজনীতির কূটকৌশল কাজ করছে এলাবাসীর ধারনা।

এছাড়াও সমূদয়কাঠীতে আবাসন প্রকল্পে দূর্নীতি, ব্রীজে ধাক্কা লাগায় ট্রলার থেকে বিশ হাজার টাকা চাঁদা আদায়, সেহাংগল গ্রামে কালভার্ট নির্মানে অনিয়ম, মুঠোফোনে মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করার হুমকি। এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে।

এ সকল ঘটনায় ইউনিয়নবাসীর ক্ষোভ বিএনপির উপজেলা নেতৃত্ব, বর্তমান জনপ্রতিনিধি, আগামী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হওয়ার আশা পোষণকারী প্রার্থীদের উপর। এলাকার সাধারণ জনগণ মনে করে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সু-সময়কে দুঃসময়ে পরিনত করছে উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগ তাদের অপরাধের ফল ভোগ করতেছে। হাঁক ডাক দেয়া আওয়ামী লীগ গর্তে ঢুকে গেছে। এই সুবাদে সমূদয়কাঠী ইউনিয়ন বিএনপি তাদের অতি উৎসাহী মনোভাবের কারনে দলকে সমালোচনার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সুশীল সমাজ মনে করছেন এজন্য দায়ী উপজেলা বিএনপির ত্রী -বিভক্ত নেতৃত্ব। তাই ইউনিয়ন বিএনপির উপর তাদের কোনো একক নিয়ন্ত্রণ কাজ করে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে মাস্তান ও পেশীশক্তিধর লোকজন দরকার তাই তাদের বিরুদ্ধে যেতে চায়না তারা।

অন্যদিকে সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানদের উপরও ইউনিয়নবাসী নাখোশ। ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মামলার আসামী হয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। ফলে জনসাধারণ ইউনিয়ন পরিষদের সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত। ইউপির উন্নয়ন খাতের বরাদ্দের বন্টনের উপর চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের কোনো হাত নেই। ভিজিডির চাল পর্যন্ত বিতরণ করছে বহিরাগতরা। এলাকাবাসী জানান দুইবারের নির্বাচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সবুর তালুকদার এলাকায় থাকলেও কোনো অপকর্মের প্রতিবাদ করেন না। কারণ আগামী নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান পদে লড়বেন বলে কাউকে ক্ষ্যাপাতে চান না তিনি।

সাবেক আরেক ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম সাইদ ঢাকায় অবস্থান করে আগামী ইউপি নির্বাচনে অংশ গ্রহনের বার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু এলাকার সার্বিক নেতিবাচক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই তার কোনো ভুমিকা। তিনিও কি তবে মাস্তান নির্ভর নির্বাচন করবেন?

এদিকে সমূদয়কাঠী ইউনিয়নে বিএনপি পন্থী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে বিএনপির নাম ভাংগিয়ে তারা বৈতরণী পার হবে। তাই তারাও পেশীশক্তি ওয়ালাদের গুরুত্ব দিচ্ছে এবং তাদের কোনো অপকর্মেরই প্রতিবাদ করছে না। সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের অতীত ঘেটে দেখা যায় এ ইউনিয়নে কখনোই বিএনপি পন্থী কোনো ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় নি। সাধারণ জনগণের অভিমত বিএনপি নেতাকর্মীরা যেভাবে ইউনিয়নব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে তাতে এই মুহূর্তে তাদের লাগাম টানা না হলে আওয়ামী লীগের মত এলাকার মানুষ তাদেরকে ঘৃণার চক্ষে দেখবে।
দু – একজন সুশীল সমাজের লোক প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলেও তারাও মামলা হামলার ভয়ে মুখ খুলছে না। তাই সাধারণের অভিমত এভাবে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের কর্মকান্ড চলতে থাকলে অচিরেই এ জনপদ নরকপুরিতে পরিনত হবে।
এ অবস্থায় এলাকার সাধারণ জনগণ সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের সার্বিক পরিস্থিতির উপর বিষেশ নজর দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।