প্রকাশিত সংবাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান – নাজমুল ইসলাম সাইদ

নবজাগরণ ডেস্ক : গত ১৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নবজাগরণ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে “সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের যত অঘটন, এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে সন্ত্রাসীরা, নিরব দর্শকের ভুমিকায় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রকাশিত সংবাদেের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদ। লিখিত এবং মোবাইল ফোনে পত্রিকা অফিসে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি জানান উক্ত নবজাগরণ পত্রিকায় তার নাম উল্লেখ করে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা ঠিক নহে। ঐ প্রতিবেদনে আমার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আমি আগামী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। ইনশাআল্লাহ আমি সুস্থ শরীরে বেচে থাকলে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করব এটা ঠিক। কিন্তু ইউনিয়নবাসীর এই দুর্দিনে জনগনের কোনো খোঁজ রাখছি না বলে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা ঠিক নহে। আমি ব্যাবসার কাজে ঢাকায় অবস্থান করলেও এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির উপর প্রতিনিয়তই খোঁজ খবর রাখছি। এলাকার জনসাধারণের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে। যার জন্য যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি। নির্বাচন কখন হবে তা অনিশ্চিত তাই এই মুহূর্তে এলাকায় বিচরণ করে আমাকে এবং আমার সমর্থকদের বিপদে ফেলতে চাই না।

এ প্রসংগে তিনি বলেন, ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটছে। পট পরিবর্তনে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা এক আত্মগোপনে রয়েছে অথবা নিরব জীবন যাপন করছে। ফলে এ স্থানটি পূর্ণ করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এলাকায় চাঁদাবাজি, সালিশ বানিজ্য, প্রতিপক্ষের উপর সন্ত্রাসী হামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির শিকার করা, মামলার হুমকি প্রদান করে টাকা আদায়, মারামারি, রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে হুমকি ধমকি এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিনত হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি চাঁদাবাজির মামলায় আসামি হয়ে সমুদয়কাঠীর বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির আত্মগোপনে রয়েছেন। চুরির ঘটনাও বেড়েছে ব্যাপক হারে। গভীর রাতে হিন্দু এক নারীর গৃহে প্রবেশ করে এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে কাপড় খুলে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ঐ সকল ঘটনার সাথে জড়িত সকলেই এলাকার চিহ্নিত বিএনপি কর্মী বলে তিনি জানান। তাদের এ সকল বে- পরোয়া কর্ম কান্ডের বিরুদ্ধে কেহই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, এলাকার পরিস্থিতি এমন পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, নিজের জীবন এবং ইজ্জত নিয়ে সকলেই সংকিত। ছোট বড় কেউ কাউকে ইজ্জত সম্মান করে না। তিনি বলেন, এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমি বেশি দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করলে আমিও চাঁদাবাজির শিকার হতে পারি। চাঁদা না দিলে মিথ্যা মামলার আসামী হতে পারি। তাই আমি অতি উৎসাহী আচরণ থেকে বিরত রয়েছি।

তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় জানান এ ইউনিয়নের জনসাধারণের মূল নৈতিক অবক্ষয়ের বংশবিস্তার হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়। দক্ষিণের মাফিয়া সম্রাট বলে খ্যাত পলাতক সাবেক সাংসদ মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য শত শত কোটি টাকা ব্যায় করেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপির ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য এবং গোপনে মহারাজের টাকা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের হাতে তুলে দেয়। নগদ টাকা হাতে পেয়ে তারা বিড়ি, সিগারেট ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। মহারাজ এবং নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক এ এলাকার সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিকে বিনষ্ট করে একটি অসুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করে গেছে যার ফল ভোগ করতেছে এলাকাবাসী। নাজমুল ইসলাম সাইদ বর্তমান পরিস্থিতির জন্য উপজেলা এবং ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃত্বকে দায়ী করেন। তিনি বলেন নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপি তিন ভাগে বিভক্ত। ইউনিয়ন বিএনপিরও রয়েছে তিনটি কমিটি। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে মানছে না। নিজদের মধ্যেও সংঘাত ও হানাহানির সম্ভাবনা রয়েছে। ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দও আগামী ইউপি নির্বাচনে তাদের কর্মী হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকায় কারো বিরুদ্ধেই কিছু বলেনা। কারণ আগামী ইউপি নির্বাচনে ঐ সকল কর্মী ব্যাবহার নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার আশা করছে।

নাজমুল ইসলাম সাইদ বিগত দিনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০০৩ সালে বিএনপির শাসনামলে সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচন পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত তিনি ঐ ইউপির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ঐ সময়ে বিএনপি এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন চাপের মুখে পড়েন। ঐ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা তার নিকট পরাজিত হন। তখন প্রভাবশালী এমপি মরহুম সৈয়দ শহীদুল হক জামালের ক্ষমতার বলে বলিয়ান হয়ে তাকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করছে বিএনপির স্হানীয় একটি চক্র। কিন্তু ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঐ চক্রটি মিথ্যা মামলায় আসামি করে। ঐ মামলায় তাকে জেল হাজতে যেতে হয়। এর পর ২০১১ এবং ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সবুর তালুকদার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে তার বিজয় ছিনিয়ে নেয়।

নাজমুল ইসলাম সাইদ তার সমর্থক ও ইউনিয়নবাসীদের কোনো রুপ পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন। তাই সকলকে নিজ নিজ নিরাপত্তার প্রতি সজাগ থাকতে হবে। তিনি তার সমর্থকদেরকে তার উপর পূর্ণ আস্হা রাখতে বলেছেন। তিনি ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন, আমি আপনাদের সাথে ছিলাম আছি এবং থাকব তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।