মাদক পরিদর্শক শাহজালালের সেল্টারে কোতোয়ালির মদের দোকানে অনিয়ম

তৌহিদুর রহমানঃ
ডিএমপি’র কোতোয়ালি সার্কেলের মাদক পরিদর্শক শাহজালাল এর সেল্টারে কুমারটুলির মদের দোকানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোতোয়ালি থানাধীন বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ৫০ গজ দূরত্বে কুমারটুলির ১৫/১৬ জিএল গার্থ লেনে লাইসেন্সি এই দেশী মদের দোকান। এই দোকানের অনিয়মের  রামরাজত্বের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানা ও ফাঁড়ি পুলিশেরও কোন গাত্রদাহ নেই। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে ,ঐ লাইসেন্সি দেশি মদের দোকান মালিক কর্তৃপক্ষ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে আসল বাংলা মদের সাথে পর্যাপ্ত পানি মিশিয়ে বিক্রি করে। আর এই পানি সরবরাহের জন্য খোরশেদ নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘ বছর ধরে নিয়োজিত। প্রতিদিন সকালে ৩০ থেকে ৪০ টিন(জের)পানি সরবরাহ করাই তার দায়িত্ব।আবার এর পাশাপাশি তারা স্প্রিট ও কেমিক্যাল এর মিশ্রন ঘটিয়ে নকল মদ তৈরি করে ইনটেক ক্যাপ লাগিয়ে বিক্রি করছে। এই দোকান মালিক কর্তৃপক্ষ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্সি দেশি মদের দোকান পরিচালনার বিধি-বিধান ও নির্ধারিত মূল্যের তোয়াক্কা না করে, তাদের মনগড়া মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি হাফ লিটার (স্পেশাল) ৬শ, নরমাল ৩শ এবং কোয়াটার লিটার (পাইট) ৩শ টাকা মূল্যে বিক্রি করে। পারমিটধারী মাদক সেবী ব্যতীত যেকোনো ক্রেতা, বাহক ও পাইকারের কাছে অবাধে এই মদ বিক্রি করছে। এমনকি তারা প্রত্যেক পাইকারের কাছে সর্বনিম্ন ২০ লিটার থেকে ৩ শ লিটার পর্যন্ত বিক্রি করে। প্রতিদিন সকাল ৭ টায় দোকান খুলেই সাড়ে ৭টার মধ্যে পাইকারদের মাল (বাংলা মদ) সরবরাহ করে। কারণ ওই সময় এলাকার পরিবেশ থাকে নিরব ও জনশূন্য। ফলে পাইকাররা খুব সহজে ও নির্বিঘ্নে এই মাদক পণ্য তাদের গন্তব্যে নিতে সক্ষম হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তারা এই মদের বোতল কাটুনে,প্লাস্টিকের বস্তায় ও ব‍্যাগে ভরে রিক্সা, সিএনজি ও সিটি কর্পোরেশনের ময়লার টলিতে করে নিয়ে যায়।ওইসব পাইকারদের মধ্যে  শাঁখারী বাজারের সুকুমার (৫০) বিশু (৪২),গোবিন্দ (৫০) কালী মন্দির এলাকার প্রতিবন্ধী সাগর (৩৫), কেরানীগঞ্জের দেলওয়ার হোসেন দেলু (৪৮),কুদ্দুস (৪৫), রহিম (৪০)ও নারিকেল বাগের পান্না (৫২)সহ অনেকের নাম উঠে এসেছ। এছাড়া এই দোকানের সহকারী ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত সুজন প্রতিদিন সকাল ৭টায় দোকান খোলা মাত্রই ২শ থেকে ৩শ বোতল বাংলা মদ বড়-বড় ফলের কার্টুনে ভরে সিএনজি যোগে বংশালের পাকিস্তান মাঠ এলাকায় নিয়ে নিরাপদে রেখে আসে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক এই দেশি মদের দোকানের লাইসেন্সি মালিক মিন্টু চৌধুরী। তবে পারিবারিকভাবে তার অবর্তমানে দোকানটি তার ভাই রিপন চৌধুরী পরিচালনা করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিন্টু চৌধুরী ও রিপন চৌধুরী আপন ভাই। মিন্টু চৌধুরী ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকারের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর ওই মিন্টু চৌধুরীও গাঁঢাকা দিয়ে আছে। তারা দীর্ঘদিন পর-পর এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসেন। সূত্র জানায়,তারা কর্মচারীদের উপর নির্ভরশীল।ম্যানেজার মকবুলের (৬৫) নেতৃত্বে এই মদের দোকানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যেসব কর্মচারী জড়িত তারা হলেন, সহকারি ম্যানেজার সুজন(৩৮) কর্মচারী আশিক (৪০) মিলন (৪০) মোস্তফা (৬০) মামুন (৪০) সুমন (৩৫) ও লাট মিয়া (৫৬)। জানা গেছে, এসব কর্মচারীদের মধ‍্যে ম্যানেজার মকবুল ও সহকারি ম্যানেজার সুজনই সকল অপকর্মের হোতা। তাদেরকে আইনের আওতায় আনলে সহজেই আসল সত্য বেরিয়ে পড়বে। এই মদের দোকানের আশে-পাশে রয়েছে ছোনঘর বিরানি, সুমন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, মিনার হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, মিম ও সাভার হোটেল,অগ্রণী ব্যাংক- ইসলামপুর শাখা, ঢাকা কাচ্চি ডাইন, কাচ্চি বাড়ি, আল্লাহর দান বিরানি হাউস, ধানসিঁড়ি কাবাব এন্ড পরটা ঘর, আল মোজাদ্দেদ হোটেল সহ ৫০ গজের মধ্যে রয়েছে ৭ তলা বিশিষ্ট গুলশান আরা সিটি মার্কেট জামে মসজিদ সহ একাধিক বহুতল আবাসিক ভবন। এই সড়কে সকাল ৬ টা থেকে শুরু হয় পাইকার আর মাদক সেবীদের আনা-গোনা। তাদের পদচারণায় ওই সড়ক এলাকা ভারী হয়ে ওঠে।সরে জমিনে দেখা গেছে,সকাল  ৭টা থেকে শুরু হয় ওই একাধিক কক্ষ বিশিষ্ট দোকানে বাংলা মদ বেচাকেনা সহ মাদক সেবীদের মদ‍্য পানের প্রতিযোগিতার আসর। এভাবে ধুমধাম করে চলতে থাকে সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত। ওই সময়ে এলাকায় করুন অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।এই পরিস্থিতির জন্য অনেকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করছে। দুপুর ২ টায় মদের দোকান বন্ধ হলে ওই সড়কের খাবার হোটেল ব্যবসায়ী, খদ্দের, আবাসিক ভবন কর্তৃপক্ষ ও ভাড়াটিয়ারা স্বস্তি ফিরে পায়। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই লাইসেন্সি দেশী মদের দোকান মালিকদের কর্মচারীরা দায়িত্বপ্রাপ্ত মাদক পরিদর্শক শাহজালাল কে মোটা অংকের সাপ্তাহিক  টাকা দিয়ে এবং স্থানীয় থানা ও ফাঁড়ি পুলিশকে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এই মাদকের দোকানটি পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইন্সপেক্টর জাহিদ স্যার ২০২৪ সালের এপ্রিলে বদলি হবার পর এই শাহজালাল স্যার আসায় এই মদের দোকানের দুর্নীতি অনিয়ম শতগুণ বেড়ে গেছে। তিনিও নিয়মিত আসেন না। সপ্তাহে একদিন এসে সামনের রুমে বসে কিছু কাগজপত্র ও খাতায় সহি স্বাক্ষর করে  তার সাপ্তাহিক টাকা নিয়ে চলে যান। প্রকৃত অনিয়ম ও অপরাধ সংগঠিত জায়গা (ঘটনাস্থল)  পরিদর্শন করেন না। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে  মনে করছে,এই অসৎ কর্মচারীদের হাতে তৈরি করা  নকল মদ সেবন করে অনেক মাদক সেবীর অকালে প্রাণ হারাবার আশঙ্কা রয়েছে। আর এই অকাল মৃত্যুর দায় আইনগতভাবে ওইসব দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উপর বর্তাতে পারে। ফলে অবৈধভাবে পরিচালিত এই  লাইসেন্সি বাংলা মদের দোকানটি দ্রুত আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জোরালো দাবি তুলেছে এলাকাবাসী। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে দোকান মালিক কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজার  মকবুলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। অপরদিকে দায়িত্বশীল মাদক পরিদর্শক শাহজালালের সাথে মুঠোফোনে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নবজাগরণ পত্রিকার কাছে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, আমি প্রতি মাসে একাধিকবার ওই দোকানে ইন্সপেকশন করি। আমার জানামতে এই মদের দোকানে পারমিটধারী ব্যতীত মদ বিক্রি করা হয় না।