বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন : জাতীয় নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কখন হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য নিজ অবস্থান জানান দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উপর মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও নিজ কর্মী সমর্থকদের সংগঠিত করছে অনেকে। এ ক্ষেত্রে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের চিত্র ভিন্ন। জেলার প্রায় পতিটি ইউনিয়নেই বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আগামী ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছাচ্ছে। জেলার যে কয়টি ইউনিয়নে কখনোই বিএনপি পন্থী ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় নি তার মধ্যে গুয়ারেখা ইউনিয়ন অন্যতম। কিন্তু গুয়ারেখা ইউনিয়নে আগামী ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মধ্যে নেই কোনো উত্তাপ উদ্দীপনা।
বাংলাদেশের জন্ম লগ্ন থেকে এ পর্যন্ত গুয়ারেখা ইউনিয়নের অতীত বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, ২০০৩ সালে জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুল কুদ্দুস শিকদার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রব শিকদার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দায়িত্ব ভার গ্রহনের মাত্র দেড় বছরের মাথায় তার আকস্মিক মৃত্যু হয়। ফলে এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের শুন্য পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের ঐ উপনির্বাচনে এ ইউনিয়ন থেকে জনতার চেয়ারম্যান হিসাবে খ্যাত স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মিজানুর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া অন্য সকল ইউপি নির্বাচনে গুয়ারেখা ইউনিয়নে আওয়ামী সমর্থিত এবং হিন্দু কমিউনিটি থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। রপ্তানিমূখী তৈরী পোশাক ব্যাবসায়ী ও দানবীর গাজী মিজানুর রহমান বর্তমানে গুয়ারেখার ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে সুনামের সাথে জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন। এ ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কোনো নজীর নাই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে দল সমর্থিত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম টাবুল নির্বাচনী মাঠে অবতীর্ণ হন। তৎকালীন বিএনপির প্রভাবশালী এমপি সৈয়দ শহীদুল হক জামালের এপিএস ফকির নাসির উদ্দীন নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সুব্রত ঠাকুরের পক্ষে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাজ করার জন্য নির্দেশ দেয়। এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম টাবুল বলেন, বিএনপির চাকরি করে নাসির ফকির বিএনপির সাথে বেইমানি করেছে। তার বেইমানীর কারণে বিএনপির শাসনামলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হয়েও আমাকে পরাজিত হতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন নাসির ফকির বিগত দিনে আওয়ামী লীগের দালালী করে, জাকের পার্টির রাজনীতি করে আবার বিএনপির সর্বনাশ করার চেষ্টা করছে। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে গুয়ারেখা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুব্রত ঠাকুরের নিকট পরাজয় বরন করেন। ঐ নির্বাচনে তিনি ১৮২০ ভোট পান। কিন্তু ২০২১ সালে তিনি দলীয় নির্দেশ অমান্য করে ঘোড়া মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে মাত্র ২১০ ভোট পেয়ে শোচনীয় পরাজয় বরন করেন। দলীয় নির্দেশ অমান্য করায় তিনি বিএনপির বিরাগভাজন হন।
বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে বোঝা গেছে তাদের মধ্যে হতাশা ভর করেছে। তারা তাদের ইউনিয়ন বিএনপির এই অগোছালো অবস্থার জন্য নেছারাবাদ
উপজেলা বিএনপির ত্রী – বিভক্ত নেতৃত্বকে দায়ী করছেন। তাদের কোনো নজরদারি না থাকার কারণে গুয়ারেখা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে বিভাজন থাকায় তার প্রভাব পড়েছে গুয়ারেখা ইউনিয়ন বিএনপিতে। ফখরুল অনুসারীরা মানছে না অহীদ গ্রুপকে অহীদ গ্রুপ মানছে না সৈকত অনুসারীদের। গুয়ারেখা ইউনিয়ন বিএনপির নেতা কর্মীদের মন্তব্য উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বের বিভাজন দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত তারা দায়দায়িত্ব নিয়ে কোনো সাংগঠনিক কাজে হাত দেবে না।
হিন্দু -মুসলমান সমান সংখ্যক ভোটার অধ্যুষিত এ ইউনিয়নটি আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসাবে পরিচিত। দীর্ঘ দিন বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না থাকায় কর্মী সমর্থকদের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের সাথে হাত মিলিয়েছিল। এ ছাড়াও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইউনিয়ন নেতাকর্মী দক্ষিণের মাফিয়া সম্রাট পিরোজপুর ০২ আসনের পলাতক সাবেক সাংসদ মহিউদ্দিন মহারাজের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে তার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদিকে ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর গুয়ারেখা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কিছুটা চাপের মধ্যে থাকলেও ইউনিয়ন বিএনপির নড়বড়ে অবস্থা দেখে তারাও প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
গুয়ারেখা ইউনিয়ন বাসীর অভিমত আগামী ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার মতো সাংগঠনিক অবস্থান এবং আর্থিক সংগতি গুয়ারেখা ইউনিয়ন বিএনপির কোনো নেতা কর্মীরই নেই। তাই আগামী ইউপি নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নাই। চাপের মধ্যে থাকলে আওয়ামী লীগ সরাসরি ইউপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করতে পারলেও তাদের সমর্থিত প্রার্থী মাঠে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে বিএনপির প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। সার্বিক
পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাবাসী মনে করছে আগামী ইউপি নির্বাচনে গুয়ারেখা ইউনিয়নে জনতার চেয়ারম্যান হিসাবে খ্যাত বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী মিজানুর রহমানই অপ্রতিদ্বন্দ্বী।