স্বরুপকাঠীর নাসির ফকির একই অংগে কতরুপ বিএনপি > আওয়ামী লীগ >জাকের পার্টি কখন কোন দলে বোঝা মুসকিল

বিশেষ প্রতিবেদন : বৈচিত্র্য পূর্ণ রাজনৈতিক রুপ ধারণ করার সব গুনই রয়েছে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার পাটিকেলবাড়ী গ্রামের মাজার ব্যাবসায়ী খ্যাত ফকির নাসির উদ্দীনের। তিনি নিজেকে একেক সময় একেক রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী পরিচয় দিয়ে সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করছেন । তার বিভিন্নমূখী অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পাটিকেলবাড়ী গ্রামের জনসাধারণ এখন “নাসির ফকির হটাও এলাকা বাঁচাও” নীতি অনুসরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, এলাকাবাসীর দেয়া তথ্য এবং নাসির ফকিরের পূর্বের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করে এ বিষেশ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

নাসির ফকিরের পূর্বের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সে কখনোই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। তিনি বিএনপির চাকরি করেছেন মাত্র। সাবেক সাংসদ সৈয়দ শহীদুল হক জামালের সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিলো। ১৯৯১ সালে শহীদুল হক জামাল বানাড়ীপাড়া – স্বরুপকাঠী আাসন থেকে বিএনপি দলীয় সাংসদ নির্বাচিত হলে নাসির ফকির তার এপিএস হিসেবে নিয়োগ পান। জামাল এমপি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান পদে আসীন হলে এ সুযোগে নাসির ফকির রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে একটি চাকরি বাগিয়ে নেন। স্বৈরাচারের দোসর পলাতক সাবেক মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিমের মালিকানাধীন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী তিনি ১৯৯০ সালে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চাকরিতে যোগদান করেন এবং ২০১৭ সালে অবসরে যান। এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় তিনি বিএনপির রাজনীতি করলেন কখন?

২০০১ সালে সৈয়দ শহীদুল হক জামাল পুন:রায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে নাসির ফকির রেডক্রিসেন্ট এর পাশাপাশি তার এপিএস হিসেবে চাকরি করেন। ঐ দুই আমলে নিয়োগ বানিজ্য, নিজ বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে নামে মাত্র কাজ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে বলে জনশ্রুতি আছে। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করায় কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম তাতে রাজী না হওয়ায় তাকে বেআইনি ভাবে বরখাস্ত করে নাসির ফকির। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে চাকরি ফিরে পান তিনি। এগার গ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিতে গিয়ে প্রতিরোধের সম্মুখীন হন নাসির ফকির। তার রোষানলে পড়ে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হান্নান শরীফ বরখাস্ত হন। এলাকায় মাজার ব্যাবসাসহ বিভিন্ন বেআইনি কাজের প্রতিবাদ করায় প্রবীন শিক্ষক মরহুম শাহাদৎ হোসেনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ এ শিক্ষকে বাড়ির নিকট থেকে অনেক দূরে বদলি করে দিয়ে প্রতিশোধ নেয় নাসির ফকির। এলাকার সাধারণ লোকজনকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার পায়তারা করছে নাসির ফকির।

নাসির ফকিরের অতীত বিশ্লেষন করলে দেখা যায় তার অপকর্মের বিরোধিতা করলেই তার উপর নেমে এসেছে নির্যাতনের খরগ। তার অবৈধ হুকুম না মানার কারণে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে হাজত বাস করতে হয়েছে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস শিকদারকে। ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে গুয়ারেখা ইউনিয়নের বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম টাবুলের নিকট থেকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে আওয়ামী দলীয় প্রার্থীর সমর্থন দেয় সে। রফিকুল ইসলাম টাবুল বলেন, বিএনপির চাকরি করে বিএনপির সাথেই সে বেইমানী করেছে। ঐ নির্বাচনে তার বেইমানীর কারণেই আমি পরাজিত হই।

বিএনপির চাকরি করা এই বহুরূপীর রাজনৈতিক কোনো আদর্শ নেই বলে জানিয়েছেন এলাকার বিশিষ্ট জনেরা। তারা জানান বিএনপির সুবিধা নেয়া নাসির ফকির ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ শহীদুল হক জামালের নির্বাচনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
আওয়ামী লীগ জমানায় সে আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রীর দোসর হিসাবে পরিচিত ছিল। সে সংক্রান্ত যুগল ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে জাকের পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। গত ৩ এপ্রিল তার নিজ বাড়ির উঠানে জাকের পার্টির সদস্য সংগ্রহ উপলক্ষে আয়োজিত দাওয়াতী মিশন অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করে জাকের পার্টিকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি। ইতিমধ্যে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করিয়ে পিরোজপুর ০২ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার মনোবাসনা প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে পাটিকেলবাড়ী এলাকার জনসাধারণ বলেন, নাসির ফকির নিজ গ্রামে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মতো ভোটও পাবে না।

নাসির ফকিরের সকল কর্ম ও অপকর্ম তার নিজ গ্রাম পাটিকেলবাড়ীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর নিজেকে বিএনপির লোক পরিচয় দিয়ে স্হানীয় স্কুল কলেজে নিজে এবং তার পুত্রকে দিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। যা জনগণের প্রতিরোধের মুখে ব্যার্থ হয়। তারই ইন্ধনে এলাকার বিএনপি ও এর অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়। এলাকাবাসীর মন্তব্য নাসির ফকির তার নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য পাটিকেলবাড়ী গ্রামে নোংরা রাজনীতির বীজ বপন করতেছে। তাকে এই মুহূর্তে প্রতিরোধ করা না হলে এলাকার জনসাধারণের সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা সম্ভব হবে না। তাই এলাকাবাসী এখন ” নাসির ফকির হটাও এলাকা বাঁচাও” শ্লোগান তুলছে।