আল্ কাফি : পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলার রাজনৈতিক অবস্থা নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে। নেছারাবাদ (স্বরুপকাঠী), কাউখালী এবং ভান্ডারিয়া উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন পিরোজপুর ০২ গঠিত। ভোটার সংখ্যার দিক দিয়ে নেছারাবাদ উপজেলার ভোটার সংখ্যা অন্য দুটি উপজেলার সমষ্টিগত ভোটারের চেয়ে বেশি। ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এ উপজেলায় বিএনপির ত্রী- বিভক্ত নেতৃত্বের কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণহীন। পূনর্বাসন সুবিধা নিয়ে পলাতক আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা সংগঠিত হচ্ছে। পিরোজপুর ০২ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামী তাদের সংসদ সদস্য প্রার্থী চুড়ান্ত করায় তৃণমূল পর্যন্ত তাদের দল ভারী করছে। সাধারণ জনগণের বিরাট একটি অংশ কৌতুহলের সাথে রাজনৈতিক দলের কর্ম কান্ড অবলোকন করছে।
গনঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতনের পরবর্তী সময়ে স্বরুপকাঠী বিএনপিতে সু-সময় থাকলেও ধীরে ধীরে তা দুঃসময়ে রুপ নিচ্ছে। উপজেলা নেতৃত্বের বিভাজনের সুযোগ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা হয়ে উঠছে বেপরোয়া। চাঁদাবাজি, সালিশ বানিজ্য, মাদক কারবার, পুলিশের দালালি, হাট বাজার দখল, সরকারি জায়গার মাটি কেটে বিক্রি, স্কুল মাদ্রাসা কমিটিতে স্হানীয় লোকজনকে গুরুত্ব না দিয়ে এলাকার বাহিরের লোকদের পদে বসানো, মাহফিল করতে বাঁধা সহ বিভিন্ন বদনাম ইতিমধ্যে তাদের ঝুলিতে জমা হয়েছে। স্বরুপকাঠীর জগন্নাথকাঠী কাঁচাবাজারের ব্যাবসায়ীদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় এবং তার বিরুদ্ধে বিএনপির অন্য একটি অংশের প্রতিবাদ করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
০৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির নিজেদের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষ হয়েছে বেশ কয়েকটি। এসব ঘটনায় কয়েকটি মামলাও হয়েছে। মামলা এবং অভিযোগের তথ্য নিয়ে জানা গেছে বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে বিএনপির নিজেদের মধ্যে। অন্যের জায়গা দখলের জন্য ভাড়াটিয়া মাস্তান হিসাবেও কাজ করার অভিযোগ রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ এখই মন্তব্য করতে শুরু করেছে যে, আগামী সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোন ভালো কাজের উছিলায় তারা জনগণের কাছে ভোট দাবি করবে। এদিকে জুলাই -আগস্টের গনহত্যা মামলার আসামীদের ছত্রছায়া দেয়ার প্রমানও রয়েছে উপজেলা বিএনপির বিরুদ্ধে।
০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর স্বরুপকাঠীর উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু বিএনপির এক শ্রেণির অর্থলোভী নেতাকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় সদর্পে অবস্থান করে পলায়নপর আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করছে। ইতিমধ্যে বিএনপির উপজেলা নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে তা প্রচার করে বেড়াচ্ছে নিজ দলের নেতা কর্মীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে স্বরুপকাঠীর গুয়ারেখা, দৈহারী, সমূদয়কাঠী, জলাবাড়ী ও আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নে এখনো আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ঐ সব ইউনিয়নে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থান তাদের ধারে কাছেও নেই। এসব ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীরা চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। এজন্য মূল ধারার বিএনপি নেতাকর্মীরা উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বের বিভাজনকেই দায়ী করছেন। এ সুযোগ ব্যাবহার করে বিএনপি ও এর অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা থানায় জিডি ও মামলা করার সাহস পাচ্ছে।
ইতিমধ্যে পিরোজপুর ০২ আসন থেকে শামীম সাইদীকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা দেয়ায় তাকে ঘিরে স্বরুপকাঠীর জামায়াতে ইসলামী চাংগা হয়ে উঠেছে। সারা দেশব্যাপী জনসংযোগ পক্ষ পালন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গত ২১ এপ্রিল তারা স্বরুপকাঠীর সারেংকাঠী ইউনিয়নে সুধী সমাবেশের আয়োজন করে। উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মোঃ তাফাজ্জল হোসাইন ফরিদ। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর ০২ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শামীম সাইদী। ইতিমধ্যে তারা ঘরে ঘরে জনসংযোগ চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের স্হানীয় নেতাকর্মীরাও জামায়াতে ইসলামে যোগদিয়ে তাদের দল ভারী করছে।
বিএনপি ছাড়া অন্য দুটি দল তাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করার কাজে ব্যাস্ত থাকলেও স্বরুপকাঠীর বিভক্ত বিএনপি রয়েছে নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়া ছুড়িতে ব্যাস্ত। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের অতি উৎসাহী নেতা-কর্মীরা জড়িয়ে পড়ছে নানান অপরাধে। আর দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেয়া ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবহেলা করার কারণে তারাও নিরুৎসাহিত হচ্ছে। বিএনপি সমর্থকদের মন্তব্য নেতৃত্বের বিভাজন ভুলে দলকে সুসংগঠিত করতে না পারলে আগামী সংসদ এবং স্থানীয় নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে।