কে.এ.সাদাত : স্হানীয় সরকারের সকল পদে জনগণের সরাসরি ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে। নইলে জনগণ তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার হারাবে। স্হানীয় সরকার নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে গিয়ে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদ এ কথা বলেন।
গত ২০ এপ্রিল স্হানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৫১ টি প্রস্তাবনা সম্বলিত এ সংক্রান্ত চুড়ান্ত সুপারিশ দাখিল করেন। ঐ সুপারিশ মালায় উল্লেখ করা হয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা
ও সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদে নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটে না করে প্রথমে সদস্য ও কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত করা হবে। পরে নির্বাচিত সদস্য ও কাউন্সিলরদের ভোটে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচন করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে দেশ ব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সচেতন মহলসহ সর্বস্তরের জনগণ এ সুপারিশের বিরোধিতা করতেছে।
নাজমুল ইসলাম সাইদ এ প্রক্রিয়াকে ৬৫ বছর আগের আইউব খানের মৌলিক গনতন্ত্র ব্যাবস্থার সাথে তুলনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, এই সুপারিশ অনেককেই স্মরন করিয়ে দিচ্ছে ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানে চালু হওয়া মৌলিক গনতন্ত্রের কথা। যা ছিল চার স্তর বিশিষ্ট একটি সীমিত গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থা। ঐ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের সরাসরি ভোটের কোনো সুযোগ ছিল না। সেই পরোক্ষে ভোটের ফলাফল ছিল স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করা।
তিনি বলেন সংস্কার কমিশনের এ ধরনের সুপারিশ বাসতবায়ন হলে স্হানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ” কেনা বেচার হাট বসবে”। তার মতে এ সুপারিশ কার্যকর করা হলে স্হানীয় সরকার প্রধানদের কাছে জনগণ তুচ্ছ হয়ে যাবে। যেহেতু জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হবেন না, তাই তাদের কাছে মেম্বার ও কাউন্সিলররা অধিক গুরুত্ব পাবে। এ প্রসংগে তিনি আরো বলেন, মেম্বার ও কাউন্সিলর নির্বাচনের আগেই যারা চেয়ারম্যান বা মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান তারা প্রার্থীদের সাথে আতাত করবেন। তিনি বলেন বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে এ চিত্র দেখা গেছে। যা সুখকর হয়নি। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ধনী ব্যাক্তিরাই সাধারণত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ঐ সকল নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যানকে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে পদ কেনার দৃষ্টান্তও রয়েছে।
সংস্কার কমিশনের দাখিল করা সুপারিশের
সমালোচনা করে নাজমুল ইসলাম সাইদ বলেন, কিছু দেশে এ পদ্ধতি চালু থাকলেও তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাস্তব সম্মত নয়। এটা বাস্তবায়ন করা কঠিন, এতে করে জনগণের হাতে আর নির্বাচন থাকবে না। নির্বাচনে টাকার খেলা হবে। প্রতারিত হবে জনগণ। তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, বর্তমান জেলা পরিষদ নির্বাচন হয় স্হানীয় সরকারের অন্যান্য বডির সদস্যদের নিয়ে। এ নির্বাচনগুলোতে টাকায় বিক্রি হন জনপ্রতিনিধিরা। জনগণ প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায় না। পরোক্ষ ভোটে চেয়ারম্যান মেয়ররা নির্বাচিত হলে জনগনের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে না।
তাই তিনি মনে করেন, এ রকম পদ্ধতিতে মেয়র ও চেয়ারম্যান নির্বাচন ঘটলে তা গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠবে।