জোড়াতালি দিয়ে চলছে সেনবাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত পৌনে চার লাখ মানুষ

নবজাগরণ রিপোর্ট :নোয়াখালী
ব্যুরো:
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে চরম অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও অবহেলার কারণে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রায় পৌনে চার লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটি নানা সংকট ও দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে স্বাস্থ্যসেবার মান রীতিমতো ধ্বংসপ্রাপ্ত।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর ২০২৪ সালে একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এরপর থেকে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও মেশিনটি মেরামত হয়নি। এর ফলে রোগীদের বাধ্য হয়ে আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।

রোগীদের অভিযোগ, এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উচ্চমূল্য আদায় করে থাকে, যা সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। সরকারি হাসপাতালে যদি সেবা না পায়, তাহলে এই হাসপাতালের প্রয়োজনই বা কী?
এ বলে আক্ষেপ করেন এক রোগী।

চিকিৎসক সংকটও চোখে পড়ার মতো। ১০টি অনুমোদিত চিকিৎসক পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। মেডিকেল অফিসার পদে ৯টির বিপরীতে কর্মরত ৬ জন। নার্সের ক্ষেত্রেও ৩০টি পদের মধ্যে মাত্র ২৩ জন কর্মরত আছেন। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিসে আসার সময় নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। ড্রাইভার না থাকায় হাসপাতালের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও বন্ধ।

বেশ কয়েকজন রোগীরা জানান, সন্ধ্যার পর চিকিৎসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোনো ডাক্তার না থাকায় তাদের ২০ কিলোমিটার দূরের জেলা শহরে ছুটতে হয়। প্রয়োজনীয় ইসিজি ও ডেন্টাল যন্ত্রপাতির অভাবে অনেক সময় জরুরি চিকিৎসাও দিতে পারেন না কর্মরত নার্স ও চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ওষুধ ও জনবল ছাড়া চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। কখনো কখনো নিজের পকেট থেকে ওষুধ কিনে দেই রোগীদের।

স্বাস্থ্যসেবায় চরম জনদুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাদিয়া আফরোজ বলেন, জনবল ও মেশিন সচল করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।

সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই চিত্র শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং দেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার সার্বিক দুর্দশার প্রতিচ্ছবি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, না হলে বিপর্যয় আরও গভীর হবে।
সবার একটাই অনুরোধ-সরকার নজর দিন।