মো: আবু তাহের পাটোয়ারী।।
সাম্প্রতিক একটি ভয়াবহ ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে নৈতিক অবক্ষয়ের ফলে নারী কিংবা পুরুষ—কেউই নিরাপদ নয়, এবং কেউই অপরাধের ঊর্ধ্বে নয়।
ঢাকার অভিজাত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সক্রিয় একটি নারীচক্র এমন এক ঘৃণ্য কাজ চালিয়ে আসছিল, যা সভ্য সমাজে কল্পনাও করা কঠিন। চক্রটি পুরুষদের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে, গোপনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করত। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করা হতো। শুধু তাই নয়—এই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা। এমন একটি পেশাদার অপরাধচক্র দীর্ঘ সময় ধরে গোপনে এভাবে কাজ করে গেছে, তা ভাবলে গা শিউরে ওঠে।
এখন পর্যন্ত দুইজন নারী গ্রেপ্তার হয়েছে, বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।
এই ঘটনায় আমাদের সমাজের একাধিক দিক সামনে চলে এসেছে।
প্রথমত, মেয়েরা যে কেবল দুর্বল বা নির্যাতিত হয়—এই প্রচলিত ধারণা ভেঙে দিয়েছে এই ঘটনা। অপরাধী যদি নারীও হয়, তবে তাকেও আইনের আওতায় আনতেই হবে। নারী অধিকার মানে দায়মুক্তি নয়, সমান দায়িত্ব ও বিচার নিশ্চিত করাও।
দ্বিতীয়ত, যারা ফাঁদে পড়েছে, তাদের দিক থেকেও দায় অস্বীকার করা যায় না। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে নিজের সীমা ও মূল্যবোধ বোঝা জরুরি। অজানা বা সন্দেহজনক কারও সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সময় যদি সাবধান না হওয়া হয়, তাহলে তার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ। এই ক্ষেত্রে ছেলেটিও ভুল করেছে, কারণ সে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছে—যদিও তার ভুলের শাস্তি এইভাবে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে হওয়া কখনই ন্যায্য নয়।
তবে এ কথাও ভুলে যাওয়া উচিত নয়—প্রলোভন তৈরি করা, পরিকল্পিতভাবে ভিডিও ধারণ করে তা বাজারজাত করা, মানসিক ও আর্থিকভাবে কাউকে জিম্মি করা—এসব ঘৃণ্য অপরাধ। যারা এই ঘৃণ্য কাজ করেছে, তারা কেবল নারী নয়, কুলাঙ্গারও বটে। এ ধরনের অপরাধীরা সমাজের জন্য বিষফোঁড়া।
এমন ঘটনায় কেবল আইনি ব্যবস্থা নিলেই হবে না, দরকার সামাজিক সচেতনতা এবং পারিবারিক শিক্ষা। প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে শেখাতে হবে— কোথায় থামতে হয়, কার উপর আস্থা রাখা যায় না, এবং অনৈতিক আমন্ত্রণের জালে পা না দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখাটা কতটা জরুরি।
আসুন, আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি-
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের নৈতিক অবক্ষয় থেকে হেফাজত করো। আমাদের চোখ, কান ও হৃদয়কে হালাল ও পবিত্র পথে রাখো। আমাদের এমন সঙ্গ দিও, যারা ভালো কাজের দিকে ডাকে; এবং এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করো, যা আমাদের ঈমান ও ইজ্জত দুটোই ধ্বংস করে দেয়।
সতর্ক থাকুন। সচেতন হোন। এবং সমাজকে রক্ষা করতে নিজের দায়িত্ব পালনে পিছপা হবেন না।