বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস- স্বাধীন সাংবাদিকতার শেকড় এবং প্রয়োজনীয়তা

মো: আবু তাহের পাটোয়ারী।।
প্রতিবছর ৩ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস (World Press Freedom Day)। জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালে এ দিনটিকে স্বীকৃতি দেয় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বানে, সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, যারা তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারের পথে জীবন উৎসর্গ করেছেন। দিনটির মূল লক্ষ্য হলো মানুষের তথ্য জানার অধিকারকে সুরক্ষিত করা এবং স্বাধীন ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে উৎসাহিত করা।

গণমাধ্যমের ভূমিকা ও গুরুত্ব
গণমাধ্যম সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। এটি রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন সংবাদপোর্টাল আমাদের চারপাশের ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। যখন গণমাধ্যম মুক্ত থাকে, তখন সমাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়।

স্বাধীন গণমাধ্যম জনগণের কণ্ঠস্বর। এটি অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং জনগণের মতপ্রকাশের অধিকারকে জোরালোভাবে তুলে ধরে। কিন্তু আজও বহু দেশে সাংবাদিকরা হুমকি, নির্যাতন, সেন্সরশিপ এবং হত্যার শিকার হচ্ছেন।

দিবসটির তাৎপর্য
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস শুধু একটি তারিখ নয়, এটি হলো সচেতনতার দিন;যে দিন আমরা ভাবি, কেমন গণতন্ত্র চাই? কেমন সমাজে বাস করতে চাই? এটি মনে করিয়ে দেয় যে, সত্য বলার স্বাধীনতা মানেই একটি সুস্থ রাষ্ট্র কাঠামোর পূর্বশর্ত।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (UNESCO) এ দিবসে বিশ্বব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য (theme) নিয়ে দিবসটি উদযাপিত হয়, যার মাধ্যমে গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশে বিগত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিক সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করে স্বাভাবিক ও স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করে সাংবাদিকতার জন্য একটা কালো অধ্যায় সৃষ্টি করেছিল।
৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবে ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক বিজয়ের মধ্যদিয়ে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে মুক্ত অপরিহার্য স্বাধীন মত প্রকাশের সকল বাঁধা দূর করে কায়েক করেন মুক্ত সাংবাদিকতা।

বাংলাদেশে গণমাধ্যম খাত সম্প্রসারিত হলেও স্বাধীনতার দিক থেকে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সাংবাদিকদের হয়রানি, মামলা, গ্রেপ্তার এবং সেন্সরশিপ এখনো একটি বাস্তবতা। তবে আশার কথা হলো, তরুণ প্রজন্ম সচেতন এবং সোচ্চার। প্রযুক্তির বিকাশ এবং সামাজিক মাধ্যমের কারণে এখন তথ্য লুকিয়ে রাখা কঠিন। তাই আরও প্রয়োজন নীতিগত সহায়তা, সুরক্ষা আইন, এবং একটি দায়বদ্ধ গণমাধ্যম পরিবেশ।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানেই কেবল সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নয়, এটি জনগণের জানার অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা। ৩ মে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সত্য বলার সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের প্রাণ। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সচেতন হই, এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় পাশে থাকি।