মহারাজের দোসর আব্দুল হকের গোপন মিশনে সংগঠিত হচ্ছে নেছারাবাদ আওয়ামী লীগ, নিরব দর্শকের ভূমিকায় বিএনপি

আল্ কাফি : বিএনপির অজান্তেই পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার আওয়ামী লীগ সংগঠিত হচ্ছে। আর এ সংগঠিত হওয়ার নেপথ্যে ভুমিকা পালন করছে নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক। পলাতক মাফিয়া সম্রাট পিরোজপুর ০২ আসনের সাবেক সাংসদ মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজের দোসর হিসাবে তার পরিচিতি রয়েছে। ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে চলে গেলেও আব্দুল হক এলাকায় বুক চিতিয়ে অবস্থান করে। তখন এলাকায় চাউর হয়ে যায় উপজেলা বিএনপির কতিপয় প্রভাবশালী শীর্ষ নেতার ছত্র ছায়ায় মোটা অংকের বিনিময়ে আব্দুল হক বিএনপির পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় এলাকায় অবস্থান করতেছে। জনমনে সমালোচনা শুরু হয় স্হানীয় বিএনপির কতিপয় নেতার সাথে আব্দুল হক আতাত করে নেছারাবাদ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে এলাকায় ফিরিয়ে এনে স্ব – পদে বহাল করান। তাদের মধ্যে সুটিয়াকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান মৃত্যু বরন করেন। আটঘর কুড়িয়ানা ইউপি চেয়ারম্যান হত্যা মামলা এবং সমূদয়কাঠীর ইউপি চেয়ারম্যান চাঁদাবাজি মামলায় আসামি হয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। কিন্তু আব্দুল হক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ব্যাবহার করে অপকর্ম করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

মহারাজ লীগের দোসর খ্যাত আব্দুল হকের অতীত বিশ্লেষন করলে দেখা যায় ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনে সুটিয়াকাঠীর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী ঘরনার হয়েও কৌশল অবলম্বন করে দলীয় কোনো পদ পদবি গ্রহন করে নি। ৪ র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি নেছারাবাদ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর নিকট হেরে যান। ৫ ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা মার্কার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: মুহিদুল ইসলাম মুহিত এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিএনপি ঐ নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করায় আব্দুল হক বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিএনপির সাথে আতাত করে তাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাগিয়ে নেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মুহিত বিরোধীদেরও টাকার বিনিময়ে নিজের দলে ভিড়িয়ে ঐ নির্বাচনে বিজয়ী হন। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার কারণে উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা তাঁকে পাত্তা দিতেন না বলে তাঁর নিজ মুখ থেকেই শোনা গেছে। এছাড়াও পিরোজপুর ০১ আসনের সাবেক সাংসদ এ.কে.এম.এ আউয়াল ও সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ শ.ম.রেজাউল করিমের বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। কিন্তু বিপুল অর্থ ব্যায় করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের স্হানীয় পর্যায় একটি অবস্থান গড়েন তিনি।

টাকার বিনিময়ে অর্জিত ব্যাক্তি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর ০২ আসনের সাবেক সাংসদ মাফিয়া সম্রাট মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় নামেন তিনি। নেছারাবাদ উপজেলায় মহারাজের কয়েকশত কোটি টাকা খরচের দায়িত্ব থাকে তার হাতে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন না করায় তাদের একটি বৃহৎ অংশকে মহারাজের পক্ষে নির্বাচন করাতে আব্দুল হক মূখ্য ভূমিকা পালন করে। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি অংশ দলীয় নির্দেশনা মেনে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করে। অন্য একটি অংশ বিদ্রোহী/ স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে জোড়ালো ভাবে অবস্থান করে। আওয়ামী লীগের এই বিদ্রোহী গ্রুপটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আব্দুল হক। তার মাধ্যমেই মহারাজের এলজিইডির লুটের টাকা ভোটার ও প্রশাসন ম্যানেজ করতে ব্যায় হয়েছে। ঐ একতরফা নির্বাচনে মহারাজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৬ ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল অর্থ ব্যায় করে সংসদ নির্বাচনে মহারাজের চায করা মাঠ ব্যাবহার করে আওয়ামী লীগের নেছারাবাদ উপজেলা সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহিদুল ইসলাম মুহিতকে পরাজিত করে আব্দুল হক পুনরায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেসারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগ বিভক্ত হলেও ০৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে একাট্টা হচ্ছে তারা। উপজেলা আওয়ামী লীগ সংগঠিত করার কর্মসূচী চলমান। ০৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে বিএনপির ছত্র ছায়ায় থাকা আব্দুল হক আওয়ামী লীগ সংগঠিত করার দায়িত্ব পালন করছেন। তাকেই আওয়ামী লীগ এ সময় যোগ্য মনে করছে। আব্দুল হকের মাধ্যমে সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে উভয় দলের নেতা কর্মীর পকেটেই টাকা ঢুকেছে। তাই আব্দুল হকের বিরুদ্ধে চোখ তুলে তাকাতে গেলেই তাদের নগদ টাকার কথা মনে পড়ে যায়। আর এ সুযোগটিই আব্দুল হক ব্যাবহার করছে। যেখানে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজী, হাট বাজার দখল, সালিশ বানিজ্য, ইউপির প্রকল্প ভাগ বাটোয়ারা, নিজেদের মধ্যে হামলা মামলা, কাঁদা ছোড়া ছুড়িতে ব্যাস্ত সেখানে আব্দুল হকের গোপন মিশনে নেছারাবাদ আওয়ামী লীগ সংগঠিত হয়ে অচিরেই তাদের শক্তি প্রদর্শন করবে বলে বিজ্ঞ মহল মনে করছে। বিএনপির একটি মহলের ধারণা নগদ সুবিধার বিনিময়ে আব্দুল হককে যে পুনর্বাসন সুবিধা দেয়া হয়েছে তা আত্মঘাতী। অচিরেই এর ফল বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে বিএনপির দিকে।