রিপাবলিক বাংলা চ্যানেলের অপেশাদার সাংবাদিকতা ও সাম্প্রদায়িক উসকানি- বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার নেপথ্য সত্য

: আবু তাহের পাটোয়ারীঃ

বিগত ১৬ বছর যাবত ভারত লুটপাট অসম অন্যায্য চুক্তিবদ্ধ ও অবিচার হত্যা গুম খুন করে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিক অপরাধ দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে জড়িত ছিলো।ছাত্র জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলনে চব্বিশের বিপ্লবে ৫ আগস্ট বাধ্য হয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে ভারতীয় মিডিয়া মাজাকোমর বেঁধে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়ে।
সম্প্রতি কলকাতার সংবাদমাধ্যম ‘রিপাবলিক বাংলা’-এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচারের গুরতর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে একদল সচেতন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ চ্যানেলটির অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের দাবি, এই চ্যানেলের সাংবাদিক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ দীর্ঘদিন ধরে সংবাদ পরিবেশনের নামে একের পর এক ভিত্তিহীন তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছেন, যার উদ্দেশ্য স্পষ্টতই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক বিনষ্ট করা।

চ্যানেলটির সম্প্রচারে বারবার লক্ষ্য করা গেছে, বাংলাদেশের স্বনামধন্য ব্যক্তি, সংস্থা ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতা নিয়ে বিভ্রান্তিকর, উস্কানিমূলক ও অপমানজনক বক্তব্য। এতে শুধুমাত্র সাংবাদিকতার মৌলিক নীতিমালাই লঙ্ঘিত হয়নি, বরং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং জনসচেতনতাকেও করা হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

বিশেষ করে ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের কিছু প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তার কথাবার্তা ও উপস্থাপনায় এমন ভাষা ও ভঙ্গিমা ব্যবহার করা হয় যা মুসলিম বিদ্বেষ উসকে দেয় এবং বাংলাদেশকে একটি উগ্রপন্থী, অস্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু সাংবাদিকতার অপমান নয়, বরং একটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও সম্মানকে অপমান করার শামিল।

বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। এই সম্পর্ক নানাভাবে দুই দেশের সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কূটনীতি ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অথচ এমন একটি সময়েই যখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, তখন একটি ভারতীয় গণমাধ্যমের এমন অনভিপ্রেত আচরণ উভয় দেশের জন্যই বিব্রতকর।

গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তার দায়িত্ব সত্য, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করা। অথচ রিপাবলিক বাংলা ও এর কিছু সাংবাদিক সেই দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা, ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সেই সঙ্গে গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষের উচিত অপেশাদার, উসকানিমূলক ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের দায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া, যেন ভবিষ্যতে কেউ এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখাতে সাহস না পায়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্প্রীতির যে বন্ধন রয়েছে, তা কোনো গুজব, মিথ্যাচার বা উসকানিমূলক প্রচারের মাধ্যমে ধ্বংস করা যাবে না। উভয় দেশের সচেতন নাগরিকদের উচিত এই ধরনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে একসঙ্গে রুখে দাঁড়ানো।সঠিক ন্যায্য ও যৌক্তিক সাংবাদিকতার মান সচলায়তনের মূল উদ্দেশ্য সঠিক পথে পরিচালিত করা।