নোয়াখালীর মাইজদীতে সরকারি জমি দখলে প্রভাবশালীদের রাজত্ব! প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা, নাগরিক দুর্ভোগে বিপর্যস্ত জনজীবন

আকবর হোসেন সোহাগ | মাইজদী, নোয়াখালী।

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে চলছে সরকারি জমি দখলের মহোৎসব! প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় দিনে-দুপুরে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন, মার্কেট, দোকানপাট—সবই সরকারি জমির ওপর। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, শত শত কোটি টাকার সরকারি সম্পদ বেদখলে চলে গেছে।

তথ্য বলছে:
জেলা প্রশাসনের পুরাতন রেকর্ডে অন্তত ৪৭টি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি বর্তমানে দখলদারদের কবলে।
শহরের প্রধান সড়কসংলগ্ন অন্তত ২৮টি সরকারি জায়গা বাণিজ্যিক স্থাপনায় রূপ নিয়েছে।
ভুমিদস্যুদের তালিকায় নাম রয়েছে কিছু রাজনৈতিক পরিচয়ধারী প্রভাবশালী, সাবেক জনপ্রতিনিধি, এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর আত্মীয়দেরও।

স্থানীয় এক সচেতন নাগরিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মাইজদী শহরে একটা ইঞ্চি জায়গাও কেউ সরকারের অনুমতি ছাড়া ঘর তুলতে পারে না—তবে এখানে কোটি কোটি টাকার স্থাপনা গড়ে উঠছে দিনের আলোয়! নিশ্চয়ই এর পেছনে প্রশাসনের কেউ না কেউ জড়িত।”

জলাবদ্ধতা: উন্নয়ন না হয়ে হয়ে উঠেছে দুঃস্বপ্ন
সামান্য বৃষ্টিতেই পানির নিচে তলিয়ে যায় শহরের প্রধান রাস্তাগুলো। সরকারি নথি অনুযায়ী শহরে ৩২ কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইন থাকলেও তার সিংহভাগই ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে। খাল, বিল ও নালা দখল হয়ে যাওয়ার কারণে পানিনিষ্কাশন এখন প্রায় অচল।

বৃষ্টির একঘণ্টা পরেই মাইজদী জিরো পয়েন্ট থেকে সুধারাম মডেল থানার সামনে পর্যন্ত হাঁটুপানি—এটাই এখন নিয়মিত চিত্র।

প্রশাসনের ভূমিকাই প্রশ্নবিদ্ধ:
জেলা ভূমি অফিসে জমি দখলের অন্তত ১৯টি লিখিত অভিযোগ রয়েছে, যার অধিকাংশেই ‘প্রক্রিয়াধীন’ বলে ফাইল ঝুলে আছে।
পৌর কর্তৃপক্ষ দখলদারদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা ‘চিহ্নিত দখলদারদের ছুঁতে পারে না। কারণ—তাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ‘ছাতা’ অনেক বড়।

নোয়াখালীবাসীর প্রশ্ন—এই দখল আর দুর্ভোগ বন্ধ হবে কবে?
প্রশাসনের নীরবতা কি শুধু ব্যর্থতা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর কোনো লেনদেনের গন্ধ?

এখন সময় এসেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির মুখোমুখি করার। মাইজদীর ভবিষ্যৎ রক্ষায় দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে শহর শুধু অযোগ্য নয়, অযোগ্যতার প্রতীকে পরিণত হবে।