হাসনাত আব্দুল্লাহ’র উপর হামলা- নেপথ্যের অন্ধকার রাজনীতি ও বিপ্লবীদের সামনে কঠিন বাস্তবতা

নবজাগরণ রিপোর্ট :
গাজীপুরে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর উপর হামলার ঘটনা গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কে করলো, কেন করলো—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজও অধরা। হামলাকারীরা অধরাই রয়ে গেছে, আর যারা প্রশ্ন তোলে, তারাই আজ কাঠগড়ায়।

একটি সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী বিপ্লবী আন্দোলনের কণ্ঠস্বর ছিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তার মত একজন সংগঠকের উপর এমন হামলা শুধু ব্যক্তি নয়—একটি রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপরই যেন আঘাত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত, এবং এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, বিভ্রান্তি ও ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা।

বিপ্লবীরা প্রশ্ন তুলছেন:
“আজ যারা হামলা করছে, তারা কারা? কাদের হয়ে মাঠে নেমেছে?”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, অনেকে দেশেও নেই, তাহলে কার ছত্রছায়ায় এই হামলা? আর বিচার করবে কে? এই প্রশ্নগুলো নিছক বিক্ষুব্ধ হৃদয়ের নয়—এগুলো বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ করে।

এর আগে একই ধরণের হামলার শিকার হয়েছিলেন হান্নান মাসুদ । ভাগ্যবশত দুজনেরই গাড়ি বুলেটপ্রুফ হওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেছেন, কিন্তু সন্ত্রাসীরা কী বার্তা দিতে চেয়েছে, তা বোঝা গেছে স্পষ্টভাবেই।

রাজনীতির নির্মম অঙ্ক ও বিপ্লবীদের ভুল হিসেব

৫ আগস্টের ঘটনার পর অনেকেই বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। অথচ প্রশ্ন হলো—বিএনপি কি তখন তাদের বিরুদ্ধে ছিল? আজ তারা পাশে নেই, সেটাই তো স্বাভাবিক। কারণ, রাজনীতিতে চিরস্থায়ী বন্ধু বলে কিছু নেই—আছে কৌশল, স্বার্থ আর সময়োপযোগী অবস্থান।
বিপ্লবীরা যদি মনে করেন, আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার পর একইভাবে বিএনপিকেও দমন করবেন, তারপর জামাতকে—তবে সেটি হবে আত্মঘাতী।
রাজনীতির পথ একসাথে গিলে ফেলার নয়, ধাপে ধাপে এগোতে হয়—সচেতনভাবে, কৌশলী পদক্ষেপে।

অভিভাবকহীন বিপ্লব ও নেতৃত্বহীনতার খেসারত
আজ যারা বিপ্লবের কণ্ঠস্বর তুলে ধরছেন, তাদের অনেকেই অভিভাবকহীন, পরিকল্পনাহীন ও মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন। সময় এসেছে মাটিতে পা রাখার, বাস্তবতা মেনে নেওয়ার, মাঠের ডাটা বিশ্লেষণ করে ভারসাম্যপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার। এখন আর বিপ্লব নয়—দায়িত্বশীল পরিবর্তনই সময়ের দাবি।

হাসনাত আব্দুল্লাহ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন—তিনি একটি বার্তা, একটি প্রতীক, একটি সম্ভাবনার নাম। তাই তার মতো সম্ভাবনাময় উদিয়মান ব্যক্তিকে এভাবে লক্ষ্যবস্তু বানানো মানে একটি দিকনির্দেশনা, একটি চেতনার উপরই আঘাত হানা।

রাজনীতিতে সহনশীলতা ফিরুক
আজ যখন বিএনপির অনেক ভাই এ ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করছেন, তখন প্রশ্ন উঠে—আপনারা কতটা আলাদা আওয়ামী দমননীতির কাছ থেকে? সহিংসতা আর প্রতিশোধ যদি রাজনীতির ভাষা হয়, তবে গণতন্ত্র সেখানে কেবল মুখোশ।
আমরা চাই, রাজনীতিতে ফিরুক সহনশীলতা, পরস্পরের প্রতি সম্মান, এবং গণতান্ত্রিক চর্চা। কারণ, গণতন্ত্র মানে একমতের পাশাপাশি ভিন্নমতেরও অধিকার।

শেষ কথা:
এখন সময় আবেগ নয়, কৌশলের। সময় এসেছে বলার আগে ভাবার, প্রতিপক্ষ নয়, দেশের ভবিষ্যতকে মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
NCP এবং অন্যান্য বিপ্লবী প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি আহ্বান—মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা বুঝুন, ডাটা সংগ্রহ করুন, দিশা তৈরি করুন। কারণ সামনে কঠিন আরো কঠিন সময় আসছে। বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, আওয়ামী লীগও প্রস্তুতি নিচ্ছে—আপনারা থাকবেন কোথায়- চমৎকার সময় ও সুযোগ ঘুরে দাঁড়ানোর?