মো: আবু তাহের পাটোয়ারী।।
সম্প্রতি পাকিস্তান ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি (১৯৭২) বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণায় কেউ কেউ উদ্বিগ্ন হলেও, এখন সময় এসেছে বাস্তব সত্যটা বোঝার-এটা শুধু কাশ্মীর নয়, বাংলাদেশের ইতিহাস ও আত্মত্যাগকেও স্পর্শ করে।
শিমলা চুক্তি-একটি চুক্তি, একটি প্রতারণা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর, পাকিস্তানি বাহিনীর ৯০ হাজারের বেশি সৈন্য ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। সেই বিরল কূটনৈতিক ও সামরিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের সাথে ‘শিমলা চুক্তি’ করে।
এই চুক্তিতে ভারত পাকিস্তানকে “ক্ষমা” করে বন্দিদের ফেরত পাঠায়। বিনিময়ে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীর ইস্যু না তোলার প্রতিশ্রুতি দেয়। এইভাবেই ভারত কৌশলে কাশ্মীরকে প্রায় স্থায়ীভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
এই ইতিহাসের সবচেয়ে তিক্ত সত্য হলো-ভারত নিজের স্বার্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছে।
একদিকে বাংলাদেশের লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, আরেকদিকে সেই বিজয়ের ঢাল বানিয়ে ভারতের ভূরাজনৈতিক সাফল্য।
বাংলাদেশের অবস্থান-নীরব দর্শক, উপেক্ষিত আত্মত্যাগ
এই চুক্তিতে বাংলাদেশের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। অথচ যুদ্ধ হয়েছিল আমাদের মাটিতে, আমাদের রক্তে, আমাদের ঘরবাড়ি জ্বলে ছারখার হয়েছিল। তবুও সেই যুদ্ধের ন্যায্য বিচার তো দূরের কথা, ভারত তখন পাকিস্তানের সাথে “বন্ধুত্ব” পাতায়।
স্পষ্ট ভাষায় বললে, মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে ব্যবহার করে ভারত নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করেছে-আমাদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগও দেওয়া হয়নি।
আজকের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা
পাকিস্তানের এই শিমলা চুক্তি বাতিল কাশ্মীর ইস্যুতে নতুন আন্তর্জাতিক আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এটি হুমকি নয়-বরং এটি একটি মূল্যবান শিক্ষা।
এই ঘটনা নতুন করে এই প্রজম্মকে আবারও মনে করিয়ে দেয়, কিভাবে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে “মুক্তির সংগ্রাম” নামেও ছোট জাতিগুলোর আত্মত্যাগকে পণ্য করে তোলা হয়।
ভারতীয় চেতনার ব্যবসা আর নয়
আজ আমাদের বুঝতে হবে-মুক্তিযুদ্ধ কেবল একটি ইতিহাস নয়, এটি আমাদের আত্মপরিচয়।
কিন্তু সেই চেতনার প্রথম ব্যবসা শুরু করেছিল ভারত, এবং সেই চেতনা দিয়েই তারা অর্জন করেছিল কাশ্মীরের দখলের নৈতিকতা।
আজ যখন শিমলা চুক্তি বাতিল হচ্ছে, আমাদের তা উদযাপন বা আতঙ্ক নয়-বরং স্মরণ করা উচিত, আর যেন কেউ আমাদের রক্তকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার না করতে পারে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্ব, আর সেই গর্বকে পাহারা দেওয়ার সময় এখনই; ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ।