মো: আবু তাহের পাটোয়ারীঃ
জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক বাস্তবতা মেনেই আগামীর নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মধ্য রাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের সামনে জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে।
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংক্রমণের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে—রাজনৈতিক সংস্কার, গণতন্ত্রের ভিত শক্ত করা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। এমন একটি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের বক্তব্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিকাব আয়োজিত এক আলোচনায় রাষ্ট্রদূত মিলার স্পষ্টভাবে বলেন, “জুলাই মাসে সংঘটিত গণহত্যার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিল, তাদের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচারের আওতায় আনতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধ কোনোভাবেই মাফযোগ্য নয়।” এ বক্তব্য শুধু একটি নীতিগত অবস্থান নয়, বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি—বাংলাদেশ যেন ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার পথে এগিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের সময় নির্ধারণে চাপ সৃষ্টি করবে না। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণই গ্রহণ করবে। এ অবস্থান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের ভূমিকা নিশ্চিত করার একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেয়।
ইইউ রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে বিশেষভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে শুরু হওয়া রাজনৈতিক সংস্কারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। তাঁর মতে, এই সংস্কার কাজকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। বিশেষ করে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যেভাবে পরিবর্তনের ঢেউ বইতে শুরু করেছে, তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আশার আলো জাগিয়েছে।
ড. ইউনূস, যিনি বিশ্বব্যাপী নন্দিত একজন ব্যক্তিত্ব, তাঁর নেতৃত্বকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে একটি শতভাগ গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করার এ সুযোগ সম্ভবত আর কোনোদিন আসবে না। তাঁর ব্যক্তিত্ব, গ্রহণযোগ্যতা এবং দূরদর্শিতা বাংলাদেশের জন্য এক অতুলনীয় সম্পদ।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রের ভেতরে যে জাগরণ শুরু হয়েছে—বিশেষ করে ৫ আগস্টের বিপ্লব, তা নিছক একটি আন্দোলন নয়; বরং তা দেশের ভবিষ্যতের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ কিন্তু দৃঢ় অবস্থান ছিল এই বিপ্লব। একে ‘মহা সুযোগ’ হিসেবে কাজে লাগিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
আজ জাতির সামনে যে প্রশ্ন—এই সুযোগ আমরা কাজে লাগাব তো? রাজনৈতিক দলগুলো কি নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে একটি মানবিক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে? আন্তর্জাতিক সমাজ পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত, জনগণ জেগে উঠেছে, নেতৃত্বে রয়েছেন একজন অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব—এখন সিদ্ধান্ত নেবার পালা আমাদের।
এ যেন এক বিরল মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও উন্নয়নের পথে একটি নবযাত্রার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ।