: আবু তাহের পাটোয়ারীঃ
দক্ষিণ এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এখন অস্বাভাবিক অস্থিরতা চলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক যৌথ অভিযান শুরু করা হয়। সেই অভিযানে ব্যবহার করা হয় ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তির ৭০টি সামরিক ড্রোন, যেগুলো আকাশপথে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে টার্গেট আঘাত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অবাক করা ঘটনা-সেই সব ড্রোন পাকিস্তান ও মিত্র চীনের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে ধ্বংস হয়ে যায়।
মোদী-নেতানিয়াহু জোটের ‘টেকনোলজি ওভারকনফিডেন্স’
মোদী সরকার ভেবেছিল, ইসরায়েলের প্রযুক্তি আর ভারতের সংখ্যাধিক্য মিলিয়ে তারা পাকিস্তানের ওপর দ্রুত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান আগেই চীন ও তুরস্কের সহায়তায় একধরনের “Electronic Warfare Shield” প্রস্তুত করে রেখেছিল, যার ফলে ড্রোনগুলোর নির্দেশনা বিচ্যুত হয়, বহু ড্রোন মাঝপথেই ধ্বংস হয়। ৭০টির মধ্যে প্রায় সবগুলোই টার্গেটে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।
এই পরাজয়ে ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যকার গোপন সামরিক চুক্তির দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এতে দুই দেশের কূটনৈতিক অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক মহলে মোদী ও নেতানিয়াহু-দুজনেই রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়ে যান।
জম্মু-কাশ্মীরের দখল ও শিমলা চুক্তির পতন
এই যুদ্ধ ও প্রযুক্তিগত পরাজয়ের সুযোগে পাকিস্তান দ্রুত কাশ্মীর সীমান্তে আক্রমণ করে এবং ভারতের সামরিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে উপত্যকার চারদিক থেকে ভারতীয় সৈনিকদের ঘিরে ফেলে গ্রেফতার করে একটি বিশাল অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়েই কার্যত ১৯৭২ সালের ভারত-পাকিস্তান শিমলা চুক্তি স্থগিত হয়ে যায়। পাকিস্তান এখন প্রকাশ্যেই এই চুক্তিকে “প্রতারণার দলিল” বলে ঘোষণা করে তার কার্যকারিতা অস্বীকার করছে। ফলে এই প্রতারণামূলক চুক্তির ব্যর্থতার দায়ও এখন ভারতের কাঁধে। কূটনীতিকদের মতে, ভারতকে এখন কেবল সামরিক নয়, কূটনৈতিক পরাজয়ও মেনে নিতে হবে।
বাংলাদেশের করণীয়: পারাক্কা বাঁধ ও সীমান্ত নিরাপত্তা
ভারতের ভেতরকার অরাজকতা ও আন্তর্জাতিকভাবে কোণঠাসা অবস্থান বাংলাদেশের জন্য এক কৌশলগত সুযোগ তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গার প্রবাহ রোধ করে রাখার কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ভুগছে পানির সংকটে, আর বর্ষায় সৃষ্ট হয় ভয়াবহ বন্যা। পারাক্কা বাঁধ এখন শুধু একটি প্রযুক্তিগত বাধা নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও প্রাণ-প্রকৃতির বিরুদ্ধে এক সরাসরি হুমকি।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই পারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে কঠিন বার্তা দিতে হবে। সময় এসেছে, পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবি তুলে ধরা এবং সীমান্তে বিএসএফ-এর আগ্রাসন প্রতিরোধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার।
বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?
ভারত ও ইসরায়েলের পরাজয়, কাশ্মীরের পতন এবং সীমান্ত অস্থিরতার এ সময়ে বাংলাদেশকে আর কূটনৈতিক সৌজন্যের আড়ালে থেকে চলবে না। সময় এসেছে শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণের। দেশের নিরাপত্তা, নদীর অধিকার ও জনগণের জীবিকা রক্ষায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাহসী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপই ইতিহাস গড়ে।