মো: আবু তাহের পাটোয়ারী :
দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ে, যখন উপমহাদেশের বৃহৎ রাষ্ট্র ভারত তার সামরিক শক্তিকে কূটনৈতিক সংলাপের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। সাম্প্রতিক পহেলগাঁও হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তা কেবল পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তির ভিত্তিমূলেই আঘাত।
পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। তবে কোনো সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত যে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তা ছিল অগ্রহণযোগ্য। পাকিস্তান যখন আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল, তখন ভারত তাতে রাজি না হয়ে সরাসরি “অপারেশন সিন্ধুর” নামক সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে নিহত হয়েছেন সাধারণ বেসামরিক নাগরিক, শিশু এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ের লোকজন।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি “প্রতিরক্ষামূলক প্রতিশোধ”। কিন্তু প্রতিরক্ষা কখনও নিরীহ মানুষের রক্ত দিয়ে হয় না। এই আক্রমণ ছিল একতরফা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত।
এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরান ও সৌদি আরব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে, ভারত তখন যুদ্ধবিরতির পরও হুমকির ভাষায় বলেছে, “এটি যুদ্ধের বিরতি মাত্র, শেষ নয়।” একদিকে ভারত শান্তির কথা বলে, অন্যদিকে সামরিক হামলার হুমকি দেয় -এটি দ্বিচারিতার স্পষ্ট উদাহরণ।
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পাকিস্তান তার কূটনৈতিক অবস্থানকে দৃঢ় রেখে শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ভারতের আগ্রাসী মনোভাব, তার গণমাধ্যমে উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচার এবং কূটনৈতিক পরিণতি বিবেচনায় না নিয়ে একতরফা সামরিক সিদ্ধান্ত, এই অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে।
বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপ -কেউই এই অঞ্চলে যুদ্ধ চায় না। বরং তারা চায় একটি সহনশীল, সহযোগিতামূলক দক্ষিণ এশিয়া। কিন্তু ভারত তার স্বার্থরক্ষার নামে প্রতিবেশীদের ভীতিতে রাখার নীতি অব্যাহত রেখেছে।
আজ প্রয়োজন কঠিন প্রশ্ন তোলা: ভারত কি নিজেকে আইন ও ন্যায় বিচারের ঊর্ধ্বে ভাবছে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই উচিত ভারতের এই আগ্রাসী নীতি ও কাশ্মীরসহ সীমান্ত ইস্যুতে সুষ্ঠু ও টেকসই সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টি করা। নয়তো দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।