আওয়ামী লীগের দোসর বাউনিয়ার আতঙ্ক খোরশেদ মাদবর ও তার পরিবারের খুঁটির জোর কোথায়?

স্টাফ রিপোর্টারঃরাজধানীর তুরাগ থানা বাউনিয়া বাজার এলাকার ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী, জুলাই-আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাকারী, চিহ্নিত সন্ত্রাসী খোরশেদ মাদবর ও তার তিন ছেলের অত্যাচারে এখনো অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। নিজেদের ভিটে-মাটি ও চাষাবাদের জমি হারিয়ে নি:স্ব মানুষ মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছে।

বাউনিয়া এলাকার মজিবুর রহমান জানান, তার ৩১শতাংশ জমি লিজ নিয়ছিলো খোরশেদ মাদবর। সেই জমির ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে নিজেই জমির মালিক হওয়ার মতো প্রতারণার চেষ্টা চালায়। এই প্রতারণা ধরতে পেরে জমির মালিক মজিবুর রহমান সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কার্যালয়ে মামলা করেন খোরশেদ মাদবরের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি লিজও বাতিল করে দেন। মামলার রায় আসে মজিবরের পক্ষে। মামলায় হেরে যায় প্রতারক খোরশেদ মাদবর।
আদালতে মামলা হেরে গেলেও মজিবুরের জমির অবৈধ দখল ছাড়েনি খোরশেদ। আওয়ামী আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লিজ নেওয়া জমি জোর করে দখল করে রাখে খোরশেদ ও তার ছেলেরা। এবছরের জানুয়ারী মাসের ৩১ তারিখ মজিবুর রহমান তার জমি বুঝে নিতে গেলে খোরশেদ ও তার ছেলেরা মেরে ফেলার হুমকি দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে তুরাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মজিবুর রহমান।
( তুরাগ থানা, ৩১.০১.২০২৫, সাধারণ ডায়েরি নাম্বার ৭৩৮)

জমির প্রকৃত মালিক এবং স্থানীয় বাসিন্দা হওয়া সত্বেও খোরশেদ মাদবর ও তার ছেলেদের হুমকি ধামকির কাছে অসহায় কেনো জমির মালিক মজিবুর রহমান? তিনি জানান, আওয়ামী জামানায় ক্ষমতার দাপট দেখাতো খোরশেদ মাদবর। পুরো বাউনিয়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব ছিলো তার ছেলেদের। প্রশাসন ছিলো অসহায়। এলাকায় বিচার শালিসের নামে চলতো খোরশেদ ও তার ছেলেদের আইন। গায়ের জোরে নিজের ছেলে সাজ্জাদ আলমকে বাউনিয়া বাজার কমিটির সভাপতি বানান খোরশেদ। তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদের বড় ছেলে সাজ্জাদ তুরাগ থানা যুবলীগের আহবায়ক, দ্বিতীয় ছেলে শাহেদ আলম ছিলো তুরাগ থানা যুবলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আর ছোট ছেলে রনি হাসান তুরাগ থানা যুবলীগের সদস্য হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতো। এলাকার ব্যবসায়ী, আবাসন কোম্পানীর কাছ থেকে আদায় করতো চাঁদা, টেম্পু ষ্ট্যান্ডের চাঁদাও পকেটে যেতো খোরশেদ পরিবারের। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিনা ভোটের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী সাহারা খাতুন, হাবিব হাসান এবং পরবর্তিতে খসরু চৌধুরীর ক্যাডার ছিলো খোরশেদের তিন ছেলে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের এই ক্যাডারদের দখলে এখনো বাউনিয়া এলাকার নিরীহ মালিকদের ২৫ থেকে ৩০ বিঘা জমি।
কেউ জমির হিস্যা চাইতে গেলেই তার উপরে খোরশেদ পুত্রদের নরক যন্ত্রনা নেমে আসে। এই যেমন বাউনিয়া এলাকার আলাউদ্দীন। তার জমি জোরপূর্বক দখল করে রাখে খোরশেদ ও তার ছেলেরা। জমির দখল নিতে গেলে আলাউদ্দিনের উপর হামলা চালায় খোরশেদ ও তার ছেলেদের ক্যাডার বাহিনী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আলাউদ্দিন। তবে আলাউদ্দিন হামলায় মারা যায়নি, স্ট্রোক করে মারা গেছেন পরিবার সদস্যদর জোর করে স্বীকার করতে বাধ্য করে। তারপরও দমে যায়নি আলাউদ্দিনের পরিবার। আলাউদ্দিনকে হত্যার অভিযোগে তুরাগ থানায় মামলা করে পরিবার সদস্যরা। তুরাগ থানা, মামলা নং- ১০, ১১এপ্রিল ২০২২।
বাউনিয়া এলাকার আরেক বাসিন্দা আবুল কাশেম চৌধুরীর জমি জোর করে ভোগ দখলের অভিযোগে খোরশেদ মাদবর ও তার ছেলেদের বিবাদী করে মামলা করা হয়। সাহস করে এই মামলা করা হয় ২০২২ সালে। মামলার নাম্বার- ১৯৪।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখনো এলাকায় গায়ে হাওয়া লাগিয়ে সদর্পে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে খোরশেদ মাদবর ও তাই দুই ছেলে। জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে পিতা-পুত্রদের বিরুদ্ধে। উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার আসামী হিসেবে শাহেদ আলম গ্রেপ্তার হলেও খোরশেদ মাদবর ও তার দুই ছেলে রনি হাসান ও সাজ্জাদ আলম এখনো অধরা। এবছরের ৩ জানুয়ারী দায়ের হওয়া হত্যা মামলার আসামীর তালিকায় ১৪১, ১৪২, ১৪৩ ও ১৪৪ নাম রয়েছে খোরশেদ মাদবর ও তার ছেলেদের নাম। উত্তরা পশ্চিম থানা মামলা নং-৮
দীর্ঘ পাঁচ মাসেও আসামী খোরশেদ মাদবর ও তার দুই ছেলেকে ধরতে পারেনি পুলিশ। যদিও এই আসামীরা এখনো প্রকাশ্যে এলাকাবাসী ও জমির মালিকদের হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে