আল্ কাফি : পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সমূদয়কাঠী ইউনিয়নে বিএনপির লোক পরিচয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে জাকির খান নামে জনৈক ব্যাক্তি। তার অত্যাচারের থাবা থেকে সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক কর্মী, সরকারি কর্মচারী কেউই রেহাই পাচ্ছে না। চাঁদাবাজী, সালিশ বানিজ্য, অন্যের জমি দখলে ভাড়াটিয়া মাস্তান হিসাবে কাজ করা তার পেশায় পরিনত হয়েছে। এছাড়াও সমূদয়কাঠী এলকাকে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনের আখড়ায় পরিনত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে একাধিক ব্যাক্তিকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। আর এসকল অপরাধ সংগঠনের জন্য এলাকার বখাটে কিশোর ও যুবকদের নিয়ে গড়ে তুলেছে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। জাকির খানকে শেল্টার দেয়ার অভিযোগ উঠেছে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে।
জাকির খান সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে সে সমুদয়কাঠী গ্রামের আব্দুস সাত্তার খানের পুত্র। তার অতীত অনুসন্ধানে জানা গেছে ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে স্হানীয় বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় সে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সে তখন এলাকায় পিস্তল জাকির হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তার ভয়ে এলাকার সাধারণ জনগণ ভীতসন্ত্রস্ত থাকত। বিগত ১/১১ এর সেনা সমর্থিত সরকারের সময় অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয় তাকে। কারাগার থেকে বের হয়ে সে এলাকা ছেড়ে ঢাকা চলে যায়। বিগত আওয়ামী জমানায় সে কখনোই এলাকায় আসেনি বলে একটি সূত্র জানায়। সূত্রটি আরো জানায় ঢাকায় তার কোনো দৃশ্যমান পেশা ছিল না। কোন অজ্ঞাত পেশার সাথে সে জড়িত ছিল তা এলাকার সকলের নিকট অজানা।
এলাকাবাসী সূত্রে আরো জানা যায় গত বছর ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর সে দীর্ঘদিন পর নিজ এলাকা সমূদয়কাঠী গ্রামে ফিরে আসে। নিজেকে সে যুবদল নেতা হিসেবে এলাকায় ঘোষণা দেয়। সমূদয়কাঠী ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, জাকির খান সমূদয়কাঠী ইউনিয়ন বিএনপির কেউ নয়। তিনি আরো বলেন জাকিরের নির্দিষ্ট কোনো আয়ের উৎস নেই। নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার আশীর্বাদকে পুঁজি করে সে চাঁদাবাজি ও শালিস বানিজ্যের মাধ্যমে আয়ের উৎস তৈরী করে নিয়েছে। উপজেলা বিএনপির ঐ প্রভাবশালী নেতার ছত্র ছায়ায় থাকায় জাকির খানের অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। সম্প্রতি সমূদয়কাঠী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে জাকিরের বিরুদ্ধে। এর পূর্বে মৈশানী গ্রামের যুবদল কর্মী শিমুল গাজীকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় জাকিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তারা জাকিরের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তাদের উপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু বিএনপি নেতৃবৃন্দ নিরব ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে।
সমূদয়কাঠী ইউনিয়ন বিএনপির অন্য একটি সুত্র জানায় নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব তিনভাগে বিভক্ত। তাই ইউনিয়ন বিএনপির উপর তাদের একক নিয়ন্ত্রণ নাই। আর এ সুযোগটিই গ্রহন করছে সন্ত্রাসীরা। নিজ নিজ গ্রুপ ভারী করতে সন্ত্রাসীদের দলে টানছে উপজেলা নেতৃবৃন্দ। এলাকার সুশীল সমাজের একাধিক ব্যাক্তি বলেন, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যে জুলুম করেছে বিএনপি ক্ষমতায় না গিয়ে তার চেয়ে বেশি জুুলুম করছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে উপজেলা নেতারা জাকির খানের মতো সন্ত্রাসীদের জনগণের উপর লেলিয়ে দিয়েছে। সমূদয়কাঠী ইউনিয়ন বিএনপির অন্য এক নেতা বলেন, জাকির খানের বিভিন্ন অপকর্মের কারণে আমরা এলাকায় বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ নেতা বলেন, জাকির নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ছত্র ছায়ায় থেকে অপকর্ম করে যাচ্ছে। তার রয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না।
এলাকার সাধারণ জনগণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সমূদয়কাঠী ইউনিয়নে বিএনপির সু-সময় চলছিল। কিন্তু উপজেলা বিএনপির বিভক্ত নেতৃত্বের কারণে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে এ জনপদ। জাকির গংদের অত্যাচারে এখন বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাধারণ জনগণ। বিএনপির নেতৃবৃন্দ সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করছে। তাই সাধারণ জনগণ সন্ত্রাসী জাকির খানের অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।