মো: আবু তাহের পাটোয়ারীঃ
বাংলাদেশ আজ এক অদ্ভুত বাস্তবতার মুখোমুখি। ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র ১৮ লক্ষ সরকারি কর্মচারী, যাদের একটি বড় অংশ দায়মুক্তির বলয়ে থেকে রাষ্ট্রকে জিম্মি করে রেখেছে। যাদের কাজ হওয়া উচিত ছিল জনগণের সেবা, তারা আজ হয়ে উঠেছে ক্ষমতার কুশীলব। বিশেষ করে সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতির ছত্রছায়ায় থেকে ঘুষ, ফাইল আটকে রাখা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং কখনও কখনও সরকারের পরিবর্তনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে চিহ্নিত।
এই পরিস্থিতি একদিনে গড়ে ওঠেনি। বছরের পর বছর ধরে জবাবদিহির অভাব, রাজনৈতিক রক্ষাকবচ এবং প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তায় একটি দুর্বিনীত আমলাতন্ত্র তৈরি হয়েছে, যারা নিজেরাই আইন, আবার নিজেরাই সেই আইনের ঊর্ধ্বে-এই মনোভাব নিয়ে চলেছে।
কিন্তু সময় বদলেছে। দেশের ৯০ ভাগ মানুষের প্রত্যাশায় যে “জুলাই বিপ্লব” সংঘটিত হয়েছে, সেই বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন সচিবালয়ের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নির্মূলের উদ্যোগ নেয়, তখনই শুরু হয়ে গেছে প্রতিরোধ। স্বার্থান্ধ কিছু নির্লজ্জ আমলা তাদের অপরাধ ঢাকতে ‘আন্দোলন’-এর নামে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নির্ভেজাল, দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ প্রশাসন গঠনের যে অঙ্গীকার করেছে-তা বাস্তবায়নের প্রথম শর্তই হচ্ছে সচিবালয়কে আইনের আওতায় আনা, এবং সব কর্মকর্তাকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো।
দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত যুবক বেকার, অথচ অপরাধী ও দুর্নীতিগ্রস্তরা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে-এটা মেনে নেওয়ার সময় শেষ। জনগণের টাকায় চলা সরকারি চাকরির অধিকার শুধুই তাদের যারা যোগ্য, নীতিবান ও সেবার মানসিকতা রাখে।
এখন আর নিরব থাকার সময় নয়। সচিবালয়ের অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ভারতের দালালি, বিদেশি চাপ, কিংবা অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র-যাই হোক না কেন, জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাহসী ভূমিকা নিতে হবে।
এখন সময় এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার। এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে প্রশাসন হবে জনগণের সেবক-,নট- শাসক। একটি দুর্নীতিমুক্ত, নির্ভেজাল সচিবালয় ছাড়া সত্যিকারের স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধি অসম্ভব।
এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে “জুলাই বিপ্লব”। জনগণের ৯০ ভাগ মানুষের সমর্থন নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আজ প্রথমবারের মতো হাত দিয়েছে সেই অভেদ্য দুর্গে-সচিবালয়ে। দুর্নীতির ঘাঁটি, আমলাতান্ত্রিক ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র, ফাইল ফেলে রাখা আর জনগণকে অপমান করার সেই আস্তানাকে আজ চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে।
আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে ঘুষখোর চক্র। নিজেদের অপরাধ ঢাকতে, বিচার এড়াতে, আবারো রাষ্ট্রটাকে জিম্মি করতে সচিবালয়ের কিছু নির্লজ্জ ব্যক্তি “আন্দোলনের” নামে হুংকার দিচ্ছে। তারা চায় না কোনো পরিবর্তন আসুক, তারা চায় না জনগণের রাষ্ট্র গড়ে উঠুক। তারা চায় আবারও দুর্নীতির রঙ্গমঞ্চ চালু থাকুক, যেখানে তারা খেলে বেড়াবে-আর জনগণ দেখবে দাঁতে দাঁত চেপে।
কিন্তু এবার আর হবে না! বাংলাদেশ বদলে গেছে। জনগণ আর মাথা নিচু করে থাকবে না। যারা জনগণের পয়সায় চাকরি করে, তারা যদি জনগণকে ভয় দেখায়-তাদের জায়গা চাকরির টেবিলে নয়, অপরাধীর খাঁচায়!
দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ বেকার। তারা কাজ পায় না কারণ কিছু দালাল-আমলা সিস্টেমটাকে পচিয়ে দিয়েছে। তাই এদের সরানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমলাতন্ত্রকে ভেঙে না ফেলা পর্যন্ত নির্ভেজাল বাংলাদেশ সম্ভব নয়।
এটা সময়-জাগরণের, পরিবর্তনের, এবং নির্মূলের। সচিবালয়ের প্রতিটি ঘুষখোর, প্রতিটি স্বৈরতন্ত্রী চক্র, প্রতিটি ষড়যন্ত্রী আমলাকে এখনই চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এরা জনগণের শত্রু-রাষ্ট্রের ঘাতক।
বাংলাদেশ কোনো আমলা-প্রভুর জমিদারি নয়। এটা ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্নের দেশ। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে-আর কেউ তা রুখতে পারবে না!
এবার ঘুষখোরদের বিদায় করার সময় এসেছে। এবার রুখে দাঁড়াও জনগণ-তোমার রাষ্ট্র, তোমার নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে নাও!
সচিবালয়ের ‘জনবিচ্ছিন্ন’ বাহিনী রাস্তায়!
১৮ কোটি মানুষের ওপর ১৮ লক্ষ লোকের প্রতিরোধ-
গাড়ি ঘিরে প্রহরায়, যেন রাষ্ট্র তাদের দাসত্বে লিখে দিয়েছে!
এরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রুখে দাঁড়ায়,
যেন রাষ্ট্রের শত্রুরাই রাষ্ট্রের মালিক!