মো: আবু তাহের পাটোয়ারী :
৫৪ বছর ধরে দুর্নীতির অন্ধকারে ঢাকা পড়েছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র।
আমাদের সচিবালয় হয়ে উঠেছিল একেকটা ‘সুপার মার্কেট’, যেখানে নীতির নামে বিক্রি হয়েছে ন্যায্যতা, বিবেক আর রাষ্ট্রীয় স্বার্থ।
জনগণ শুধু ভোট দিয়েছে, কিন্তু শাসন করেছে একদল অদৃশ্য ‘চাকরিজীবী অভিজাত শ্রেণি’।
তাদের সন্তানরা আজ উচ্চশিক্ষায় বিদেশে, আর দেশের মেধাবীরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে পাসপোর্টের জন্য!
এই ব্যবস্থায় কিছু একটা তো বদলাতে হতো, তাই না?
আর সেই পরিবর্তনের প্রথম আঘাত এসেছে ইউনূস সরকারের হাত থেকে।
যেখানে টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, জনমতের চাপের মাঝেও নেওয়া হয়েছে দুটো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত- যা গোড়া ধরে কাঁপিয়ে দিয়েছে দুর্নীতির মজবুত গোঁড়া!
১. এনবিআর ভেঙে দুই ভাগে ভাগ: নীতি আলাদা, আদায় আলাদা
আগে যে কর্মকর্তা ঠিক করত কার ট্যাক্স কত হবে,
সে-ই আবার আদায় করত সেই ট্যাক্স।
সিস্টেমটাই তৈরি ছিল ঘুষের খোরাক হিসেবে।
১০০ টাকা ট্যাক্স, ২০ টাকা ঘুষ, ৩০ টাকায় দায়মুক্তি -বাকি ৭০ গেল কার পকেটে?
এটাই ছিল ‘চোরের আনন্দ’ আর রাষ্ট্রের কান্না।
এখন আর সেই সুযোগ নেই।
নীতিনির্ধারক আর আদায়কারী এক ব্যক্তি নয়।
দূরত্ব থাকবে, নজরদারি বাড়বে।
চুরি বন্ধ হবে, রাজস্ব বাড়বে।
আর এতেই তো গায়ে আগুন ধরেছে এনবিআরের ছায়ায় ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজদের!
তারা এখন ধর্মঘট করছে, আন্দোলনের নাটক করছে – মূলত নিজেদের পিঠ বাঁচাতে।
২. সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫: বিদ্রোহে ৮ দিনের মধ্যে বরখাস্ত!
রাষ্ট্র তার চাকরিজীবীদের কাজের বিনিময়ে দেয় সম্মান, নিরাপত্তা ও সুবিধা।
কিন্তু তার বদলে যদি কেউ কর্মবিরতি, উস্কানি বা দলবাজি করে রাষ্ট্রযন্ত্রে বিঘ্ন ঘটায় -তবে সেটা হবে অসদাচরণ।
এখন থেকে, যারা কাজ ফেলে “পলিটিক্যাল ড্রামা” করবে, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে বরখাস্ত, পদাবনতি অথবা চাকরি হারানোর খাড়া।
এই অধ্যাদেশ শুধু আইনি বিষয় নয়,
এটা এক মৌলিক বার্তা –
চাকরি মানে দায়িত্ব, দলবাজি নয়।
চাকরি মানে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য, গোষ্ঠীর প্রতি নয়।
সাহসের শাস্তি কি অবধারিত?
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সাহসী সিদ্ধান্তগুলো এখন আক্রমণের মুখে।
ঐ দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী এখন সক্রিয়ভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে
বলছে, “সরকার কিছু করছে না!”
আসলে সরকার এমন কিছু করছে যা এই চক্রের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলছে।
তারা চায় পরিবর্তন থেমে যাক।
কারণ পরিবর্তন মানেই তাদের গদি নাড়া খাওয়া।
যাদের মুখে উন্নয়নের বুলি, কিন্তু ঘরে ইঁদুর
৫৪ বছর ধরে যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছে –
তারা আজ আন্দোলন করছে “অধিকার” নিয়ে!
অথচ তাদের সন্তানদের জন্য ছিল বিদেশে শিক্ষা, আর দেশের জনগণের জন্য ছিল অবহেলা।
ঢাকা শহরের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটগুলোর মালিকানা কার হাতে?
সরকারি বেতন দিয়ে সেই বাড়ি কেনা সম্ভব?
আজ এসব প্রশ্নের উত্তর সময় দাবি করছে।
রাষ্ট্র দাবি করছে শুদ্ধির।
এটা কেবল প্রশাসনিক সংস্কার নয় – এটা একটি জাতীয় আত্মশুদ্ধি অভিযান।
শেষ করার আগে বলবো সংস্কারের যুদ্ধ শুরু এখান থেকেই করতে হবে বিরোধিতাকারিদের বাদ দিয়ে দক্ষ ও আগ্রহীদের নিয়োগ দিয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ জনবান্ধন সচিবালয় অপরিহার্য।
যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এটা আদর্শ বনাম লোভের যুদ্ধ।
যেখানে প্রতিপক্ষ অদৃশ্য, কিন্তু প্রবল।
এই যুদ্ধে জনগণকেই ইউনূস সরকারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
নাহলে একদিন ইতিহাস প্রশ্ন করবে: “তুমি কি সত্যের পক্ষে ছিলে, নাকি দুর্নীতির ছায়ায় নিরাপদে ছিলে?”
★★
রাষ্ট্র সংস্কারের শুরুটা এখান থেকেই!
যখন রাষ্ট্রের ঘুনে ধরা কাঠামোতে পরিবর্তনের ডাক আসে, তখন সেটি শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত থাকে না – তা হয়ে ওঠে এক বিপ্লবের আগুন। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার যে দুটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা কেবল কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে রাষ্ট্রকে দুর্নীতিমুক্ত করার রূপরেখা।
প্রথম আঘাত: এনবিআর ভাঙা, ঘুষের কারখানায় তালা!
একসময় এক-ই কর্মকর্তা কর ধার্য করতেন, আবার আদায় করতেন – ঘরে বসেই ‘ঘুষ-নীতি’ প্রণয়ন হতো! এখন নীতি নির্ধারক ও কর আদায়কারী পৃথক। এর মানে-
• ঘুষ দিয়ে ছাড় পাওয়া যাবে না,
• টাকাটা সোজা কোষাগারে যাবে,
• দালালদের রাজত্বে তালা।
এই বদলেই এনবিআরে অস্বস্তি শুরু। হঠাৎ করে ‘কাজ করতে না পারার নামে কর্মবিরতি, আন্দোলন-এই কি রাষ্ট্রচিন্তা? না কি ৫৪ বছরের জমে থাকা স্বার্থরক্ষার চিৎকার?
দ্বিতীয় আঘাত: সরকারি চাকরি মানেই দায়িত্ব, বিদ্রোহ নয়!
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বলছে-
• কাজে অনুপস্থিতি, বিদ্রোহ বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে ৮ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা।
• অপসারণ, বেতন গ্রেড অবনয়ন এমনকি বরখাস্ত।
প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি চাকরি কি ব্যক্তিগত দম্ভ দেখানোর ক্ষেত্র? নাকি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের শপথ? আজ যারা এই নীতির বিরুদ্ধে মাঠে নামছে, তারা কি আসলেই জনগণের সেবক? নাকি নিজেরা রাষ্ট্রকে জিম্মি করে রাখতেই চায়?
৫৪ বছরের ‘ব্যবস্থাপনাগত ডাকাতি’ বন্ধ হোক!
যারা আজ বলছে “সরকার কিছু করছে না”, তারা আসলে ভয় পেয়েছে-কারণ সরকার এমন কিছু করছে, যা তাদের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করছে।
• ঢাকার অধিকাংশ ফ্ল্যাটের মালিক কারা?
• সচিবালয়ের উচ্চপদগুলোতে কারা বংশ পরম্পরায় বসে আছে?
• বিদেশে সন্তান পাঠিয়ে দেশটাকে যারা শুধু দুধে পানি মিশিয়ে খেয়েছে, আজ তারা চায় না রাষ্ট্র সংস্কার হোক।
ঘরের ইঁদুর যদি ঘর কাটে, সে ঘরে উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব?
এবার মুখ না খুললে তুমি দায়ী!
এই উদ্যোগগুলো সফল হলে-
• বাজেট ঘাটতি থাকবে না,
• রাষ্ট্র নিজের পায়ে দাঁড়াবে,
• প্রবাসে চাকরির জন্য হাহাকার কমবে।
কিন্তু এর জন্য চাই জনগণের সহায়তা। এই ক্ষত সারাতে হলে রাষ্ট্রের গভীরে হাত দিতে হবে। কেবল রাজনৈতিক দল নয়, আমলাতন্ত্রেও শুদ্ধি অভিযান চলতে হবে।
এখন আর চুপ করে থাকা নয়। যে সচিবালয় একদিন ছিল জাতির ভাগ্য গঠনের স্থান, সেটিকে ফিরিয়ে আনতে হবে স্বচ্ছতার আলোকবর্তিকায়।
শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন দেশের পক্ষে কথা বলতে হবে।
এবার সময় এসেছে-
রাষ্ট্রের জন্য পথে নামার,
সংস্কারের পাশে দাঁড়ানোর,
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনতার এক কণ্ঠে গর্জে ওঠো।