আহতরা নামহীন, ইতিহাস অন্ধ- আর কতদিন? ২৮ মে জুলাই মঞ্চ এবং এক সাংবাদিকের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু অপ্রিয় সত্য

মো: আবু তাহের পাটোয়ারী:
২৮ মে শাহবাগে যারা দাঁড়িয়েছেন, তারা শুধু কোনো কর্মসূচিতে নয়-তারা দাঁড়িয়েছেন এক রাষ্ট্রীয় নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে, ইতিহাসের বিকৃতি আর প্রশাসনিক প্রতারণার বিরুদ্ধে। যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে আজও চিকিৎসা ছাড়াই লড়ছেন,যারা তালিকার বাইরে পড়ে আছেন-এই কর্মসূচি তাদের রক্তের অধিকার আদায়ের এক জ্বলন্ত ডাক।

🟥 জুলাই বিপ্লব: রাষ্ট্রের সামনে এক আয়না

জুলাই বিপ্লব কোনো তারিখ নয়-এটা রাষ্ট্রের নৈতিকতার পরীক্ষা। আর সেই পরীক্ষায় বারবার ফেল করছে প্রশাসন। আজ আহতদের নাম নেই MIS-এ। আজ শহীদদের পরিবার কাঁদে-“আমার সন্তানের রক্ত কি এতটাই মূল্যহীন?”

নোয়াখালীর সেনবাগের এক সাংবাদিক-যিনি ৪ আগস্ট ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংহতি প্রকাশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে স্বৈরাচারী দুর্বৃত্ত কর্তৃক আহত হয়েছিলেন, আজও যুদ্ধ করছেন নিজের নাম একখানা সরকারি কাগজে লেখানোর জন্য!
তিনি সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে আবেদন করেন জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে। সব কাগজপত্র জমা দেন। ঈদের পাঁচদিন আগে ফোন দিলে বলা হয়, সোনালী ব্যাংক পিএলসি-এর একাউন্ট নাম্বার পাঠান-তিনি তা ঢাকা থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পাঠানও।
কিন্তু তারপর?
দুই দিন পর জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, “সব ঠিক আছে, এখন শুধু এমআইএস তালিকায় উঠলেই হয়।”
এমআইএস কোথায়?

“এমআইএস করতে হবে”-এই কথা বলে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি ইতিহাস

জুলাই ফাউন্ডেশন, বিশেষ সেল, মেডিকেল বিভাগ-সবার একই কথা: নেতারা বন্ধ রেখেছে, আমাদের কিছু করার নেই।
তাহলে প্রশ্ন হলো-
👉 এই রাষ্ট্রের কাছে একজন আহত সাংবাদিকের জীবনের মূল্য কতটুকু?
👉 তার রক্তে ভেজা জামা কি অপ্রাসঙ্গিক?
👉 তার ব্যথায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিবার কী কোনো ‘তালিকা’ না পাওয়ার কারণে অনামা হয়ে থাকবে?

একটা জাতি কতটা লজ্জাজনক হলে একজন আহত বিপ্লবীকে এভাবে ঠকাতে পারে?

নেতারা কোথায়?

নেতারা আজ চুপ। তারা ব্যস্ত নিজেদের অবস্থান ও ছবি ঠিক রাখতে। শাহবাগে দাঁড়িয়ে রক্ত দেওয়া মানুষের জন্য তাদের কণ্ঠে কোনো প্রতিধ্বনি নেই। আর প্রশাসন? তারা তালিকা বন্ধ রেখে জাতির রক্তাক্ত ইতিহাসকে লুকিয়ে দিতে চায়।

এই যে বিভ্রান্তিকর নীরবতা-এটা আসলে রাষ্ট্রীয় নিষ্ঠুরতার আরেক রূপ।

✊ তাই বলছি-আর না!

২৮ মে শাহবাগে যারা এসেছেন, তারা এসেছেন এক টুকরো সম্মান ও স্বীকৃতি আদায় করতে-এটা কারো দয়া নয় -ন্যায্যতার ভিত্তিতেই ।
তারা এসেছেন বলে-
👉 আমার নাম চাই
👉 আমার পরিচয় চাই
👉 আমার স্বীকৃতি চাই

এটা কোনো আবেদন নয়-এটা একজন আহত মানুষ, একজন শহীদ সন্তানের মা, একজন অসহায় বোনের হৃদয়ের আর্তনাদ।

আমরা চাই-

১. অবিলম্বে MIS তালিকা খুলে আহতদের নাম অন্তর্ভুক্ত করুন

২. প্রতিটি শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিন

৩. পুনর্বাসনের কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে শুরু করুন

৪. ৪ আগস্টের সেই আহত সাংবাদিকসহ সকল বঞ্চিতদের আবেদন যাচাই করে বাস্তবায়ন করুন।

৫. আমরা আর মাথা নিচু করে বসে থাকব না

একটি জাতি তখনই মর্যাদা পায়, যখন সে তার রক্তদাতাদের সম্মান দেয়।
আমরা সেই সম্মান আদায়ে একজোট হবো।
আমরা যেন ভুলে না যাই-তালিকায় নাম না থাকলেও ইতিহাসে আমাদের নাম লেখা হচ্ছে রক্ত দিয়ে।

🟥 আর দেরি নয়-এবার হিসাব চাই!
🟥 শুধু কথা নয়-এবার কাজ চাই!
🟥 এবার রাস্তায় নামতে হবে, সম্মানের দাবিতে।
আসো, ইতিহাসের পাশে দাঁড়াই।

#জুলাইবিপ্লব #MISতালিকা #আহতবিপ্লবী #রাষ্ট্রীয়দায়িত্ব #নবজাগরণ #শাহবাগ২৮মে