জাপানে এক লাখ কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ-এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত

মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারীঃ

সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য আশাব্যঞ্জক একটি খবর এসেছে-পরম বন্ধুদেশ জাপানে এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও অর্থনীতির জন্য একটি যুগান্তকারী সম্ভাবনা। এর নেপথ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের গর্ব, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি এই কূটনৈতিক সাফল্যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছেন।

জাপানের মতো একটি উন্নত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ শুধুমাত্র কর্মসংস্থানের সুযোগ নয়, বরং এটি রেমিটেন্স বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোর এক অপার সম্ভাবনা। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম, যারা উচ্চশিক্ষিত হয়েও কর্মসংস্থানের অভাবে হতাশ, তাদের জন্য এটি নতুন আশার আলো।

দূরদর্শিতা ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞার ফসল

অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং তার প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আস্থা এই সমঝোতা বাস্তবায়নে সহায়ক হয়েছে। একটি বিষয় এখানে পরিষ্কার-প্রথাগত কূটনৈতিক পথ ছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এবং নন-স্টেট অ্যাক্টরদের ভূমিকা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও শ্রমচুক্তি বাস্তবায়নে কতটা কার্যকর হতে পারে, তা আবারও প্রমাণিত হলো।

প্রযুক্তি ও দক্ষতার চ্যালেঞ্জ

তবে শুধু কর্মী পাঠানোই যথেষ্ট নয়। কর্মীদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে-বিশেষ করে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও জাপানি ভাষা শেখার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ভাষাগত অসুবিধা কর্মীদের আত্মবিশ্বাস ও উৎপাদনশীলতা দুইই কমিয়ে দিতে পারে। তাই সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

রেমিটেন্সের নতুন সম্ভাবনা

বর্তমানে বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয়ের একটি বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, যেখানে শ্রমের চাহিদা ধীরে ধীরে কমছে। সেই প্রেক্ষাপটে জাপানের মতো দেশের সঙ্গে শ্রমচুক্তি করা নতুন বাজার উন্মোচনের একটি বিরল সুযোগ। উন্নত দেশে কর্মরত শ্রমিকরা কেবল বেশি আয় করেন না, বরং সামাজিক নিরাপত্তাও অনেক বেশি থাকে।

অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা জরুরি

এই ধরনের বড় উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বচ্ছতা এবং দূর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। যেন মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে পড়ে সাধারণ কর্মীরা শোষণের শিকার না হন;সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতিতের ভয়াবহ বিতর্কিত ব্যক্তিরা এই সেক্টরকে অতিমুনাফার লোভে ধ্বংস করেছে লুটেপুটে নিয়েছে কোটিকোটি টাকা। সরকারের উচিত একটি শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

নির্বিশেষে আমাদের করণীয়

জাপান সফর এবং এর ফলাফল প্রমাণ করে যে, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে বাংলাদেশ কতদূর এগিয়ে যেতে পারে। অধ্যাপক ড. ইউনূসের এই উদ্যোগ কেবল একটি কর্মসংস্থান চুক্তি নয়-এটি এক নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন।

আমরা আশা করি, এই চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শুধু অর্থনৈতিক নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নেও এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।