– বিশেষ প্রতিবেদন-আনিশা ফেরদৌস অবন্তিকা
আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে। যে রক্তাক্ত জুলাই আমাদের চোখে ধোঁয়া তোলে, বুক ফাটায়, সেই জুলাইয়ের গনঅভ্যূত্থান একে একে এনে দিয়েছে শহীদ-ওয়াসিম, আবু সাঈদ, মুগ্ধ- আর রেখে গেছে কান্না, ক্ষোভ আর প্রতিজ্ঞার অগ্নিগর্ভ শপথ। আজ সেই শপথ পূরণের পথে এক ঐতিহাসিক দিন।
১ মে শুরু হচ্ছে শেখ হাসিনার বিচার।
হ্যাঁ, শুনতে ভুল হয়নি। জুলাই গণঅভ্যূত্থানে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের মূল দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চার্জ দাখিল করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন টিম। এই মুহূর্ত থেকেই শুরু হচ্ছে সেই বিচারের সূচনা-যা কোটি মানুষের রক্তচক্ষুর দাবিতে পরিণত হয়েছিল গত ১৬ বছরের যন্ত্রণাদায়ক যাত্রায়।
বিচারের শুরু, অন্যায়ের শেষের ঘোষণা।
প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত ইউনিট নিজেদের জীবন বাজি রেখে, নিদ্রাহীন রাত আর অগণিত হুমকি উপেক্ষা করে এই মামলা প্রস্তুত করেছে। চার্জশিটে রয়েছে গুম-খুন, পরিকল্পিত গণহত্যা, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারবিহীন হত্যার ভয়াবহ দলিল।
এই বিচার শুধু শেখ হাসিনার নয়-এ হলো সেই সমগ্র দম্ভ, নিষ্ঠুরতা ও দানবীয় দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আদালতের ঘুষি। এটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় হত্যার জবাবদিহিতার শুরু। এই বিচার সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি সহ জাতীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সকাল ১২টার দিকে চোখ রাখুন পর্দায়- ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে শেখ হাসিনা।
শহীদ ওয়াসিমের বাবার চোখে আগুন
এই প্রতিবেদনের সঙ্গে থাকা ছবির মানুষটি শহীদ ওয়াসিমের বাবা। একটি চোখ, একটি চাহনি- সেখানে যে আগুন জ্বলছে, তাতে ছারখার হয়ে যায় খুনিদের মুখোশ। যদি এই চোখের সামনে দাঁড়াতে পারতেন, তবে আপনি নিজেই বুঝতে পারতেন- কেন এই বিচার এত জরুরি।
এই চোখ শুধু এক পিতার না, এক জনপদের, এক বিপ্লবের, এক জাতির প্রতিনিধি। সেই চোখে জ্বলছে না শুধু শোক, সেখানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে অমোঘ শাস্তির ডাক।
জুলাই যাদুঘর: গণবেদনাকে চিরস্থায়ী করার প্রচেষ্টা
আজ থেকে শুরু হলো জুলাই স্মারক সংগ্রহ কার্যক্রম। শুধু আন্দোলনের ৩৬ দিনের নয়- ষোল বছরের নিপীড়নের প্রতিটি চিহ্ন, দলিল, নিঃশ্বাস যেন ইতিহাসের কাছে জমা হয় সেই লক্ষ্যে চলছে জুলাই যাদুঘরের কাজ।
এই যাদুঘর হবে বেদনার অর্কাইভ, প্রতিরোধের জ্বলন্ত প্রমাণ, আর ভবিষ্যতের জন্য ন্যায়বিচারের উত্তরাধিকার।
শেষ কথা নয়- শুরু মাত্র
বিচার শুরু মানেই কাজ শেষ নয়। আমাদের কাজ হবে আরও বেশি শক্তিশালী হওয়া। বিচার যাতে ভিন্নখাতে না যায়, যাতে প্রমাণ নষ্ট না হয়, যাতে ন্যায়বিচার সত্যিই হয়- সেই কাজেও আপনাকে যুক্ত হতে হবে।
আমাদের চাওয়া একটাই-
শহীদের চোখ যেন শান্ত হয়। আর খুনির চোখে জ্বলুক বিচারভয়ের আগুন।
জয় হোক জনগণের। বিচার হোক সঠিক। ইতিহাস লিখুক রক্ত দিয়ে নয়, ন্যায়ের ভাষায়।