শুধু একটু ছুটি চাই-গৃহকর্মীদের ন্যায্য দাবির পাশে দাঁড়ানো সময়ের দাবি

মো: আবু তাহের পাটোয়ারী :
বাংলাদেশের কর্মজগতে সবচেয়ে অবহেলিত একটি শ্রেণি হলো গৃহকর্মী নারী। শহর থেকে গ্রাম-সর্বত্র এঁরা আমাদের ঘরের কাজ সামলান, শিশুদের দেখাশোনা করেন, কখনো কখনো রোগীর সেবাও দেন। অথচ দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ-এই পরিশ্রমের বিনিময়ে তারা পায় না একটি দিনের ছুটিও। এখন সেই গৃহকর্মীরা বলছেন, “অর্থ নয়, বাড়ি নয়, চাকরি নয়;সরকারি ভাতা নয়-শুধু সাপ্তাহিক ছুটি চাই। এ দাবি কি এতটাই অযৌক্তিক যে, রাষ্ট্রকে চুপ থাকতে হবে?

এই দাবি মানবিক, যুক্তিসংগত এবং সময়োপযোগী। শ্রমজীবী মানুষের ছুটি সংবিধানেও স্বীকৃত। বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী শ্রমিকদের নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের অধিকার রয়েছে। অথচ গৃহকর্মীরা সেই আইনের ছাতার নিচে পুরোপুরি আসেননি, এখনো তাঁরা একটি ‘অদৃশ্য শ্রমিক’ শ্রেণি হিসেবে সমাজে টিকে আছেন। ফলে তারা যেমন ন্যায্য মজুরি পান না, তেমনি সাপ্তাহিক বিশ্রামের সুবিধাও থেকে বঞ্চিত হন।

আজ যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে এ ন্যায্য দাবিটি তুলছেন, তাদের কেউ ‘ষড়যন্ত্রকারী’ নন। কেউ রাষ্ট্রবিরোধীও নন। তাদের অধিকাংশই প্রান্তিক নারীরা, যারা হয়তো নিজের পরিবার চালাতে গিয়ে বয়সের আগেই বুড়িয়ে গেছেন। যারা দিনরাত কাজ করেন, অথচ নিজের সন্তানদের বড় হতে দেখার সময় পান না। এদের দাবি নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, তাদের প্রশ্ন করা উচিত-একটি শ্রেণির মানুষের প্রতি মানবিক হওয়া কি ষড়যন্ত্র?

এ দেশের গৃহকর্মীরা ‘কাজের লোক’ নয়, তারা কর্মজীবী। তাদের কাজ শ্রমের স্বীকৃতি পেলে, তাদের জন্য ন্যূনতম মর্যাদা নিশ্চিত করা গেলে, তা আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের নৈতিক উৎকর্ষকেই তুলে ধরবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বিশ্রাম শুধু বিলাসিতা নয়-মানবিক অধিকারও বটে। গৃহকর্মীদের একটি সাপ্তাহিক ছুটির সুযোগ দিলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে না, বরং তা হবে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া-একটি সভ্য ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের পথে।

এখন সময় গৃহকর্মীদের এ ন্যায্য দাবিকে স্বীকৃতি দেওয়ার। নীতিনির্ধারকদের উচিত, শ্রম আইনের আওতায় এনে গৃহকর্মীদের কাজের পরিবেশ ও অধিকার নিশ্চিত করা। শুধু চেতনাই নয়, চাই কার্যকর বাস্তবায়ন।