একটা দোয়ার দাম পাঁচশ টাকার চেয়েও বেশি…

নবজাগরণ অনলাইন :
কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে গাড়ি থেকে নামতেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ছুটে এলো একটি ছিন্নমূল শিশু। মলিন গায়ে, অনাহারী চোখে, তবু কণ্ঠে আশ্চর্য নির্ভরতা-
“স্যার, আমার জন্য দোয়া কইরেন।”

ছেলেটি উপদেষ্টার পা ছুঁতে চায়, কিন্তু তিনি আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সহকারীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“টাকা আছে?”
সহকারী মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার একটি নোট বের করতেই, ছেলেটি দৌড়ে সরে যেতে থাকে-
“না স্যার, টাকা লাগবো না। আপনি শুধু আমার জন্য দোয়া কইরেন!”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বারবার বললেন-“এটা তোমার ঈদের উপহার, রাখো।”
পাশে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাও বললেন, “নাও বাবা, নাও।”
কিন্তু ছেলেটি বারবার না বলতে বলতে লজ্জায় পড়ে গেল।

সবার চোখের সামনে সে রেখে গেল এক অমূল্য বার্তা-
“উনারা তো কষ্ট কইরা দেশ চালায়। আমি টাকা নিলে মানুষে খারাপ বলবো। দোয়া করলে সারাজীবন চলবো, টাকা নিলে দুইদিনে শেষ হইয়া যাইবো।”

এই ছিন্নমূল শিশুর মুখে এমন পরিণত চিন্তা, এমন আত্মসম্মানবোধ?
ঘর নেই, চাল নেই, তিন বেলার খাবারের নিশ্চয়তা নেই।
তবু তার মাথায় কাজ করে-“সম্মান টাকা দিয়ে কেনা যায় না। দোয়ার চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু নেই।”

আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো ২০২৩ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান।
এই ছিন্নমূল ছেলেরা ছিল আমাদের মিছিলের সামনে, পুলিশের গুলির মুখে দাঁড়ানো সাহসী যোদ্ধা।
প্রায় ১৬০ জন ছিন্নমূল শিশু শহীদ হয়েছিল সে লড়াইয়ে।
এখনো রাস্তায় কোনো ছিন্নমূল ছেলে দেখলেই হৃদয়ে কাঁপন লাগে-মনে পড়ে সেই সাহসী, অমলিন মুখগুলো।

আজ এই নাম না-জানা ছেলেটির ভেতরে আমি আবার সেই তেজ দেখি।
আর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের মমতা দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই।
রাষ্ট্রনায়কদের হৃদয় এমনই হওয়া উচিত-দয়ালু, মানবিক, কোমল ও পরম মমতাময়।

নাম না-জানা সেই ছিন্নমূল ছেলেটির প্রতি ভালোবাসা।
জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

— মো. আবু তাহের পাটোয়ারী
নবজাগরণ