আল কাফি : দলীয় চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিমাতা সুলভ আচরন ও নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর না রাখার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে স্বরুপকাঠী জেপি’র রাজনীতি। ফলে এ উপজেলার জেপি’র নেতাকর্মীদের রয়েছে দলীয় চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষোভ। রাজনীতির ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা ভর করেছে নেতা কর্মীদের মধ্যে। পিরোজপুর ০২ সংসদীয় আসনের প্রায় ২ লাখ ভোটার অধ্যুষিত উপজেলা নেসারাবাদ ( স্বরুপকাঠী)। পিরোজপুর ০২ আসনটি নেসারাবাদ, কাউখালী ও ভান্ডারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। অন্য দুটি উপজেলার সমষ্টিগত ভোটারের সমান সংখ্যক ভোটার রয়েছে এ উপজেলায়। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বরুপকাঠীর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে নেছারাবাদ ( স্বরুপকাঠী) উপজেলাকে কাউখালী ও ভান্ডারিয়া উপজেলার সাথে সংযুক্ত করে পিরোজপুর ০২ আসনে পরিনত হয়। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভান্ডারিয়া – কাউখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর ০২ আসন থেকে বার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন স্বরুপকাঠীতে জাতীয় পার্টি জেপি’র কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডই ছিলো না। জেপি’র কর্মকান্ড তখন পিরোজপুর ০২ ও ০৩ এবং রাজাপুর – কাঁঠালিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি ০১ এবং বরগুনার বামনা – পাথরঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত বরগুনা ০২ আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় পিরোজপুর ০২ আসনের সাথে নেছারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলাকে সংযুক্ত করার কারণে এখানেও জেপি’র কর্মকান্ড সম্প্রসারিত হয়।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সেনা সমর্থিত সরকারের মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে বিদেশে অবস্থান করার কারণে ঐ নির্বাচনে তিনি অংশ গ্রহন করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি দেশে এসে আদালতে আত্মসমর্পন করে জেল হাজতে যান। তখন স্বরুপকাঠী উপজেলায় মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদ, কাজী আনোয়ার সাদাত পিয়াল, মোঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ এর নেতৃত্বে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মুক্তি পরিষদ গঠনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি জেপি’র রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হয়। স্বরুপকাঠীতে মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদকে আহ্বায়ক, রফিকুল ইসলাম বাচ্চুকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও কাজী আনোয়ার সাদাত পিয়ালকে সদস্য সচিব করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির নেতৃত্বে উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হতে থাকে। তৎকালীন আওয়ামী লীগের এমপি এবং তার দোসরদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে শত শত লোক জেপি’তে যোগদান করে। দলীয় চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্বরুপকাঠীর বিভিন্ন ইউনিয়নে নিয়মিত সফরে লোকজন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ৩য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেপি মনোনীত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জেপি’র নেছারাবাদ উপজেলা সভাপতি মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদ ১২০০০ ভোট পান। ইহা এত অল্প সময়ে জেপির একটি বিরাট অর্জন বলে বিবেচিত হয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নিকট এটি আতংকের বিষয় হয়ে দাড়ায়।
জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু একাধারে দীর্ঘদিন বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী ও এমপি থাকায় কাউখালী ও ভান্ডারিয়া উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেন। তার ঐ সকল উন্নয়ন দেখে স্বরুপকাঠীর জনসাধারণ তার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে। তারা স্বপ্ন দেখতে থাকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হলে উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া স্বরুপকাঠীতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কিন্তু সে স্বপ্ন আর বাস্তবে রুপ নেয় নি। পিরোজপুর ০২ আসন থেকে স্বরুপকাঠীকে বাদ দিয়ে জিয়নগর উপজেলাকে সংযুক্ত করে পূনর্বিন্যাসকৃত আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বরুপকাঠী বাসীর ধারণা নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুই আসন পূনর্বিন্যাসের নাটের গুরু। ঐ নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হন এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর থেকে তিনি আর স্বরুপকাঠীর দিকে ফিরে তাকাননি।
এ বিষয়ে জেপি’র স্বরুপকাঠী উপজেলা সভাপতি মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদ বলেন, উনি কাউখালী ও ভান্ডারিয়া উপজেলার উন্নয়ন ছাড়া কিছুই বোঝেন না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে তিনি আর স্বরুপকাঠীর দিকে ফিরে তাকান নি। উপজেলা থেকে শুরু করে সবকটি ইউনিয়ন অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়। নেতাকর্মীরা বিমর্ষ হয়ে পড়ে। প্রথম সারির কয়েকজন নেতা ছাড়া বাকীরা অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়। অন্যরা এলাকায় থেকে বা এলাকার বাহিরে গিয়ে বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। স্হানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের চাপে তারা কোনঠাসা হয়ে পড়লেও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তাদের কোনো খোঁজ রাখেন নি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বরুপকাঠীকে পুনরায় পিরোজপুর ০২ আসনের সাথে সংযুক্ত করা হয়। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ আসন থেকে প্রার্থী হন। মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদ বলেন, স্বরুপকাঠী জেপি’র যে ক’জন নেতাকর্মী অবশিষ্ট ছিল তাদেরকে সংগঠিত করে আমরা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য মাঠে নামি। কিন্তু টাকা ও ক্ষমতার জোরে তারই একসময়কার এপিএস মহিউদ্দিন মহারাজের নিকট আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পরাজিত হন। তিনি আরও বলেন, বরাবরই জেপি চেয়ারম্যানের স্বরুপকাঠীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব ছিলো। এতসব প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও স্বরুপকাঠী থেকে তিনি ৩৬,০০০ ভোট পান।
মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদ আরো বলেন, নির্বাচনের পর নেতাকর্মী ও ভোটারদের বিপদে ফেলে তিনি ঢাকায় চলে যান। বিজয়ী প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের লোকজনের হামলার শিকারও হয় কেউ কেউ। এছাড়াও তার সমর্থকরা বিভিন্ন চাপের মধ্যে থাকলেও তিনি কোনো খোঁজ খবর রাখেননি। স্বরুপকাঠী জেপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিরোধী ক্ষোভ এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কারণ হিসাবে মোঃ নাজমুল ইসলাম সাইদ বলেন, পিরোজপুর ০২ আসন থেকে স্বরুপকাঠীকে বাদ দিয়ে সীমানা পুনর্বিন্যাসের জন্য নির্বাচন কমিশনে যে আবেদন পত্র দাখিল হয়েছে সেখানেও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কলকাঠি নাড়ছেন বলে স্বরুপকাঠীবাসী মনে করছে। তাই জেপি নেতাকর্মীরা আত্ম সন্মান রক্ষার্থে বিকল্প রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা করছে।