নবজাগরণ প্রতিবেদক:
এক সময় যেখানে খালের পানিতে সাঁতার কেটে দুপুর গড়িয়ে যেত, সেই খাল আজ কেবলই একটুকরো স্মৃতি। সেনবাগ উপজেলার ৬নং কাবিলপুর ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামের বুক চিরে প্রবাহিত হওয়া ২০ থেকে ২৫ ফিট প্রশস্ত খালটি আজ মাত্র ১ থেকে ৩ ফিটের একটি দুর্গন্ধময়, স্থবির নালায় পরিণত হয়েছে।
এ যেন স্মৃতি হত্যার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের দুর্ভোগের নির্মম চিত্র। এনসিপি’র জাতীয় যুবশক্তি’র নেতৃবৃন্দের আগমে পরিদর্শের সময় খালপাড়ে দাঁড়িয়ে চোখে জল নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তা-
“এই খালেই তো আমরা ছোটবেলায় সাঁতার কেটেছি, মাছ ধরেছি। আজ সেই খাল খুঁজে পাই না…”
দখল, কালভার্ট বন্ধ, বাড়ি নির্মাণ- সবমিলিয়ে ‘খাল হত্যা’ সম্পন্ন
এখন খালের বুক জুড়ে কোথাও দোকানঘর, কোথাও বাসাবাড়ি। অনেক জায়গায় আবার ইচ্ছামতো মাটি ফেলে ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা স্থাপনা। কোথাও কালভার্ট করে জোর করে পানি চলাচল রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে পানি আটকে থাকায় তা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম উৎস। বিশেষ করে বর্ষাকালে সমস্যাটি চরম আকার ধারণ করে-একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং এলাকার তিনশত পরিবারের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়।
স্কুল কলেজ মসজিদে যাওয়া যেন এখন ‘এক কিলোমিটার দূরের হজ্ব’
খালপাড় ঘেঁষে গ্রামের একমাত্র জামে মসজিদে যাতায়াত করেন শত শত মুসল্লি। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে মাত্র ১০০ ফিট দূরত্বের পথ ঘুরে প্রায় ১ কিলোমিটার ঘুরে মসজিদে যেতে হয়। বয়স্ক, অসুস্থ এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য এটি যেন এক দুর্বিষহ চ্যালেঞ্জ।
মানববন্ধনে কণ্ঠে একটাই দাবি: “আমাদের খাল ফেরত চাই”
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির প্রতিবাদে আজ তারা রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। মানববন্ধন করে দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছে-
“এই খাল আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের শৈশব, আমাদের জলজ পরিবেশ। আমরা খালটি ফেরত চাই।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সেনবাগ উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ এই অবস্থার পরিদর্শনে এসে সরেজমিনে অবস্থা অবলোকন করেছেন জনবান্ধব নতুন প্রজন্মের তরুণরা। মো:কামরুজ্জান এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন-
“খালটি পুনরুদ্ধার করে অতীতের স্বচ্ছ প্রবাহ ফিরিয়ে আনাই এখন প্রাধান্য। জনগণের দুঃখ-দুর্দশার লাঘবে প্রয়োজনে সরকারের সর্বোচ্চ মহলে কথা বলব। সেনবাগের সামষ্টিক কল্যাণে যা দরকার, তাই করা হবে।”
খাল ফিরলেই ফিরবে স্বস্তি, ফিরবে সমাজের প্রাণ
একটি খাল কেবল পানি প্রবাহ নয়-এটি একটি গ্রামের শ্বাসপ্রশ্বাস। এখানে জল প্রবাহ বন্ধ মানে জনজীবন থমকে যাওয়া। অতএব, অবিলম্বে খালটি পুনঃউদ্ধার ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরি। কাবিলপুরের তিনশো পরিবার যেন এই ঈদের আগেই একটুখানি স্বস্তি পায়।
নবজাগরণ খাল রক্ষায় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও পরিবেশ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছে। কেননা, খাল রক্ষা মানেই ভবিষ্যতের গ্রাম রক্ষা।
আপনি যদি সেনবাগের কাবিলপুরের এই বাস্তবতাকে সমর্থন করেন, শেয়ার করুন প্রতিবেদনটি। আপনার একটি শেয়ার প্রশাসনের ঘুম ভাঙাতে পারে।