সংঘাত নয়, সংস্কারের পথে চলুন-এটাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক সিদ্ধান্ত

মো: আবু তাহের পাটোয়ারী :
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক এসেছে-অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘাতে না জড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক অস্থিরতার এই যুগসন্ধিক্ষণে এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি সাহসী মোড়।

দলীয় রাজনীতির চিরাচরিত ভাষা হলো-বিরোধিতা মানেই সংঘাত। কিন্তু ২০২৪ সালের “জুলাই চব্বিশ গণবিপ্লব” বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেই চিরায়ত কৌশলকে অকার্যকর করে দিয়েছে। জনগণ আজ সংঘাতে নয়, গঠনমূলক সংস্কারে বিশ্বাস করে। ঠিক এই মোক্ষম মুহূর্তেই যখন অনেক রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে ধ্বংসাত্মক পথে হাঁটছে, তখন দেশনেত্রীর এই আহ্বান একটি রাষ্ট্রনৈতিক পরিপক্বতার প্রকাশ।

প্রশ্ন উঠছে-কেন এই সিদ্ধান্ত সাহসী ও প্রগতিশীল?

১. কারণ এটা জনগণের পক্ষের সিদ্ধান্ত:
দীর্ঘ ৫৩ বছরের দুঃশাসনে জর্জরিত জনগণ আজ আর “কে ক্ষমতায় যাবে” সেই খেলায় নেই। তারা চায়-একটি কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র। তাই সংঘাত নয়, এই মুহূর্তে সংস্কার প্রক্রিয়াকে সময় দেয়া ও সমর্থন করাই জনরায়।

২. কারণ এটা রাজনৈতিক স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়:
এমন একটি সময়ে যখন রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনের সুযোগ এসেছে, তখন এই প্রক্রিয়াকে ধ্বংস না করে তার পাশে দাঁড়ানো একটি সুদূরপ্রসারী কৌশলগত সিদ্ধান্ত। এতে একদিকে যেমন রাজনৈতিক সহনশীলতার বার্তা যায়, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কাঠামোয় অংশীদারিত্বের পথও খোলা থাকে।

৩. কারণ এটি ভবিষ্যতের জন্য গণতন্ত্র পুনর্নির্মাণের ভিত্তি রচনা করে:
রাজনৈতিক সহিংসতা কখনোই জনগণের উপকারে আসেনি। জনগণের সঙ্গে মিশে তাদের মনোভাব বোঝা, ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কারে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া-এই কাজগুলোই এখন প্রয়োজন।

একটি বিপ্লবের পরের অধ্যায়

জুলাই বিপ্লবের মূল বার্তাই ছিল-“সংসদ নয়, জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস।” সেই বিপ্লব কোনো দলীয় পদযাত্রা ছিল না, ছিল নাগরিক প্রতিরোধের বিস্ফোরণ। সে বিদ্রোহ সরকারকে পাল্টেছে, তবে রাষ্ট্রকে এখনও পাল্টায়নি। তাই এখন প্রয়োজন জনগণের আস্থাভাজন একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে সংস্কারমূলক কাজ করতে দেয়া।

বেগম খালেদা জিয়ার এই নির্দেশ সেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞারই প্রকাশ, যেখানে ব্যক্তিগত প্রতিপক্ষ নয়-রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থকে বড় করে দেখা হচ্ছে। এই নৈতিক অবস্থান তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর হয়ে উঠতে পারে, যদি বিএনপি এই আহ্বানের আলোকে নিজেদেরকে গণমুখী দল হিসেবে গড়ে তোলে।

যদি এই আহ্বান ভেঙে ফেলা হয়…

অন্যদিকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো আবারও সংঘাত, ষড়যন্ত্র বা বৈদেশিক ইন্ধনে অন্ধ প্রতিরোধের পথে হাঁটে-তবে জনগণ আর আগের মতো চুপ থাকবে না। কারণ জনগণ আজ রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরে পেয়েছে, তারা জানে রাষ্ট্র কেমন হওয়া উচিত। তখন নতুন আরেকটি অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে উঠবে, এবং সে আন্দোলন আর কোনো দলনির্ভর হবে না-হবে জনগণনির্ভর, তীব্র ও দমন অযোগ্য।

জনপ্রত্যাশা আমাদের ভাবনা ও করণীয় :

রাজনীতির ইতিহাস যারা লেখেন, তাদের উচিত এখন কলমটা হাতে নেয়া-কারণ দেশের জন্য এই মুহূর্তটি একটি টার্নিং পয়েন্ট। সংঘাত নয়, বুদ্ধি ও নীতির পথে হাঁটার জন্য আজ ধন্যবাদ জানাতে হয় রাজনৈতিক আভিজাত্যপূর্ণ আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে।

এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবে প্রতিফলিত হয়, তবে তা শুধু তাঁর নয়-গণতন্ত্র ও জনগণের জয় হবে। আর যদি ভিন্ন পথে হাঁটা হয়, তবে ইতিহাস খুব নির্মমভাবে স্মরণ রাখবে-কে জনগণের সাথে ছিল, আর কে ছিল কেবল নিজের সিংহাসনের পেছনে।

বিঃদ্রঃ লেখক কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষক নন। এই লেখাটি জনগণের পক্ষ থেকে ইতিহাসের একটি স্পষ্ট নথি।

মো: আবু তাহের পাটোয়ারী-
লেখক ও সমাজ পর্যবেক্ষক।অনলাইনে পড়ুন-
www.thenabajagaran.com