ভান্ডারিয়া উপজেলা জেপি’র শীর্ষ ১০ নেতার একযোগে পদত্যাগ, তবে কি স্বার্থ ফুরিয়ে গেছে

বিশেয প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টি (জেপি)’র ১০ শীর্ষ নেতা একযোগে পদত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ০৫ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে জেপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভান্ডারিয়া উপজেলা কমিটির সভাপতি মনিরুল হক জোমদ্দারের নিকট তারা এ পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগকৃতরা হলেন ভান্ডারিয়া উপজেলা জেপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার জোমদ্দার, সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জ্বল তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম খোকন শিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান দুলাল মল্লিক, মিজানুর রহমান সেন্টু মোল্লা, পৌর জেপি’র সদস্য সচিব আহসানুল কিবরিয়া ফরিদ মল্লিক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক মনির সরদার, উপজেলা যুব সংহতির আহ্বায়ক রেজাউল হক রেজভী, উপজেলা জেপি’র কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আমির হোসেন মল্লিক, ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টি নেতা মনির তালুকদার। পদত্যাগকৃতদের সূত্রে জানা গেছে তারা ব্যাক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন।

এ পদত্যাগ নিয়ে জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এক কথায় মন্তব্য করেছেন, ” তারা ভাগ্য গড়ার সংগ্রামে মরিচীকার পিছনে ছুটবে”…। তার মন্তব্যে পদত্যাগকৃত নেতাদের বিষয়ে ঘৃণার ভাব প্রকাশ পেয়েছে। অতীত বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর ০২ আসনে ৩৮ বছর এম পি ও ১৮ বছর বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভান্ডারিয়া উপজেলায় নিজের বাড়ি হওয়ায় এখানে ব্যাপক উন্নয়ন করেন তিনি। ঐ উপজেলার নেতাকর্মীরা উন্নয়ন কাজ ভাগাভাগি করে নিয়ে নিজেরা অর্থ নৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছে। অনেকে জেপি’র পরিচয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বদৌলতে জেপি’র সমর্থন নিয়ে। অনেকে হঠাৎ বড়লোকও হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের নামের প্রথমে হঠাৎ ওমুক হঠাৎ তমুক বিশেষনও যুক্ত আছে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনাব মঞ্জু এই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নি। এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা ও ভবিষ্যত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার জন্য মঞ্জু নির্ভর নেতাকর্মীরা রয়েছে হতাশায়। কারণ তারা কেউই ব্যাক্তিগতভাবে নিজেদের অবস্থা এবং অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। এ বিষয়ে ভান্ডারিয়া এলাকার সাধারণ জনগন মন্তব্য করেন, যারা এত বছর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র পকেটের উপর নির্ভর করে চলেছে তারা এখন হতাশায় দলত্যাগ করছে। তারা এখন পথ খুঁজছে কোন দলে যোগদান করলে বিনা পরিশ্রমে পকেট ভারী করা যায়। এলাকার সুশীল সমাজের কেউ কেউ বলেছেন, যদি দেশে সামরিক শাসন আসে তাহলে অনেকেরই জেলের ঘানি টানতে হবে। তাই পিঠ বাঁচানোর জন্য তারা এখন নিরপেক্ষ সাজার চেষ্টা করছে।

এদিকে দলে থাকা একাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগকৃত নেতৃবৃন্দের বিষয়ে বলেন, দেশে এখন নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিতে নেতাকর্মীর আকাল চলছে। ওখানে নগদ টাকার গন্ধও রয়েছে। ঐ লোভী ব্যাক্তিরা হয়তোবা কিংস পার্টি খ্যাত এনসিপির টোপ গিলেছে। উপজেলা কমিটিতে বর্তমান থাকা এক নেতা বলেন, ক্ষমতালোভী পদত্যাগী ঐ সব নেতারা ধরে নিয়েছেন যে, আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করবে। তাই বিএনপি দলের সাথে যুক্ত হওয়ার ধান্দায় আছে তারা।

ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেপি’র এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, পদত্যাগী নেতাদের জেপি থেকে যে স্বার্থ আদায় করার ছিল সে টার্গেট পূর্ণ হয়েছে। এখন তারা অন্য কোনো দল থেকে সুযোগ সন্ধান করছে। একসাথে ১০ নেতার পদত্যাগে জেপির ভান্ডারিয়া উপজেলা রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পরবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে ঐ নেতা বলেন, তারা দলের ভিতর অবস্থান করে দলের ক্ষতি করতেছিল। তারা এলাকার রাজনীতিকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। তাদের কারণে জেপিতে অসন্তোষ ছিল। তারা চলে যাওয়ায় দলের জন্য ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন স্বতস্ফুর্তভাবে রাজনীতি করতে পারবে।