লেখক: অজ্ঞাতনামা, তবে বংশপরিচয় ঐতিহাসিক
সম্মানিত দেশবাসী ও প্রিয় সরকার,
অশেষ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে এই চিঠির সূচনা করছি। বংশানুক্রমে প্রাপ্ত আমাদের এই মহান ঐতিহ্য-সিঁদ কাটা-আজ অবজ্ঞার পাত্র হয়ে পড়েছে। অথচ এই পেশাই তো একসময় ছিল সাহস, ধৈর্য, অধ্যবসায় ও রাত্রিকালীন শ্রমের অনন্য প্রতীক। সেই সিঁদ কাটার নিপুণতা এখন রূপ নিয়েছে বৈচিত্র্যে-আমরা আর শুধুমাত্র বাঁশের কঞ্চি হাতে রাতের অন্ধকারে কাজ করি না, এখন আমরা প্রযুক্তিবান, আধুনিক, কৌশলী!
আমাদের বংশধরেরা আজকের দিনে কেউ কাজ করে “তুলা বিভাগে”-উত্তোলনই যাদের পেশা! কেউবা “চাঁদা তোলা ও বখরা বণ্টন শাখা”তে। কেউ রাজনীতি করে আমাদের পেশার জন্য আইন ঠেকায়। কেউ গায়ে তেল মাখিয়ে অপরের মাংসপেশি ব্যবহার করে “বডিগার্ডিং” সেক্টরে ঢুকে গেছে।
তবে সবচেয়ে গর্বের জায়গা হলো, আমাদের উচ্চশিক্ষিত উত্তরসুরিরা আজ কলার তুলে টাই পরে সচিবালয়ের চেয়ারে বসে আমাদের ঐতিহ্যিক চুরি পেশাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। তাদের হাতেই রেলওয়ে, পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিস, বিদেশি ভিসা, এমনকি স্বাস্থ্য খাতও নিরাপদ! কোনো দল নেই যেখানে আমাদের প্রতিনিধি নাই। সরকার বদলায়, আমরাই থাকি!
আপনারা যাদের “সংস্কার” বলেন, আমরা বলি “নতুন রূপদান।”পাপ
আপনারা যেটাকে আইন বলেন, আমরা বলি “আমাদের দক্ষতা ও ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে বাধা!”
আমাদের চাচাতো ভাইয়েরা এখন “স্মার্ট চোর”-পকেট কাটে না, কিন্তু অ্যাপে ঢুকে অ্যাকাউন্ট খালি করে। মলমপাটি এখন আর গলির মোড়ে না-ফেসবুকে লিঙ্ক পাঠিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। ডাকাতি এখন হয় ক্লিকেই। সময়ের সাথে বদলেছি আমরা, কিন্তু চুরি তো চিরায়ত শিল্প!
আর হ্যাঁ, যখনই আমাদের কেউ ধরা পড়ে, তখনই একতাবদ্ধ হই। মানববন্ধন করি, মিছিল করি। মিডিয়ার ভাষায় “অসুস্থ হয়ে পড়ি।” কিছু হলে বলি, “ষড়যন্ত্র”! এত সহজে কি ঐতিহ্য নষ্ট হয়?
আপনারা আমাদের নিয়ে লজ্জা পান? কী হাস্যকর! আমরাই তো জাতির প্রতিচ্ছবি-একটু অন্ধকার, একটু কৌশলী, আর সম্পূর্ণ অভ্যস্ত “ব্যবস্থা বুঝে চলায়।”
সবশেষে বলছি আমাদের বংশের করণীয় কাজ:
আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো। যেভাবেই হোক, সিঁদকাটা বা ল্যাপটপকাটা রূপে, ম্যানুয়াল চোর হই কিংবা ডিজিটাল, বংশ পরম্পরায় জাতিগতভাবে ঐতিহ্য রক্ষা করবোই। ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে দেওয়া পাপ-আর আমরাই সেই পুণ্যবান যারা তিলে তিলে চুরিকে শিল্প বানিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অফিসে আদালতে।
ইতি,
এক গর্বিত সিঁদকাটা চোর বংশধর
(বর্তমানে সম্মানিত কনসালটেন্ট, অফশোর ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট)
গ্রন্থনা:মো: আবু তাহের পাটোয়ারী।