আধিপত্য বিস্তারের নেশায় সারেংকাঠী ইউনিয়নে চলছে রামরাজত্ব, বিএনপির শেল্টারে মহারাজের দোসর এবং গনহত্যা মামলার আসামি এখন প্রকাশ্যে

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সারেংকাঠী ইউনিয়নে প্রকাশ্যে চলছে তান্ডব। ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতার প্রকাশ্য মদদে মাফিয়া সম্রাট মহারাজের দোসর, গনহত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী ও বিএনপি নামধারী এলাকার এবং বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী দিনে এবং রাতে এ তান্ডবে অংশ নিচ্ছ বলে ভুক্তভোগী এবং এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। একের পর এক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা লুটপাট, রাতের বেলা অপহরণের উদ্দেশ্যে বসত ঘরে তল্লাসির চেষ্টা ও মোটরসাইকেল মহড়ার মাধ্যমে এলাকার জনসাধারণের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করছে এ দলটি। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। গণমাধ্যমে কথা বলার ক্ষেত্রেও তারা পরিচয় গোপন রেখে কথা বলছেন। আমরা তথ্য দাতা ও মন্তব্য প্রদানকারীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের পরিচয় গোপন রেখেই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করছি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এলাকার এক বয়োজ্যেষ্ঠ লোক জানান, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ এলাকায় যে অপকর্ম করেছে অল্প কদিনে তার বেশি অপকর্ম করেছে বিএনপি নামধারীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার এক প্রবীন বিএনপি সমর্থক বলেন, এ অল্পদিনে অপরিপক্ক বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যে বদনাম কুড়িয়েছে তাতে নিজেকে বিএনপির লোক পরিচয় দিতেও লজ্জা হয়। ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, যারা বিগত সংসদ নির্বাচনে রামদা উচিয়ে মাফিয়া সম্রাট মহারাজের পক্ষে মহড়া দিয়েছে তারাও আজ বিএনপির এক ইউনিয়ন নেতার সাথে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সারেংকাঠী যুবদলের এক নেতা বলেন, নেছারাবাদ থানার এজাহার ভুক্ত দুটি মামলা এবং ঢাকায় গনহত্যা সংক্রান্ত তিনটি মামলার আসামী এখন উক্ত ইউনিয়ন বিএনপি নেতার সহচর। তিনি আরো বলেন, ঐ সন্ত্রাসী গনহত্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে গত বছর ০৭ ই নভেম্বর জাতীয় সংহতি দিবস উপলক্ষে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল বেরুনী সৈকতের সাথে ছবি জুড়ে দিয়ে ফেইসবুক পোস্ট করে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব লিখিত প্রতিবাদে জানিয়ে দেন ঐ সন্ত্রাসী আমাদের দলের কেউ নয়। এর পর থেকে সে সারেংকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিবের একান্ত সহচরে পরিনত হয়। তিনি আরো জানান উক্ত গনহত্যা মামলার আসামী ০৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে সারেংকাঠী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আত্মগোপনে থাকা সমীর হালদারের সহচর ছিল।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে গত ২৬ জুন সন্ধার পর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে করফাহাটের পূর্ব পাড়ে আব্দুল আলিমের দোকানে বিএনপি নামধারী একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে, নগদ টাকা ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত লুটপাট কারীরা পাশের এলাকা বিষ্ণুকাঠী, উত্তর করফা, আলকীরহাট ও সোহাদল গ্রাম থেকে আগত। লুটপাট কারীরা তান্ডব চালিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেয়। এ সময় ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে এলাকাবাসী তার নিকট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হামলা ও লুটপাট কারীরা সকলে আপনার অনুসারী। ইহাতে আসাদ প্রতিবাদকারী জনতার উপর ক্ষিপ্ত হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে আাসাদের অনুসারীরা পুনঃরায় আব্দুল আলিম ও পুত্রদের উপর হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ তকমা লাগিয়ে মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। পিতা পুত্র এলাকাবাসীর সহায়তায় দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা থানায় মামলা দায়ের করতেও সাহস পায়নি। ঐ হামলা এবং লুটপাটে ব্যাবসায়ীর লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর উক্ত আলিম ও তার পুত্ররা পুনরায় দোকান চালু করে বেচা বিক্রি শুরু করে। ঈদুল আজহার দুদিন পর ১০ জুন খালের ওপারে করফা বাজারের মধ্যে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহিরাগতদের সাথে স্হানীয়দের মারামারির ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষ দর্শী সূত্রে জানা যায়। এর কিছুক্ষন পর বহিরাগতরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালের পূর্বপারে এসে আঃ আলিমের দোকানসহ পাশের আরো দুটি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এলাকাবাসী জড়ো হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা স্থান ত্যাগ করে।

পরদিন ১১ জুন ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ এর নেতৃত্বে বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী ও বহিরাগতদের নিয়ে সারেংকাঠী ইউনিয়নের সর্বত্র একটি মোটরসাইকেল মহড়া দেয়। প্রায় অর্ধশত মোটরসাইকেল মহড়ার মুল শ্লোগান ছিল আসাদ ভাই এর একশন ডাইরেক্ট একশন। ঐ মহড়ায় কার বিরুদ্ধে একশনের কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এলাকায় আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। মোটরসাইকেল মহড়া দেখে এলাকাবাসী এখন নিশ্চিত যে, আসাদের নেতৃত্বেই করফা বাজারে দুই বার হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ইউনিয়নের উত্তর করফা গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের পুত্র চা দোকানী আবুল কালাম জানান, করফা বাজারের মারামারি, দোকান ভাংচুর ও লুটপাট এবং বহিরাগতদের নিয়ে মোটরসাইকেল মহড়ার বিষয় নিয়ে তার দোকানে আলোচনা হয়। ইহাতে আসাদ ক্ষিপ্ত হয়ে মুঠোফোনে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। ভয়ে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তিনি আরো জানান গতকাল দিবাগত রাত ৯. ০০ টায় বহিরাগত এবং স্হানীয় একদল সন্ত্রাসী মোটরসাইকেল নিয়ে তাকে খুজতে আসে। তাকে ঘরে না পেয়ে তার স্ত্রী এবং মেয়েকে গালাগালি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে লোকজন জড়ো হতে থাকলে সন্ত্রাসীরা স্থানত্যাগ করে।

সারেংকাঠীর এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে আগামী ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ত্রী- বিভক্ত বিএনপির বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ইতিমধ্যে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার জন্য নিজ অবস্থান তৈরিতে মাঠে জানান দিচ্ছে। ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব আসাদুজ্জামানও তাদের মধ্যে একজন। সুশীল সমাজের ধারণা আসাদের শক্তিমত্তা জানান দিতেই হামলা, মারামারি ও মোটরসাইকেল মহড়া।
( আসাদ ও তার পরিচয় জানতে আমাদের সাথে থাকুন।