মো: আবু তাহের পাটোয়ারী :
ইজরায়েলি হামলায় আইআরজিসি চিফ-অফ-স্টাফ জেনারেল হোসেন সালামি, জেনারেল গোলাম-আলি রশিদ এবং পরমাণু বিজ্ঞানী ড. তেহরানচি এবং ড. ফেরেদুন আব্বাসীর শাহাদত ঘোষণা করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এত দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ইরান কেন বাগাড়ম্বর করে আসছিল বুঝতে পারছি না।
একাধিক ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলের গত রাতের হামলায় ইরানের ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (IRGC) কামন্ডার ইন চিফ জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন।
আজ ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশসীমা কেঁপে উঠেছে ইসরায়েলি সন্ত্রাসী বাহিনীর একাধিক মিসাইল ও ড্রোন হামলাতে।
বিশেষত, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড (IRGC)-এর সদর দপ্তরে সরাসরি হা’ম’লা চালানো হয়েছে-যা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব পরবর্তী ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।
তার চেয়েও গভীর উদ্বেগের বিষয় হলো-মধ্য ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটেছে। নাতাঞ্জ হলো ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
কারা এই হা’মলার পেছনে?
এখনও পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি, তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা একবাক্যে একে “ইসরায়েলি প্রি-এম্পটিভ অ্যাটাক” হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় চলমান গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক বিচারে অভিযুক্ত হওয়ার আগেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে দিয়ে ইসরায়েল চেষ্টা করছে নিজের অবস্থান মজবুত করতে।
কিভাবে সংঘটিত হলো এই হা’ম’লা?
হাই-অল্টিচিউড জিরো-ডিটেকশন ড্রোন ব্যবহার করে তেহরান শহরের নির্দিষ্ট টার্গেটে নির্ভুল হা’ম’লা চালানো হয়েছে।
একই সময়ে সাইবার হামলার মাধ্যমে ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অকার্যকর করে ফেলা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় রাত ৩টার পরপরই ইরানজুড়ে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা গেছে।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন:
“আমাদের ভূমি, আকাশ ও সম্মান রক্ষায় প্রতিশোধ আসবেই। আমরা রক্তের হিসাব রক্তেই নেব।”
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই জাতীয় টেলিভিশনে ভাষণে বলেন:
“এটি কেবল ইরানের উপর নয়-এটি গোটা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।”
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া ও চীন এই হা’ম’লার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে এবং একে “সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বর্বরতা” আখ্যা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত কোনো সরাসরি বিবৃতি দেয়নি। তবে হোয়াইট হাউস সূত্রমতে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি “নিরপেক্ষ বিবৃতি” প্রস্তুত করছেন।
আমাদের প্রশ্ন:
১. জাতিসংঘ কি এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলবে?
২. মুসলিম বিশ্বের শাসকরা আর কতকাল চুপ থাকবে?
৩. আজ যদি তেহরান জ্বলে, কাল মক্কা-মদিনা কি নিরাপদ থাকবে?
এখন সময়-ঘুম ভাঙানোর!
গাজা, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া ও এখন ইরান-এই আগুন একদিন ছড়িয়ে পড়বে আমাদের ঘরেও।
এই মুহূর্তে দরকার একটি ঐক্যবদ্ধ মুসলিম প্রতিরোধ ফ্রন্ট, দরকার সত্য ভাষণের সাহস, দরকার মিডিয়ার বিপ্লব!