লন্ডনে ইতিহাসের হাত মিলন : ড. ইউনূস ও তারেক রহমান কি তবে নতুন রাষ্ট্রের নির্মাতা?

নবজাগরণ প্রতিবেদন-মো: আবু তাহের পাটোয়ারী : লন্ডন-ঢাকা, ২০২৫
ইতিহাস ঘুরে দাঁড়ায় তখনই, যখন যুগের দুই প্রান্ত এসে মুখোমুখি দাঁড়ায়। ২০২৫ সালের জুনে লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের ছায়ায়, যেখান থেকে একদিন বাঙালি অভিবাসীরা বর্ণবাদ আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল, ঠিক সেখানেই এবার মিলিত হলেন বাংলাদেশের দুই প্রতীক-অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এই বৈঠক শুধুই দুই ব্যক্তির সাক্ষাৎ নয়-এ এক সম্ভাব্য বিপ্লবের বীজরোপ। শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে যখন ছাত্র-জনতা, যুবক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি জেগে উঠছে, ঠিক তখনই বিদেশের মাটিতে এই দুটি শক্তি-একজন নোবেল বিজয়ী অর্থনৈতিক নায়ক, অন্যজন রাজনৈতিক সংগ্রামের উত্তরাধিকারী-মিলে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনার ঘোষণা দিলেন।

কেন এই বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ?
ড. ইউনূস আজ শুধু একজন নোবেলজয়ী নন, তিনি একটি নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার প্রতীক। যে বাংলাদেশকে দলীয় দুঃশাসন, দখলদারি বিচারব্যবস্থা ও একনায়কতান্ত্রিক প্রশাসন গ্রাস করেছে, সেখানে রাষ্ট্রের নতুন কাঠামো, নতুন সংবিধান ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের স্বপ্ন দেখা মানুষ আজ তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।

অন্যদিকে, তারেক রহমান-যিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক নির্বাসনে থেকেও আন্দোলনের ছায়াশক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন-তাঁর ভূমিকা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে কাঁপতে থাকা একটি রাষ্ট্রের কাছে তারেক রহমান সেই উত্তরাধিকারী, যিনি ‘সিভিল মিলিটারি ট্রানজিশন’-এর যুগে জনগণের সমর্থন নিয়ে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।

রাষ্ট্র পুনর্গঠনের নীলনকশা?
এই বৈঠকে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে, তার বিস্তারিত জানা না গেলেও কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্র বলছে, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কাঠামো” ও “একটি নির্দলীয়, আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষিত অন্তর্বর্তী সরকার” গঠনের প্রাথমিক ধারণা বিনিময় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ড. ইউনূস এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন-যেখানে তারেক রহমান রাজনৈতিক ভারসাম্য নিশ্চিত করবেন।

এই যুগল নেতৃত্ব বাংলাদেশকে কি দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যান্ডেলা-মবেকি মডেলে নিয়ে যেতে চায়? যেখানে একজন শান্তিকামী ন্যায়ের প্রতীক আরেকজন রাজনৈতিক কৌশলের বাস্তবায়ক হন?

শেখ হাসিনার পতনের প্রাক-মঞ্চ?
এই ঐতিহাসিক বৈঠক এমন এক সময়েই হলো, যখন বাংলাদেশের জনগণ বিদ্যুৎ সংকট, দ্রব্যমূল্যের জ্বালা, বিচারহীনতার ক্ষোভ ও প্রশাসনিক ব্যর্থতায় অতিষ্ঠ। রাষ্ট্রযন্ত্র যখন চরম দুর্নীতির ভারে নুয়ে পড়েছে, তখন এই নতুন জোট-নব্য গণঐক্য বা ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জোট’-জনতার মনে আশার আলো জ্বালাতে পারে।

এখন কী করণীয়?
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণের উচিত শক্তিশালী নাগরিক মঞ্চ গড়ে তোলা, যাতে করে এ ধরনের নেতৃত্বকে জনগণের দাবির সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। ভবিষ্যতের রাষ্ট্র গঠনে সংবিধান পুনর্লিখন, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং এক সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের দাবিতে একটি বিপ্লবী গণচেতনার সৃষ্টি করতে হবে।

জনপ্রত্যাশার দেশগড়তে আমাদের কথা:এই লন্ডনের সাক্ষাৎকার হতে পারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের মোড় ঘোরানোর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। সময়ের দায়ে যদি এই দুই নেতা সত্যিকার অর্থেই জনগণের দিকেই থাকেন, তবে ভবিষ্যৎ ইতিহাস তাদেরকে ‘নতুন বাংলাদেশের স্থপতি’ হিসেবেই স্মরণ করবে।