ইরানের পাল্টা আঘাত: তেল আবিব-কেন্দ্রিক যুদ্ধের নতুন অধ্যায়

নবজাগরণ ডেস্ক :জুন ১৪, ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্য আবারও অগ্নিগর্ভ। আন্তর্জাতিক কূটনীতির সব কল্পনা ও কৌশলকে ছাপিয়ে, বাস্তবতা এখন রণাঙ্গনের অনিবার্যতায়। গত কয়েকদিনের উত্তেজনার পর অবশেষে ইরান সরাসরি পাল্টা আঘাতে নামল-সাবমেরিন ও ভূমি থেকে ছোড়া মিসাইলে ইসরায়েলের সামরিক ও প্রতীকী স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করল। হামলার মুখ্য লক্ষ্য ছিল তেল আবিব ও জেরুজালেম-যা শুধুমাত্র ভৌগোলিক নয়, রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবেও ইসরায়েলের অস্তিত্বের কেন্দ্রবিন্দু।

কীভাবে হামলা হলো?
সুনির্দিষ্ট সময়ে, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের ‘নওহা’ শ্রেণির সাবমেরিন থেকে ভূমধ্যসাগরে মোতায়েনকৃত অবস্থান থেকে ট্যাকটিক্যাল ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। একইসাথে দেশটির পশ্চিমাঞ্চল ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ছোঁড়া হয় বালিস্টিক মিসাইল। এই হামলার লক্ষ্য ছিল তেল আবিবের সামরিক ঘাঁটি, আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার, এবং জেরুজালেমের কৌশলগত সরকারি স্থাপনা।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বেশ কিছু মিসাইল আকাশেই প্রতিহত করেছে তাদের Iron Dome ও David’s Sling আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। কিন্তু ইরানের দাবি-তাদের অন্তত ৪টি মিসাইল লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে একটি তেল আবিবের নিকটবর্তী সামরিক যোগাযোগ কেন্দ্র ধ্বংস করেছে।

এই আঘাতের প্রেক্ষাপট
এই হামলা কোনো আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন প্রতিক্রিয়া নয়। বরং এটি একটি ধারাবাহিক প্রতিশোধ পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। গত সপ্তাহে দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন ইরানের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি। ওই হত্যাকাণ্ডকে ইরান সরাসরি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ বলে ঘোষণা করে এবং চূড়ান্ত প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এবার সেই প্রতিশোধের সূচনা ঘটল, তাও সামুদ্রিক সাবমেরিন থেকে।

ইরানের ঘোষণা: “এই শুরু মাত্র”

ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে-এই হামলা এককালীন প্রতিক্রিয়া নয়। বরং এটি “ধাপে ধাপে শত্রুর সামরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ভীতিকে চূর্ণ করার কৌশলের” অংশ। রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন,

“প্রত্যেক ইরানির রক্তের প্রতিশোধ নেয়া হবে। আমাদের মিসাইল এখন শুধু আকাশে নয়, সময়ের বুকে লেখা প্রতিজ্ঞা।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে, তবে ইসরায়েল এ পর্যন্ত ইরানের প্রতিশোধের ব্যাপারে সরাসরি শান্তির ভাষা ব্যবহার করেনি। বরং তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যাপক পাল্টা অভিযানের। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে রেখেছে তেহরান ও ইসফাহান অঞ্চলে।

জাতিসংঘ মহাসচিব এই উত্তেজনা প্রশমনের জন্য উভয়পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানালেও বাস্তবতা হলো-এ লড়াই শুধু মিসাইল বা ড্রোনের নয়, এটি এক মানসিক, কৌশলগত ও অস্তিত্বগত দ্বন্দ্ব, যার মীমাংসা এখনো অনেক দূরে।

এক নতুন যুদ্ধযুগের সূচনা?
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন আর ছায়াযুদ্ধ নয়। এটি খোলামেলা, পরিণত, কৌশলী ও নিয়ন্ত্রিত চূড়ান্ত শক্তির সংঘাত। ‘ধাপে ধাপে প্রতিশোধ’ নেওয়ার যে কৌশল ইরান নিয়েছে, তা হয়তো এক নতুন ধরনের যুদ্ধনীতির সূচনা।
বিশ্ববাসী এখন অপেক্ষায়-এই আগুন থেমে যাবে, না আরও বড় বিস্ফোরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য?