নবজাগরণ ডেস্ক:
সম্প্রতি ইরানে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে-একযোগে ৭৩ জন গুপ্তচরকে গ্রেফতার করেছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। তাদের অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক, যারা অভিযোগ অনুযায়ী ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করছিলেন। তাদের মূল দায়িত্ব ছিল: ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সামরিক মোতায়েন, রেভল্যুশনারি গার্ড, পারমাণবিক গবেষণা এবং কূটনৈতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং পাচার।
তবে এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ইরানের একটি ‘অভ্যন্তরীণ ভুল সিদ্ধান্ত’-চাবাহার বন্দরের “শহীদ বেহেশতি” টার্মিনাল ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা IPGL-এর হাতে তুলে দেওয়া।
চাবাহার বন্দরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব
চাবাহার বন্দর শুধু ইরানের অর্থনীতির জন্য নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার জন্য একটি কৌশলগত লাইফলাইন। চীন-রাশিয়ার যৌথ নৌপথ এড়িয়ে এই বন্দর ব্যবহার করে আফগানিস্তান হয়ে সেন্ট্রাল এশিয়া পর্যন্ত পণ্য পাঠানো সম্ভব। কিন্তু এই বন্দর যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে, বিশেষ করে মোদি-শাসিত বিজেপি ভারত সরকারের, যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের কৌশলগত সামরিক ও গোয়েন্দা সম্পর্ক রয়েছে-তবে তা বিপজ্জনক পরিণতির দিকে গড়াতেই পারে।
ভারতের ভূমিকায় সন্দেহের ছায়া
ভারত দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তারা চাবাহার ব্যবহার করছে শুধুই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যদি তাই হয়, তাহলে কেন চাবাহারে মোতায়েনকৃত ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে এতজন গুপ্তচরবৃত্তিতে যুক্ত?
ইরান যে এই বন্দরে ভারতের নিয়ন্ত্রণ ‘সীমিত’ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল, তা ভারতের একপাক্ষিক তৎপরতায় কার্যত প্রয়োগ হয়নি।
গোপন সংযোগ: মোসাদ-র’–মিলিত নেটওয়ার্ক?
ভারতের Research and Analysis Wing (RAW) এবং ইসরায়েলের Mossad অনেকদিন ধরেই যৌথভাবে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছে। বিশেষ করে ইরান, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনের বিরুদ্ধে তাদের গোয়েন্দা ও সাইবার জোট শক্তিশালী হয়েছে। ইরানে আটক ভারতীয়দের একটি অংশ মোবাইল টাওয়ারে ট্রান্সমিটার বসানো, উপগ্রহ নেটওয়ার্কে নজরদারি, এবং পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রগুলোর নিকটবর্তী এলাকায় ‘সাধারণ কর্মী’ হিসেবে মোতায়েন ছিল।
ইরানের জন্য শিক্ষা
ইরানের বিপ্লবী আদর্শ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এই ধাক্কাটি গুরুতর সতর্কবার্তা। এমন একটি দেশ, যার সাথে ইসরায়েল গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ ও সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, এবং যে দেশ দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীর, গাজা ও মুসলিম নির্যাতনে নিরব থেকেছে-তার হাতে কৌশলগত বন্দর তুলে দেওয়া নৈতিক, নিরাপত্তাগত ও রাজনৈতিক-তিন মাত্রায়ই এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
বিকল্প পথ কী?
চাবাহার বন্দরের পরিচালনা এখনই ইরানের নিজস্ব নিরাপত্তা ও সামরিক কাঠামোর আওতায় ফিরিয়ে আনা জরুরি। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীন, রাশিয়া বা এমনকি মালয়েশিয়ার মত নিরপেক্ষ শক্তি-যাদের ইসরায়েলের সাথে বৈরিতা বিদ্যমান-তাদের সমন্বয়ে এক নতুন মডেল গড়ে তোলা প্রয়োজন।
নির্বিশেষে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প প্রত্যাশা নেই
ইরানের বিপ্লবী সরকার যদি সত্যিই ইসরায়েলের আগ্রাসন ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চায়, তবে নিজেদের ভেতরে বসানো গুপ্তঘাতকদের চিহ্নিত করে নির্মূল করাই শুধু নয়-যে গেট খুলে তাদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছিল, সেই চাবাহার চুক্তিকেই নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা যায়, কিন্তু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সাথে আপোষ চলতে পারে না। “ভুল থেকে শিক্ষা না নিলে, আগামীর বিপদ হবে আরও ভয়াবহ।”